ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দু’দেশের সম্পর্ক লাইনচ্যুত হয়নি ॥ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

চীন-ভারত সুসম্পর্ক নিয়ে আশা

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চীন-ভারত সুসম্পর্ক নিয়ে আশা

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দোকলাম নিয়ে অচলাবস্থার জন্য ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হয়েছে তবে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়নি। ব্র্রিকস সম্মেলনের অবসরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকের দুদিন পর তিনি এ মন্তব্য করেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। মোদি ও শি’র মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের দুদিন পর বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংই বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক লাইনচ্যুত হয়নি। তবে তিনি স্বীকার করেন, দোকলাম সীমান্তে ৭৩ দিন ধরে চলা অচলাবস্থা দুই দেশের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্কে বেশ জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে শি জিনপিং এবং নরেন্দ্র মোদি সফল দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। দুই দেশের সম্পর্কে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় তাদের মধ্যে যেসব বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে দুপক্ষ কাজ করে যাবে।’ নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী কৃষ্ণ বাহাদুর মাহারাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনকালে ওয়াংই এ কথা বলেন। তার মতে, দু’দেশের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়নি। এর মধ্য দিয়েই তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তার কথায়, ‘চীন-ভারত সম্পর্কোন্নয়ন বিশ্বের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ...। দুই দেশের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কের কোন বিকল্প নেই। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ দুটি সম্পর্কোন্নয়নের পথে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সংঘাতের কোন সুযোগ নেই। আমরা দীর্ঘমেয়াদী পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। পরস্পরকে হুমকি দেয়া ও ভুল বোঝাবুঝির পুরনো দিনের রীতি থেকে সরে এসে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করার দিকেই দুই দেশকে এখন মনোযোগ দিতে হবে।’ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি অবলম্বন করেই যে কোন বিবাদ নিরসন করা উচিত বলে ওয়াংই মনে করেন। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে চীন দোকলাম সীমান্তে একটি সড়ক নির্মাণ করার উদ্যোগ নিলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত আগস্টের শেষদিকে কূটনৈতিক তৎপরতার জেরে দুই দেশই সীমান্তের বিতর্কিত এলাকা থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে রাজি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সীমান্তে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক সেনা সদস্য ও যুদ্ধ সরঞ্জাম। যুদ্ধ বেধে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। এ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয়পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এদিকে চীন নিজের সীমা সম্প্রসারণ করছে এবং এর জন্য চীন ও পাকিস্তান ভারতকে এই দুটো ফ্রন্টে লড়াই করতে হচ্ছে- ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছেন সে সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেন, ‘ভারতের সেনাপ্রধানের মন্তব্যের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে। আমরা জানি না, এটি ভারত সরকারের কোন সিদ্ধান্ত কি-না, তিনি কি সরকারের পক্ষ হয়ে ওই মন্তব্য করেছেন নাকি নিজের থেকে দিয়েছেন- সেটি স্পষ্ট নয়।’ বুধবার নয়াদিল্লীতে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার স্টাডিজের এক আলোচনা সভায় ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত মন্তব্য করেন, ধীরে ধীরে সীমানা সম্প্রসারণের মাধ্যমে ভারতের ভূমি দখল করছে চীন। এর মাধ্যমে ভারতের সীমা সঙ্কুচিত করছে বেজিং এবং পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে পাকিস্তান। তিনি আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করার মতো পর্যাপ্ত যুদ্ধবিমান ভারতের বিমানবাহিনীর নেই।’ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে হাল্কাভাবে নিলেও দেশটির গণমাধ্যম এর সমালোচনা করেছে। গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘জেনারেল রাওয়াতের এ মন্তব্যে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। ব্রিকস সম্মেলন দুই দেশের শীর্ষ নেতার বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার আভাসের পর তিনি এর সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী মন্তব্য করেন।’
×