ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সালেহা চৌধুরী

মোরগ ও মুক্তারমালা

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মোরগ ও মুক্তারমালা

এমন অনেক জিনিস আছে যা কারও কাছে অনেক মূল্যবান। আবার কারও কাছে সেই জিনিসের কোন মূল্যই নেই। এমনি এক ব্যাপার ঘটেছিল যখন এক মোরগ খাবারের সন্ধানে এখানে সেখানে নানা সব খাবার খুঁজছিল। মোরগটির ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছিলে। যে বাড়িতে ও থাকত তারা সব বেড়াতে চলে গিয়েছিল। যাকে বলা হয়েছিল ওকে খাবার দিতে সে ভুলে গেছে। কাজেই বেচারা মোরগ সারাদিন কিছু না খেয়ে একেবারে কাহিল হয়ে পড়ল। ওর বাড়ির সকলে আগামীকাল আসবে। ততক্ষণ মোরগ কি করে না খেয়ে থাকতে পারে? প্রথমে গেল সে বাড়ির পেছনে। যেখানে এ বাড়ির সব অবর্জনা ফেলা হয়। কিন্তু সব আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে বলে সেখানে কোন খাবারই পাওয়া গেল না। মাঝে মাঝে এখান থেকে মোরগটি খাবার খুঁটে খায়। কি আর করা এবারে মোরগটি গেল মোড়লের বাড়ির পেছনে। কিন্তু সেখানে যেতেই লাঠি হাতে উঁচিয়ে এলো একজন। বলল এটা আবার এখানে কি করতে এসেছে। মোরগ পাখা তুলে দে দৌড়। কোথায় যাই কোথায় যাই ভাবতে ভাবতে মনে হলো এ গাঁয়ের এক কোনে এক বিশাল বড় লোকের বাড়ি আছে। সেখানে বাড়ির পেছনে অনেক সময় খাবার থাকে। একদিন গিয়েছিল। কিন্তু তারপর আর যাওয়ার দরকার হয়নি। মোরগ এবার সেখানে যাবে বলে ঠিক করল। বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করল সেই মোরগ। প্রথমে পুকুর পার পার হলো। গোলা ঘর ও খড়ের গাদা ডিঙ্গিয়ে গেল। চাষা বউ দেখেতে পেয়েই তাড়িয়ে দিল। চাষা বউ উঠোনে ধান শুকোচ্ছিল। মস্ত এক লাঠি হাতে। ওখান থেকে যে কিছু ধান খেয়ে ফেলবে তারও উপায় নেই। তারপর অনেকটা পথ পারি দিয়ে এসে পৌঁছাল সেই বড়লোকের বাড়ির পেছনে। বাড়িটি এ গ্রামের মধ্যে সবচাইতে উঁচু আর সুন্দর বাড়ি। বাড়ির পেছনে একটি জায়গায় অনেক কিছু চোখে পড়ল। নানা আবর্জনা। ভাঙ্গা হাঁড়ি কুড়ি, কাপ পিরিচ আরও কতকি? লাফাতে লাফাতে সেই আবর্জনার স্তূপে খাবার খুঁজতে লাগল সেই মোরগ। হঠাৎ দানার মতো কিছু চোখে পড়ল ওর। এ নিশ্চয়ই শস্য ভাবল ও। নিশ্চয়ই গম বা যব না হলে বড় চাল। ভাল মতো দেখে বুঝলো এগুলো গম বা শস্য নয়। আসলে এগুলো কোন খাবারই নয়। এগুলো একটি ছেঁড়া মুক্তার মালা। আর কেউ পেলে খুশিতে বাগ বাগ হয়ে যেত। কিনতু কি করবে মোরগ এই মুক্তা দিয়ে। একে তো ও খেতে পারছে না। মনে মনে দুঃখ হলো। এত পথ এসে আমি এক কণা খাবার পেলাম না। পেলাম কিছু মুক্তা। এ দিয়ে আমি কি করব? এই বলে এবার সে রওনা দিলো অন্য এক বাড়ির দিকে। ঠিক সেই সময় দুজন কাজের মেয়ে কিছু আবর্জনা ফেলতে বাড়ির পেছনে এসেছে। হঠাৎ খুশিতে তারা চিৎকার করে উঠল। দেখ দেখ এই সেই মুক্তার মালাটা না কাল যেটা আমাদের বিবিসাব গোসলের সময় উঠোনের টুলে রেখেছিলেন। তারপর হারিয়ে যায়। চল চল এটা পেলে উনি খুশিতে আমাদের বেতন বাড়িয়ে দেবেন। ছিঁড়ে গেছে তো কী? দানাগুলো তো আছে। তখন আর একজন বলে কাল থেকে বিবিসাবের মন খারাপ। মনে হয় একটা কাক খাবার মনে করে ওটা ঠোঁটে করে এখানে এনেছিল। তারপর খেতে না পেয়ে রেখে গেছে। ভাগ্যিস চোরের হাতে পড়েনি। কাকের হাতে পড়েছে। তাই ছিঁড়ে গেলেও এখনও এর সব মুক্তার দানা আছে। এরপর ওরা দুজন কিছু ময়লা ফেলে মালাটা কুড়িয়ে নিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। ময়লার ভেতরে কিছু ক্ষুদ কুড়ো ছিল। মোরগ প্রায় উড়তে উড়তে ফিরে এলো। খাবার পেয়ে মোরগের প্রাণটা বাঁচে। মোরগের কাছে মুক্তার কোন দাম নেই। কারণ মুক্তা তো আর খাওয়া যায় না। তাই এক মুঠো ক্ষুদ-কণার কাছে একটা মুক্তার মালা কিছুই না। আসলে মনে রাখতে হবে সব জিনিস সকলের জন্য ভাল নয়। অলঙ্করণ : আইয়ুব আল আমিন
×