ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিরঝিলের ‘ওয়াটার ড্যান্স’

বাজনার সঙ্গে লাল নীল হলুদ রঙের পানির ফোয়ারায় মুগ্ধ সবাই

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাজনার সঙ্গে লাল নীল হলুদ রঙের পানির ফোয়ারায় মুগ্ধ সবাই

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ সন্ধ্যা ৭টা ও রাত ৯টা বাজলেই রাজধানীর হাতিরঝিলের রাস্তার পাশে বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং শুরু হয়। কারণ এ সময় যানবাহনে থাকা যাত্রীরা হাতিরঝিলের রাস্তার পাশে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে রাতের হাতিরঝিলের নান্দনিক ‘ওয়াটার ড্যান্স’ দেখেন। বিভিন্ন মিউজিকের সঙ্গে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ রঙের পানির ফোয়ারা বিমোহিত করে উপস্থিত দর্শকদের। ঈদ-উল-আযহার ছুটির রেশ কাটলেও রাজধানীজুড়ে নেই মানুষের ভিড়। আর এ সময়কে কেন্দ্র করে রাজধানীতে থাকা মানুষের ভিড়ে জমে উঠেছে হাতিরঝিল চত্বর। ঈদের দিন বিকেল থেকেই ভিড় বেড়েছে রাজধানীর এ সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানটিতে। বিশেষ করে রাতের হাতিরঝিলের ‘ওয়াটার ড্যান্স’ দেখতে অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়ছেন চলন্ত যানবাহন থামিয়ে আবার অনেকেই পানির নাচন দেখার উদ্দেশ্য নিয়েই এখানে আসছেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে হাতিরঝিলের রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং করতে দেখা গেল। এসব যানবাহন থেকে নেমে পুরুষ, নারী ও শিশু অবস্থান নেয় ফুটপাথে। সবাই বিমোহিত চোখে দেখতে শুরু করে পানির নাচ। মানুষের ভিড় বাড়তে লাগল। কখনও লাল, কখনও নীল আবার কখনও সবুজ পানি আছড়ে পড়ছে ঝিলে। দেখে মনে হবে যেন বিভিন্ন রঙের পানি দুলে দুলে নৃত্য করছে। দর্শনার্থীরা বিস্ময়ে তাকিয়ে চমৎকার, দারুণ ইত্যাদি প্রশংসা বাক্যে উল্লাস করেন। শিশুরাও চিৎকার করছে পানির এ নাচ দেখে। কেউ কেউ পকেট থেকে মোবাইল বের করে ভিডিও ও ছবি তুলতে শুরু করল। টানা ১৫ মিনিট ধরে রঙ্গিন পানির নাচনে বিমোহিত হলেন উপস্থিত হাজারও দর্শক। তহমিনা খন্দকার ও তার মেয়ে নিশাত পানির নাচন দেখছেন। মেয়ে নিশাত মাকে বলল, ‘এখন থেকে আমরা প্রতিদিন এখানে আসব মামণি। কি সুন্দর! ওয়াটার ড্যান্স করছে।’ কথা হলো তহমিনা খন্দকারের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বললেন, “এর আগেও গুলশান যাওয়ার পথে কয়েকবার দেখেছি ওয়াটার ড্যান্স। কিন্তু কখনও দাঁড়িয়ে থেকে দেখা হয়নি। আজ ব্যস্ততা কম তাই মেয়েকে দেখাতে নিয়ে এলাম ‘ওয়াটার ড্যান্স’। সে তো খুব খুশি! প্রতিদিন আসবে বলে এখন বায়না জুড়েছে।” বলে হাসলেন তিনি। চলতি পথে মোটরসাইকেল থামিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে পানির নাচন দেখছেন বিপুল কর্মকার। তিনি বললেন, “আমার বাসা আজিমপুর। কখনও এ পথে আসা-যাওয়া করি না। যদিও লোকমুখে শুনেছি হতিরঝিলের এ ওয়াটার ড্যান্সের কথা কিন্তু দেখতে আসা হয়নি। আজ স্ত্রীকে নিয়ে গুলশান যাচ্ছিলাম। পথে চোখে পড়ল লাল, নীল রঙের পানির ঝলকানি। তাই দাঁড়িয়ে পড়লাম। এখন উপভোগ করছি। বাজনার সঙ্গে পানির খেলা সত্যিই ‘অভূতপূর্ব’।” পরিচিতদের কাছে শুনে ও টিভিতে হাতিরঝিলের এ ওয়াটার ড্যান্স দেখে সপরিবারে মাইক্রো নিয়ে মুগদা থেকে বেড়াতে এসেছেন কাজী শরীফুল। হাতিরঝিলের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে স্ত্রী-সন্তান ও ছোট বোনকে নিয়ে মুগ্ধ হয়ে নান্দনিক পানির নাচ দেখেছেন তিনি। তিনি বললেন, “অনেকদিন ধরে আসব ভেবেও আসতে পারিনি দেখতে। এবার পরিবার নিয়েই চলে এলাম। এককথায় ‘অসাধারণ’। ব্যস্ত রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা হাতিরঝিল জায়গাটি এখন সবার কাছেই সুপরিচিত। এখানে এসে এত ভিড় দেখব ভাবতেই পারিনি। ছোট-বড় সবাই ‘ওয়াটার ড্যান্স’ দেখে উল্লাস করছে। এখন থেকে সময় পেলেই খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে পরিবার নিয়ে পানির নাচ দেখতে আসব।” গত ২৬ মার্চ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য রাজধানীর হাতিরঝিলে ওয়াটার ফাউন্টেনটি চালু করা হয়। এরপর থেকে হাতিরঝিলের পানির ফোয়ারাটি (ওয়াটার ফাউন্টেন) অন্যতম আকর্ষণীয় বিনোদনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। শুধু নগরবাসীই নয়, ওয়াটার ফাউন্টেনের নান্দনিক সৌন্দর্য দেখতে ঢাকার উপকণ্ঠের জেলা থেকেও অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে হাতিরঝিলে ছুটে আসছেন। সবকিছুকে ছাপিয়ে ওয়াটার ফাউন্টেনটি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে অধিকতর জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা ও রাত ৯টায় দুবার ওয়াটার ফাউন্টেনটি চালু করা হয়। এটি চালুর আগে ও পরে গুলশান পুলিশ প্লাজাসংলগ্ন হাতিরঝিলের উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্বে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে। রাজধানীর হাতিরঝিলে আগে থেকেই ওয়াটার বোট ও চক্রাকার যান (বাস) চালু রয়েছে। ভ্রমণপিপাসু অনেকেই হাতিরঝিলে স্থল ও পানিপথে ঘুরতে আসছেন। রামপুরার দিকে পানিতে ভাড়ায়চালিত প্যাডেল বোট চলছে। পর্যটকদের জন্য হাতিরঝিলের চারপাশে ছোট-বড় একাধিক রেস্টুরেন্ট ও ফুডকোর্ট চালু হয়েছে। এগুলোতেও সন্ধ্যার পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে।
×