ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৩ সেপ্টেম্বর ঢালাই

দৃশ্যমান হচ্ছে পদ্মা সেতু, চারদিকে কর্মযজ্ঞ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

 দৃশ্যমান হচ্ছে  পদ্মা সেতু, চারদিকে কর্মযজ্ঞ

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর ৩৮ নম্বর পিয়ারের ওপরের ক্যাপের খাঁচা উঠে গেছে। রড ঝালাই করে লাগানো হচ্ছে। এই খুঁটির শেষ ধাপ এই পিয়ার ক্যাপের ঢালাই ১৩ সেপ্টেম্বর হওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের ২/১ দিন আগেই ঢালাই হতে পারে। এদিকে ৩৭ নম্বরের পিয়ার ক্যাপের খাঁচা কুমারভোগের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে জাজিরায় নেয়ার কাজ শুক্রবার রাতে শুরু হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর এই খাঁচাটি ৩৭ নম্বর খুঁটিতে স্থাপন করা হবে। ৩৭ নম্বর ক্যাপটি অপেক্ষাকৃত বড়। এর পরে ১৫ সেপ্টেম্বর এর কংক্রিটিং (ঢালাই) করার কথা রয়েছে। এ নিয়ে পদ্মায় এখন ভীষণ ব্যস্ততা। ৪ আগস্ট ৩৮ নম্বর পিয়ারের ওপরের ক্যাপের খাঁচা লাগানো হয়। এর আগে রডের বিশাল ক্যাপের খাঁচা তৈরি করা কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের পাশে ভাসমান জেটিতে। এই ক্যাপ ঢালাইয়ের ১৪ দিনের মাথায় সুপার স্ট্রাকচার (স্প্যান) স্থাপন উপযোগী হবে। তাই এখন পদ্মা সেতুর দৃশ্যমানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। সংশ্লিষ্টরা চাচ্ছেন সেপ্টেম্বরের মধ্যেই স্প্যান স্থাপন করতে। সেই লক্ষ্যে সব প্রচেষ্টাই চলছে এখন। এ নিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘন ঘন কাজের তদারকি করছেন। এদিকে হ্যামার সঙ্কটে দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় পাইল ড্রাইভ বন্ধ থাকার পর আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে। ১৯ শ’ কিলোজুলের নতুন হ্যামার মাওয়া প্রান্তের ১৪ নম্বর পিয়ারে পাইল ড্রাইভ করছে। আর ২৪শ’ কিলোজুলের হ্যামারটি নিয়মিত মবিল পরিবর্তনসহ সংস্কার শেষে আবার কাজে নেমেছে। এটি পাইল ড্রাইভ করছে জাজিরা প্রান্তের ৪১ নম্বর পিলারে। পদ্মায় এখন প্রবল ¯্রােত। এরই মধ্যে সেতুর ভিত তৈরিসহ সব কাজই চলমান রয়েছে। পদ্মা মূল সেতুর এ পর্যন্ত নদীতে ৭৯টি পাইল ড্রাইভ হয়েছে। আর তীরের ৪২ নম্বরে ১৬টি পাইল স্থাপন হয়েছে। সব মিলিয়ে পাইল বসেছে ৮৫টি। এছাড়া জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সেতুর ১৬৬টি পাইল বসেছে। সদ্য শুরু হওয়া মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সেতুর পাইল বসেছে একটি। আরও একটি পাইল স্থাপনের কাজ চলছে। মাওয়া প্রান্তে ১৭২টি পাইল বসবে। অপরপ্রান্ত জাজিরায় এই সংযোগ সেতুর ১৯৩ টি পাইলের মধ্যে ১৬৬টি পাইল বসে গেছে। এখন চারদিকে কমর্যজ্ঞ। এসব কর্মযজ্ঞে ভারি ভারি সব আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। সব মিলিয়ে শরতে পদ্মা ও পদ্মা তীরে এখন বিশেষ পরিবেশ বিরাজ করছে। আর তাই অনেক কৌতূহলী যাচ্ছেন বাঙালীর এই বীরত্বের সেতুর নির্মাণশৈলী দেখতে। দেশী-বিদেশী কর্মীদের অবিরাম শ্রমে ক্রমেই স্বপ্নের সেতুটি দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে এখন। আগামী ১৪, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ সভা। এই সভায় দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা সরেজমিন সভা করবেন এবং সেতুর কাজের খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করবেন। পরে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। এদিকে পদ্মা সেতুর ১৪টি পিলারের চূড়ান্ত ডিজাইন অনুমোদনের কাজ এখন চূড়ান্ত চলছে। ব্রিটিশ ‘কাউই’ নামের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এই ডিজাইনের কাজটি এগিয়ে এনেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই ডিজাইনের অনুমোদন দেয়ার কথা রয়েছে। এদিকে ঈদেও পদ্মা সেতুর কাজ অন্যান্য ঈদের মতোই চলমান ছিল। তবে যেসব প্রকৌশলী, কর্মকতা ও শ্রমিক ছুটিতে ছিল তাদের অধিকাংশই কাজে যোগদান করেছে। তাই পুরোদমেই ঈদের পরে আবার সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে আসন্ন শুষ্ক মৌসুমকে ঘিরে কিছুটা পিছিয়েপড়া পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজ মাওয়া প্রান্তে পুরোদমে শুরুর প্রস্তুতি চলছে। এদিকে জাজিরা প্রান্তে ও মাঝের চর এলাকায় নদী শাসনের নানা কাজ চলমান রয়েছে বলে দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। পদ্মা সেতুর ১০ স্প্যান মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে খালাস হয়েছে। চীন থেকে সমুদ্রপথে আসা এটি নিয়ে ১০টি স্প্যান পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৭টি স্প্যানের ফিটিং সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতুর জন্য মোট ৪১টি স্প্যান প্রয়োজন হবে। চীনে এ পর্যন্ত ২০টি স্প্যান তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। তৈরি হওয়া বাকি আরও ১০টি স্প্যান পর্যায়ক্রমে মাওয়া আনার কাজ চলছে। এছাড়া নতুন করে আরও ৮টি স্প্যানের কাজ এখন চীনে চলমান রয়েছে। এর পরই বাকি আরও ১৩টি স্প্যানের কাজ শুরু হবে।
×