ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চান মালালা

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চান মালালা

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমানদের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী মানবাধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই। রোহিঙ্গাদের হয়ে বলার জন্য মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির প্রতিও আহ্বান জানান তিনি। বিবিসি। লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আমরা এখন চুপ থাকতে পারি না, বিবিসিকে বলেন মালালা। গত ২৪ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ চেকপোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলার পর সেখানে পাল্টা সেনা অভিযানের মুখে দেশ ছাড়ছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। মিয়ানমারের সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শক্ত অবস্থান নেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন মালালা। একটি দেশে বসবাসের অধিকার ও নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর কি ঘটতে পারে তা আমরা এক সেকেন্ডের জন্যও চিন্তা করতে পারব না। এটা মানবাধিকারের বিষয়। বিশ্বের সরকারগুলোর এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত। মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, শিকার হচ্ছে সহিংসতার। শিশুরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তারা মৌলিক অধিকারগুলোই পাচ্ছে না। সন্ত্রাস ও আশপাশে সহিংসতা বিদ্যমান এমন পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকা অত্যন্ত কষ্টকর। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হিথার নাউয়ার্ট সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমার নিয়ে আলোচনা চলছে এবং এ সময় আগ বাড়িয়ে পদক্ষেপ নিতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র। তিনি দাবি করেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সহায়তায় গণহত্যা চালানো হচ্ছে বলে যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে তা বিশ্বাসযোগ্য বলে প্রমাণ পায়নি মার্কিন কর্মকর্তারা। গত কয়েক মাস ধরে রাখাইন অঞ্চলের মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র বৌদ্ধ জঙ্গীরা। নানা সূত্র থেকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, মুসলিম অধ্যুষিত গোটা গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নারী-শিশুসহ ব্যাপক সংখ্যক মুসলমানকে পুড়িয়ে বা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণ করা হয়েছে অসংখ্য নারীকে। এছাড়া প্রাণভয়ে পালাতে যেয়ে অনেক রোহিঙ্গা মুসলমান মারা গেছেন। তা সত্ত্বেও মিয়ানমারের মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর কোন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পায়নি বলে দাবি করল যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা দমন অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা তিন লাখে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করছেন জাতিসংঘ কর্মকর্তারা। জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ জানিয়ে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিষয়টিকে আর অগ্রাহ্য করা যায় না। যেভাবে দলে দলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। একইসঙ্গে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অভিযানের ফলে আরও ব্যাপক এলাকাজুড়ে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়ায় এটি মানবিক বিপর্র্যয় হয়ে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। গুতেরেস বলেন, সম্প্রতি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি রাখাইন রাজ্যে যে হামলা চালিয়েছে আমি তার নিন্দা করি। আমরা ধারাবাহিকভাবে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নির্বিচারে হামলা চালানোর অভিযোগ পেয়ে আসছি। রোহিঙ্গাদের অর্থাৎ রাখাইন রাজ্যের মুসলিমদের ভেতরে ক্ষোভ দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। জাতিসংঘ মহাসচিব রাখাইনের মুসলিমদের জাতীয়তা বা আইনী স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানান।
×