ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয় বেড়েছে সাড়ে চার শ’ কোটি টাকা

উদ্বোধনের অপেক্ষায় মগবাজার উড়াল সড়ক

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

উদ্বোধনের অপেক্ষায় মগবাজার উড়াল সড়ক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মগবাজার উড়াল সড়কের কাজ একেবারেই শেষের পথে। চলতি মাসেই এর নির্মাণ কাজ শেষ করে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সময় দেয়ার ওপর নির্ভর করছে এটি কবে খুলে দেয়া হবে। ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৯ কিলোমিটার লম্বা ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালের মার্চে সাতরাস্তা থেকে শুরু হয়ে হলি ফ্যামিলির মোড় পর্যন্ত অংশটি খুলে দেয়া হয়। পরে দুই ধাপে বাংলামোটর থেকে মৌচাক পর্যন্ত সড়কের একদিকে এবং এফডিসি মোড় থেকে কাওরানবাজারের অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। তবে এর পরও উড়াল সড়কের বড় অংশের কাজই চলতে থাকে। প্রথম ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৪ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। কিন্তু সময় বাড়ানো হয় কয়েক দফা। শেষবার যখন সময় বাড়ানো হয় তখন বলা হয়েছিল পুরো কাজ শেষ করে জুলাইয়ে উদ্বোধনের। কিন্তু সেই কাজ শেষ করতে করতে আগস্ট পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। আর এই বিলম্বের জন্য অতিবৃষ্টিকে দায়ী করছেন প্রকল্প পরিচালক। তবে আশার কথা হলো, অবশেষে শেষ হয়েছে নির্মাণ কাজ। এখন চলছে রঙের কাজ। কোথাও কোথাও ঝাড়ু দেয়া হচ্ছে। চলছে ড্রিল মেশিন দিয়ে ছিদ্র করে বিদ্যুতের পিলার লাগানোর কাজ। উড়াল সড়কে গিয়ে দেখা গেল কয়েক রঙমিস্ত্রি ব্রাশ দিয়ে রঙের আঁচড় দিচ্ছেন। কথা হয় রঙমিস্ত্রি মেহেদী হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, রোজার ঈদের পর থেকে রং করা শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে এখনও মাসখানেক লাগবে। উড়াল সড়কের দুপাশের দেয়ালে সাদা রং এবং লোহার পাইপে লাল রং করা হচ্ছে। পাশেই কাজ করছিলেন ইলেট্রিক মিস্ত্রি শ্যামল পাল। তিনি বলেন, এখন আমরা বিদ্যুত সংযোগের কাজ করছি। পিলার বসাচ্ছি। ঈদের আগেই সব কাজ ওকে হয়ে যাবে। সর্বোচ্চ একমাস লাগতে পারে। উড়াল সড়ক পরিষ্কারে ব্যস্ত ছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী জহুরা বেগম। তিনি বলেন, আমরা দেড়মাস ধইরে রাস্তা পরিষ্কার করছি, তয় কতদিন লাবে কইবার পারতাম না। আমরা ৫০ জন কাম করতাছি। ফ্লাইওভারের ময়লা খুটিয়ে খুটিয়ে তুলতাছি, ঝাড়ু দিতাছি। দেখা গেল তাদের কেউ কেউ কোদাল দিয়ে ময়লা অন্য জায়গায় নিতে ব্যস্ত। কেউ শাবল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ময়লা তুলছেন। পাশেই রাজমিস্ত্রি রবিউল ইসলাম কথার পিঠে কথা তুলে বলেন, কাজ তো প্রায় শেষ। আর বেশিদিন লাগবে না। আমরা এখন জয়েন্টে জয়েন্টে জোড়া লাগানোর কাজ করছি। কেউ করছিলেন ঝালাইয়ের কাজ। কেউ কেউ আবার রড কাটছিলেন। পিচ ঢালাইয়ের কাজও চলছে সমানতালে। উড়াল সড়কের ওপর রঙের কৌটার স্তূপ। কোথাও ময়লার স্তূপ। আবার কোথাও কোথাও তাবু টানিয়ে ইলেক্ট্রিকের সামগ্রী রাখা হয়েছে। কথা হয় উড়াল সড়কের সুপারভাইজার আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন ফিনিশিয়ের কাজ চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে সব কাজ। এখন মূলত ক্যাস বেরিয়ার, এক্সপানসং জয়েন্ট। পাইপ লাইন, ল্যাম্পপোস্টের কাজ চলছে। ফ্লাইওভারটির প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল বলেন, এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করবেন। তবে কবে এটি উদ্বোধন করা হবে সে বিষয়ে এখনও দিন-তারিখ ঠিক হয়নি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সময়ের দিকে চেয়ে আছি। দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তির সমাধানে রাজধানীতে ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যেগ নেয়া হয়। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভারও নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয় গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার। এটির দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার। এরপরই মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার। ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেক এই প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রথমে প্রকল্পের আকার ছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারিতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে এক হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা করা হয়। ধাপে ধাপে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়। ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৯ কিলোমিটার লম্বা ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এই ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ঢাকা শহরের স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানের (এসটিপি) অন্তর্ভুক্ত। ফ্লাইওভারটি রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। প্রতিটি পিলার পাইলের গভীরতা প্রায় ৪০ মিটার গভীর। ফ্লাইওভারটি আটটি মোড় যথাক্রমে- সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া ও রমনা থানা। ফ্লাইওভারটি মগবাজার, মালিবাগ ও সোনারগাঁসহ তিনটি রেলক্রসিং অতিক্রম করেছে। চার লেনের এ ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্প রয়েছে। তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, বাংলামোটর, মগবাজার, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং শান্তিনগর মোড়ে ওঠানামা করার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনটি উৎস থেকে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়েছে, এর মধ্যে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি)।
×