ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যানজটে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ভোগান্তি

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটের নাব্য সঙ্কটের ফেরি চলাচলে প্রায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার অল্প পানিতে কমসংখ্যক যান নিয়ে ওজন কমিয়ে চলাচল করছে ছোট আকারের ফেরি ৭টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপারের চেষ্টা চলেছে। বিআইডব্লিউটিএ ইতোমধ্যে ভারি যানবাহনকে বিকল্প পথে চলাচল করতে নির্দেশনা দিয়েছে। শিমুলিয়ায় শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় থাকলেও কাঁঠালবাড়ি ঘাটে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। কাঁঠালবাড়ি ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় দুই শতাধিক যান। ঘাটমুখী গাড়ি ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ঘাটের অস্বাভাবিক অবস্থা এড়াতেই এই ব্যবস্থা বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ছোট আকারের এবং জরুরী যানগুলোকে যেতে দেয়া হচ্ছে। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচলে অচলতায় উভয় পাড়েই যানজট আর মানুষের ভোগান্তি। ঈদে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের কষ্টের যেন শেষ নেই। এসব তথ্য দিয়ে বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটস্থ সহকারী মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শাহ নেওয়াজ খালিদ জানান, ২১টি ফেরির মধ্যে ছোট আকারের ৭টি ফেরি চলছে। তবে এই ছোট ফেরিগুলোও স্বাভাবিক চলতে পারছে না। প্রায়ই ফেরির তলা মাটিতে আটকে যাচ্ছে। এতে ফেরির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তারপরও পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফেরিগুলো চালাতে হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ পদ্মার তলদেশের পলি অপসারণের ড্রেজিং করছে। এখনও চ্যানেলগুলো চলাচলের উপযোগী হয়নি। প্রতিদিনই বলছে আর প্রায় শেষ। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সচল করা হবে এ নৌ রুটিটি। তবে যাত্রী পারাপারের জন্য ৮৭টি লঞ্চ ও তিন শতাধিক স্পিটবোড চলাচল করছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ॥ ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করায় রাজধানীমুখী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে। তবে ফেরি ঘাটের অচলাবস্থার কারণে এই রুটে গাড়ির সংখ্যা অন্যান্য বারের চেয়ে অনেক কম। বড় গাড়ি ও ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে না। শুধু ছোট গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। তবে বিপুল সংখ্যক মানুষ ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট দিয়ে পার হচ্ছে। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় যাত্রীরা বেশি লঞ্চ ও স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিয়ে লোকাল বাস দিয়ে গন্তব্যে রওনা হয়ে যাচ্ছে। এ সুযোগে লঞ্চ, স্পিডবোট ও লোকাল পরিবহনগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়ায় আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীরা বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নিজ গন্তব্যে রওনা হয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে দীর্ঘ সময় নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে কর্মস্থলগামী এসব যাত্রীর চাপে শুক্রবার শিমুলিয়া বাস টার্মিনালে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের প্রায় প্রতিটি পরিবহন কাউন্টারে গাড়ির অপেক্ষায় শিশু ও নারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। আবার পরিবহনগুলোর সিরিয়ালের গাড়িতে উঠতে বেশ কিছু সময় নির্দিষ্ট গাড়ির অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে বাস যাত্রীদের। নিরুপায় এসব যাত্রীরা শিমুলিয়ায় ঘাটের বাস কাউন্টার থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসে গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে বাসের ভেতড়ে বসে ও দাঁড়িয়ে ঝুঁকি নিয়েই কর্মস্থলে ফিরতে দেখা গেছে। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, নাব্য সঙ্কট একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এখানে কারও হাত নেই। কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা ঈদের তিনদিন আগে গভীরতা মেপে ১৩-১৪ ফুট পাই, কিন্তু ২ দিন আগে সকালে মাপা হলে গভীরতা কমে সাড়ে ৭ ফুটে চলে আসে। চ্যানেলের মুখে বিশাল চর সৃষ্টি হয় যা ৫০০ মিটার পার্শ্ব এবং ৫ কিমি লম্বা। যা একদিনে ড্রেজিং করে সম্ভব না সমাধান করার। এবারের ঈদে ৯টি ড্রেজার প্রস্তুত ছিল। নাব্য সঙ্কটে ফেরি চলাচল ব্যাহত শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটের নাব্য সঙ্কটের ফেরি চলাচল সপ্তাহর বেশি সময় ধরে ব্যাহত হচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকে অল্প পানিতে কমসংখ্যক যান নিয়ে ওজন কমিয়ে ছোট আকারের ফেরি ৭ টি ফেরি চলাচল করলেও বিকেলে ১৩টি ফেরি চলতে সক্ষম হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর ভারি যানবাহনকে বিকল্প পথে চলাচলের নির্দেশনায় ঘাট এলাকায় বড় গাড়ি খুব একটা আসতে দেখা যায়নি। এসব তথ্য দিয়ে বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটস্থ সহকারী মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শাহ নেওয়াজ খালিদ জানান, লৌহজং টার্নিং থেকে ৩/৪ কিলোমিটার দূরে ওয়ানওয়ে রুট করে বিকেল থেকে ১৩টি ফেরি চালানো হচ্ছে। ৪টি রোরো ফেরিসহ ৮টি ফেরি চলতে না পেরে অলস অপেক্ষা করছিল। দিনভর ৭টি ফেরি দিয়ে ছোট যানবাহন ও যাত্রী পার করা হয়েছে। ফেরিতে যানের চেয়ে যেন যাত্রীর সংখ্যাই বেশি। পানি কম থাকায় ফেরিগুলোও স্বাভাবিক চলতে পারছে না। প্রায়ই ফেরির তলা মাটিতে আটকে যাচ্ছে। এতে ফেরির মারাতœক ক্ষতি হচ্ছে। তারপরও পরিস্থিতি মোকাবলায় ফেরিগুলো চালাতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নাব্য সঙ্কট কাটাতে বিআইডব্লিউটিএর রোলেক্স জরিপ জাহাজ দিয়ে মনিটরিং সিস্টেমে স্টেপ বাই স্টেপ ড্রেজিং করা হচ্ছে। গত তিন দিন ধরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সিনো হাইড্রোর একটি শক্তিশালী ড্রেজারসহ ৫টি ড্রেজার দিয়ে টার্নিং পয়েন্টে পদ্মার তলদেশের বালু অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সচল করা হবে এ নৌ রুটটি। তবে যাত্রী পারাপারের জন্য ৮৭টি লঞ্চ ও তিন শতাধিক স্পিটবোড চলাচল করছে।
×