ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় ফিরতেও অন্তহীন বিড়ম্বনা ॥ সড়ক-নৌ ওরেলপথে তীব্র জনস্রোত

দৌলতদিয়া-কাঁঠালবাড়ি ঘাটে গাড়ির দীর্ঘ লাইন, চরম ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দৌলতদিয়া-কাঁঠালবাড়ি ঘাটে গাড়ির দীর্ঘ লাইন, চরম ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক-নৌ ও রেলপথে স্রোতের মতো এবার ঢাকামুখী মানুষের ভিড়। ছাদ-ইঞ্জিন-বগি বোঝাই করে ট্রেনে আসছেন বিপুলসংখ্যক যাত্রী। যাত্রী চাপ বাড়ায় মহাসড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। ফেরিঘাটগুলোতে দুর্ভোগ বেড়েছে। বিশেষ করে দৌলতদিয়া ও কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে জনদুর্ভোগের মাত্রা ছাড়িয়েছে। ১২ ঘণ্টার বেশি সময় বসে থেকেও ফেরির দেখা মিলছে না। নৌ-পথে যাত্রীদের লঞ্চে ঢাকা ফিরতে নানান ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে জমে উঠতে শুরু করেছে রাজধানী শহর। খুলছে মার্কেট, বিপণিবিতান। আগামী রবিবারের মধ্যে যানজটের নগরী চিরচেনা চেহারা ফিরে পাবে ধারণা বলে সবার। দৌলতদিয়া ঘাটে দুর্ভোগ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ যানজট দৌলতদিয়া থেকে গোয়ালন্দের জমিদারব্রিজ ছাড়িয়ে গেছে। ১২ ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষার পরও পারের সুযোগ মিলছে না। এতে মহাদুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে ঘাট এলাকায়। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয় জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে মোট ২১ ফেরির মধ্যে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত চলছিল ১৯টি। বাকি দুটির মধ্যে রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান শুক্রবার সকালে যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিকল হয়ে পড়ে। এছাড়া চারদিন ধরে ইউটিলিটি চন্দ্র মল্লিকা বিকল হয়ে পড়ে আছে। ফেরির সংখ্যা যথেষ্ট থাকলেও যানবাহন ও মানুষের চাপ কমছেই না। সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত নয়টায় গাড়ি ঘাটে যানজটে আটকায়। কিন্তু সকাল দশটার পরেও বাস পারাপারের সুযোগ হয়নি। তাই গাড়িতেই বসে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। যাত্রীরা জানিয়েছেন, বেশি গাড়ির চাপ থাকায় ঘাট এলাকায় বিশুদ্ধ পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। খাবার দাবার সঙ্কট চরমে। তাছাড়া যাত্রীদের জন্য ঘাট এলাকায় প্রয়োজনীয় টয়লেট নেই। সাকুরা পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক রাজু মোল্লা জানান, সকাল থেকে তাদের কোম্পানির অন্তত ১২ বাস যানজটে আটকে রয়েছে। একেকটি যাত্রীবাহী বাসকে ফেরির নাগাল পেতে সাত থেকে আট ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এছাড়া অসংখ্য যাত্রী ব্যক্তিগত গাড়ি প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের আটকা পড়ে আছে। বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, ঈদের দুইদিন পর থেকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথের নাব্য সঙ্কটে ওই পথ পরিহার করে অনেক গাড়ি এদিকে আসায় বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগামী আরও দুই-একদিন এই চাপ থাকবে বলে তিনি মনে করেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট বৃহস্পতি ও শুক্রবার ছুটি। শনিবার থেকে খুলছে বেসরকারী অফিস। রবিবার থেকে সরকারী অফিসও চলবে। তাই ঈদে যারা দীর্ঘ ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন তারা বৃহস্পতিবার রাত থেকেই কর্মস্থলে আসতে শুরু করেছেন। যে কারণে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে রাত থেকেই। ২১ জেলার গাড়ি এই সড়কে চলাচল করে। পরিবহন চালকসহ যাত্রীরা জানিয়েছেন, রাস্তা খারাপ থাকা, সড়ক দুর্ঘটনা ও বাড়তি গাড়ির চাপের কারণে সিরাজগঞ্জসহ টাঙ্গাইল রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। তবে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেনি। সিরাজগঞ্জের হাঁটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানি বলেন, ঈদের আগে হাঁটিকুমক মোড় ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পারে নলকা সেতুর দুপাশে প্রচ- যানজট ছিল। যানজটের কারণে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ, বগুড়ার মোকামতলা ও মহাস্থানগড়ে একটু বেশি সমস্যা রয়েছে। সিরাজগঞ্জের ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের চান্দাইকোনায় খানাখন্দের কারণে কিছুটা সমস্যা থাকলেও তা প্রকট নয়। সকালে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পারে নলকা সেতুর পূর্বপাড়ে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘণ্টা খানেক জ্যাম ছিল। ঢাকার চিত্র দুপুরে রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ট্রেনগুলোতে লোকে লোকারণ্য। প্রতি ট্রেনের ছাদ থেকে শুরু করে ইঞ্জিন, বগিতে ঠাসা মানুষ। নারীদেরও ছাদে ওঠে ঢাকায় আসতে দেখা গেছে। রাজশাহী থেকে আসা নারী যাত্রীরা জানান, বাসের টিকেট নেই। ট্রেনের টিকেটও মেলে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে ছাদে ওঠে আসা ছাড়া বিকল্প ছিল না। কমলাপুর রেল স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানান, যারা একটু বেশি ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন তারা এখন ফিরতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষ বেশি আসছেন। তিনি জানান, বেশিরভাগ ট্রেন বাড়তি যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসছে। ট্রেনের সিডিউল ঠিক আছে। কোন রকম সিডিউল বিপর্যয় নেই বলেও জানান তিনি। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক জানান, ভোর থেকেই ঢাকায় মানুষের চাপ বেড়েছে। ঢাকা টাঙ্গাইল সড়কে কিছুটা যানজট আছে। তবে গাজীপুর থেকে মহাখালী আসতেও বেশ সময় লাগছে বলে জানান তিনি। তবে সিলেট রুট মোটামুটি ভাল। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যানবাহনের চাপ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সচল হয়েছে ট্রাফিক সিগন্যালগুলো। সময়মতো গাড়ি থামানো ও ছাড়তে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। ট্রাফিক সদস্য লিটন চৌধুরী জানান, ঈদের পর বেশ কয়েকদিন রাস্তায় গাড়ি কম ছিল। সিগন্যাল বলতে কিছুই ছিল না। আমাদের ব্যস্ততাও ছিল না। শুক্রবার সকাল থেকে নগরীতে গাড়ির চাপ বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে প্রাইভেটকারের সংখ্যা বেশি। তাই সিগন্যাল সচল হয়েছে। আমাদের ব্যস্ততা আগের মতোই। আশা করি রবিবার থেকে চিরচেনা রূপেই ফিরবে ঢাকার চিত্র।
×