ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাল প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন

ত্রিপুরা থেকে আরও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ত্রিপুরা থেকে আরও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আনা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল রবিবার ত্রিপুরা থেকে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে আরও ১০ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন করা হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র এ খবর জানিয়েছে। এর আগে গত মার্চে ভারতের ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। এ নিয়ে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুত আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ১৬০ মেগাওয়াটে। যদিও অনানুষ্ঠানিকভাবে এই বিদ্যুত আমদানি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। রবিবার আনুষ্ঠানিক আমদানি কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। এর আগে ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ ৬৬০ মেগাওয়াট। দেশটির বেসরকারী খাত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর আদানি গ্রুপ ভারতের ঝাড়খ-ের কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ আদানির কাছ থেকেও বিদ্যুত কিনতে চায়। এ জন্য একটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে। ত্রিপুরার পালাটানায় ৭৭৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করে ভারত। বাংলাদেশের সহযোগিতার জন্য ওই কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশে বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। ত্রিপুরায় বিদ্যুতের চাহিদা না থাকায় বাংলাদেশের কাছে আরও বেশি বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাব দেয় রাজ্যটি। ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুত আমদানির জন্য কুমিল্লা থেকে ত্রিপুরা অংশে মোট ৫৪ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে উভয় দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ২৮ কিলোমিটার এবং ভারত অংশে ২৬ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন এই গ্রিড লাইনটি ত্রিপুরার সুরজমনিনগর থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লাকে সংযুক্ত করেছে। এছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে আরও একটি আন্তঃদেশীয় গ্রিড লাইন রয়েছে। ঝাড়খ- থেকে আদানির বিদ্যুত আমদানির জন্য আরও ২৩৫ কিলোমিটার গ্রিড লাইন নির্মাণ করতে হবে। যার মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরে ৯০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের জন্য ভারতের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আদানি অনুমোদন নিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১৪৫ কিলেমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি)। এটি নির্মাণ করা হলে তিন দিক থেকে বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের গ্রিড লাইন গড়ে উঠবে। সরকারের পরিকল্পনায় প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির উল্লেখ রয়েছে। সূত্র জানায়, রবিবার সকাল দশটায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুত আমদানির আধুনিক উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে ১০ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করবেন। নতুন এই ১০ উপজেলা হচ্ছে বাগেরহাটের মোল্লারহাট, ফকিরহাট, দিনাজপুরের হাকিমপুর, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর, সিলেট সদরের পাশাপাশি জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, চট্টগ্রামের সীতাকু- এবং নরসিংদী সদর উপজেলা। এর সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে এএসপিসিএলের ৪৫০ মেগাওয়াট এবং কেরানীগঞ্জের বসিলায় সিএলসি পাওয়ার লিমিটেডের ১০০ মেগাওয়াটের একটি তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছর ৫ আগস্ট ছয়টি উপজেলাকে প্রথম দফা শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসেবে ঘোষণার সময় আরইবি জানিয়েছিল ২০১৬-এর ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ২৮, ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে ৭৫, ডিসেম্বরের মধ্যে ৭৯, ২০১৮ সালের জুনে ১১১, ডিসেম্বরে ১৭৬ উপজেলা বিদ্যুতায়নের আওতায় আসবে। এই সময়ের মধ্যে মোট ৪৬৫ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়ে যাবে। কিন্তু আরইবি নতুন এই দশটি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন হলে মোট ৪৩ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত বলে দাবি করতে পারবে। যদিও এই সময়ের মধ্যে তারা ৭৫ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত বলে ঘোষণা করতে চেয়েছিল। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উপজেলাগুলোকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার জন্য ৩১ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে সরকার। এ জন্য মোট ১৪ প্রকল্প হাতে নিয়েছে আরইবি। আরও কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় গ্রিড সংযুক্ত এলাকায় শতভাগ বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হবে। আর যেখানে গ্রিড পৌঁছায়নি সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য সোলারের মিনি গ্রিড তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্ন চরের বাসিন্দাদের এমন কয়েকটি মিনি গ্রিড দিয়ে বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরবারী উদ্যোক্তারাও মিনি গ্রিড তৈরি করছে।
×