ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে হলদে ও সাদা চোখ পাখি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হারিয়ে যাচ্ছে হলদে ও সাদা চোখ পাখি

আমাদের গ্রামগঞ্জের অতি চেনা হলদে পাখি বউ কথা কও। আকর্ষণীয় রঙের এই পাখিটি শুধু বর্ণালি পালকের জন্যই নয়, বরং সুরেলা কণ্ঠের জন্যও সবার নজর কাড়ে। এই পাখির সুরেলা ‘বউ কথা কও’, ‘সরষে কোট’ নানা স্বরের ডাকে মুখর হয়ে থাকত পাড়াগাঁ গৃহস্থের আঙ্গিনা। কিন্তু অবাধ বৃক্ষ ও বনাঞ্চল নিধন এবং আবাদি জমিতে বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগের কারণে হলদে পাখি হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন খুব একটা চোখে পড়ে না এ পাখি। নতুন প্রজন্মের কাছে এই প্রজাতিটি অপরিচিত হতে বসেছে। হলদে পাখি আকৃতিতে শালিক পাখির মতো ২৩ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার। বৈজ্ঞানিক নাম ওরিওলিদি এবং ইংরেজীতে এদের বলে অরিওল। গায়ের-পাখার পালক উজ্জ্বল হলুদ এবং লেজ ও পাখার ওপরের অগ্রভাগের পালক কালো। গলা ও মাথার রং উজ্জ্বল তেল চিক্চিকে কালো হলেও ঠোঁট, চোখ ও পা দুটো টকটকে লাল। এরা ঝোপঝাড়ে শুকনো ডাল ও খড়কুটো দিয়ে অগোছাল বাসা বানায়। বসন্ত ও গ্রীষ্মের মাঝামাঝি এদের প্রজনন মৌসুম। সাদা রঙের বাদামি ফোটাযুক্ত তিন থেকে চারটে ডিম দিয়ে মেয়ে ও পুরুষ পাখি মিলে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায় পনেরো থেকে সতেরো দিনে। এরা পোকামাকড়, ফল সবই খেয়ে থাকে। এছাড়া বিচিত্র বর্ণের সাদা চোখ নামে এই ক্ষুদে পাখিটি হারিয়ে যেতে বসেছে। এই পাখি তাদের বিশেষই চোখের কারণে অন্যসব পাখির থেকে একেবারেই আলাদা। আগে সর্বত্র দেখতে পাওয়া গেলেও এখন সুন্দরবন ও চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে খুব কম সংখ্যায় দেখা যায়। এদের ইংরেজীতে বলা হয় ডযরঃব ঊুব ইরৎফ আর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছেÑ তড়ংঃবৎড়ঢ়ং চধষঢ়বনৎড়ংধ। সাদা চোখ পাখি লম্বায় ৮ থেকে ৯ সেন্টিমিটারের বেশি বড় হয় না। মাথা ও শরীরের উপরিভাগের পালকের রং উজ্জ্বল সোনালি হলুদ এবং বুক লেজের নিম্নভাগের পালক শুভ্রধবল এবং তীক্ষ্ন ঠোঁটের রং বাদামি। এদের দু’চোখ গোলাকার সাদা পালকে ঢাকা আর তার মাঝখানে পুঁতির মতোর জলজলে চোখ। দেখলে মনে হবে পাখিটি সাদা গোলাকার চশমা চোখে দিয়েছে। সাদা চোখ সর্বভুক পাখি, খাদ্য তালিকায় ছোট ফল, কচি পাকা, ফুলের মধু, পরাগ এবং কীটপতঙ্গ। মাকড়সার জাল, গাছের আঁশ, পাখির নরম পালক দিয়ে বাসা বানায় এরা নিচু গাছে। নীল রঙের ডিম পাড়ে দুই থেকে তিনটি। পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতায় সাদা চোখ নামের পাখিটি সংরক্ষিত না হলে হয়ত একদিন হারিয়ে যাবে। আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা থেকে
×