ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর বাজার

পেঁয়াজের দাম কমেছে, অপরিবর্তিত চাল ডাল আটা চিনি তেল

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পেঁয়াজের দাম কমেছে, অপরিবর্তিত চাল ডাল আটা চিনি তেল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঈদের পর নিত্যপণ্যের বাজারে কমেছে পেঁয়াজের দাম। সবজির মূল্য কিছুটা বাড়লেও দাম অপরিবর্তিত রয়েছে চাল, ডাল, আটা, চিনি এবং ভোজ্যতেলের। দাম কমার তালিকায় আছে রসুন এবং ব্রয়লার মুরগি। ক্রেতা কম থাকায় বাজারে স্বস্তি রুপালি ইলিশে। এক কেজি সাইজের একটি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৯শ’ থেকে এক হাজার টাকায়। এছাড়া কোরবানি ঈদের ছুটি শেষে ঢাকাবাসী ফিরতে শুরু করলেও ফাঁকা কাঁচাবাজার। অধিকাংশ দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামীকাল রবিবারের মধ্যে দোকানপাট পুরোদমে চালু হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর কাওরানবাজার, কাপ্তানবাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, পলাশী বাজার, নিউমার্কেট এবং ফকিরাপুল কাঁচাবাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দাম কমে প্রতি কেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। দেশী পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কোরবানির সময় পেঁয়াজের দাম আর না বাড়ায় স্বস্তি ছিল ভোক্তাদের। তবে চালের দাম বেড়ে আর না কমায় কিছুটা অসন্তোষ আছে ক্রেতাদের। কাওরানবাজারে চাল কিনছিলেন তেজতুরিপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, সেই যে দাম বাড়ল কিন্তু আর কমল না। প্রতি কেজি মিনিকেট চাল তিনি ৫৫ টাকা দরে কিনছিলেন। গত কয়েক মাস ধরেই এই দামে চাল কিনছেন তিনি। তিনি আরও জানান, সরকার ২০ লাখ টন চাল ও গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেসব চাল ও গম ইতোমধ্যে দেশে আনা শুরু হয়েছে। এছাড়া চালের আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে নামিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। এরপরও দাম কমছে না। তিনি বলেন, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হলে চালের দাম আগে কমানো প্রয়োজন। ওই বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা নূরুল ইসলাম জানান, চালের দাম আর বাড়েনি। বরং মোটা ও চিকন চাল কোন কোন ক্ষেত্রে ১-২ টাকা কমেছে। পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ার কারণে খুচরা বাজারে দাম কমছে না বলে জানান তিনি। এদিকে, কোরবানির ঈদের পর দোকানপাট খোলা শুরু হলেও মুরগি ও গরু-খাসির মাংসের বেচাকেনা তেমন নেই বলে জানান মাংস ব্যবসায়ীরা। এ কারণে অধিকাংশ মাংস ব্যবসায়ী দোকানপাট বন্ধ রেখে অবসর সময় কাটাচ্ছেন। দু’-একজন যারা দোকান চালু রেখেছেন তারাও ক্রেতা পাচ্ছেন না। কাপ্তানবাজারের বাদশা মাংস বিতানের ম্যানেজার বাবুল মিয়া জানান, মাংসের ক্রেতা নেই। কোরবানির মাংস ঘরে থাকায় কেউ আর নতুন করে মাংস কিনছেন না। এ কারণে বাজারে মাংসের চাহিদা কমে গেছে। এছাড়া বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রিও কমে গেছে। প্রায় ১০ টাকা দাম কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। কাপ্তানবাজারের মুরগি বিক্রেতা হাবিব জানান, ঈদের ছুটির আমেজ এখনও শেষ হয়নি। ক্রেতা কম। এ কারণে মুরগির দামও কমে গেছে। তিনি বলেন, আগামী রবিবারের মধ্যে আশা করা হচ্ছে সবাই দোকানপাট খুলবেন। ওই সময়ের মধ্যে বাজারে ক্রেতাও বাড়বে। মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, সরবরাহ কম থাকায় বাজারে প্রায় সব ধরনের শাকসবজির দাম বেড়ে গেছে। ওই বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, মরিচ ১৩০ টাকা, বেগুন ও বরবটি ৬০ টাকা, ঢেঁড়স, কাকরোল ও ঝিঙে ৪০ থেকে ৫৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত টমেটো ১০০ টাকা ও বেগুন ৪০ টাকাসহ অন্যান্য সবজিতে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত কম ছিল। কারণ ওই সময়ে সবজির চাহিদা তেমন ছিল না। তাই পচে যাওয়ার ভয়ে কম দামে বিক্রি করে দিতে হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত দুদিন সরবরাহ কম। অনেক জেলায় বন্যার কারণে সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। যেসব জেলা থেকে সবজি আসছে সেখান থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সেজন্য দাম একটু বেশি। এ অবস্থা স্বাভাবিক হতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। মাছের বাজারে ইলিশ ছাড়া প্রায় সব ধরনের মিঠাপানির মাছের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি রুই ২৯০-৪৫০ টাকা, সরপুঁটি ২৮০-৩৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-২০০ টাকা, সিলভার কার্প ২৫০-৩০০ টাকা, চাষের কৈ ৩০০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাস প্রতি কেজি ১৫০-২৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০-৮০০ টাকা, প্রকারভেদে চিংড়ি ৪০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের সরবরাহ বাড়া ও ক্রেতা কম থাকায় জাতীয় এই মাছটির দাম বেশ কমে গেছে। যারা বাজারে আসছেন তারা সবাই সাধ্যমতো ইলিশ মাছ কিনছেন। এছাড়া চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে মোটা স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি ৪২-৪৩ টাকা, পারিজা চাল ৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মিনিকেট (ভালমানের) ৫৫ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৩ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৪৮-৫০ টাকা, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৫০ টাকা, উন্নতমানের নাজিরশাইল ৫২ টাকা, পাইজাম চাল ৪৮ টাকা, বাসমতি ৫৩ টাকা, কাটারিভোগ ৭২-৭৩ টাকা এবং পোলাও চাল (পুরাতন) ১০০ টাকা, (নতুন) ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি চিনি ৫৬-৬০, রসুন দেশী ৮০-৯০, আমদানিকৃতটি ৯০-১১০, ডিম হালি ২৮-৩০, ডাল ৭০-১৩০, সয়াবিন পাঁচ লিটারের বোতল ৫১০-৫৩০, আটা প্রতি কেজি ২৪-৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
×