ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাচারের আশঙ্কা

দাম পড়ে যাওয়ায় মাঠ পর্যায়ের চামড়া ঢাকায় আসছে না

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দাম পড়ে যাওয়ায় মাঠ পর্যায়ের চামড়া ঢাকায় আসছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দাম কমে যাওয়ায় চামড়া বেচাকেনা কমে গেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ট্যানারি মালিকরা। আর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, চামড়ার ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা। পোস্তার আড়ত, আমিন বাজার এবং হাজারীবাগে দাম পড়ে যাওয়ায় মাঠ পর্যায়ের চামড়া ঢাকা আসছে না। এ অবস্থায় স্থানীয় পাইকার ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করছেন। লবণ মিশ্রিত চামড়া তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এর পর সেই চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ট্যানারিতে নিতে হয়। আগামী তিন মাসের মধ্যে জেলা পর্যায়ে কোরবানির পশুর চামড়া ঢাকায় আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দাম কমে যাওয়ায় চামড়া পাচারের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, এবার সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকায় গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ও ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ টাকা, ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা ও মহিষের চামড়া প্রতি বর্গফুট ২৫ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনে ট্যানারি মালিকদের কাছে উপযুক্ত দামে বিক্রি করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া হাজারীবাগ থেকে সরানোর পর এখনও পুরোপুরি জমেনি সাভার হেমায়েতপুরের ট্যানারি ব্যবসা। সাভার চামড়া শিল্পনগরীর অধিকাংশ কারখানার এখনও অবকাঠামো নির্মাণই শেষ হয়নি। বাকি যেগুলো চালু হয়েছে তারও অধিকাংশ কারখানা পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করতে না পারায় চামড়ার ক্রেতাও কম বলে জানা গেছে। আর এ কারণেই চামড়ার দাম কম বলে দাবি করছেন অনেকেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান জনকণ্ঠকে বলেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনেছেন। ওই দামে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনলে আর্থিক ঝুঁকি বাড়বে। এ কারণে আড়তদাররা চামড়া কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোরবানির এক সপ্তাহ আগে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে তা মানা হয়নি। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা না বুঝেই বেশি দামে চামড়া কিনেছেন। এ কারণে তারাও এখন বিপাকে পড়েছেন। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের চামড়া এখনও ঢাকায় আসা শুরু হয়নি। তবে শীঘ্রই ব্যবসায়ীরা এসব চামড়া ঢাকায় আনার কাজ শুরু করবেন। জানা গেছে, দাম কমে যাওয়ায় কারণেই ঢাকার বাইরে থেকে চামড়া আসছে না ট্যানারিগুলোতে। গত চার বছর ধরে কাঁচা চামড়ার দাম কমানো হচ্ছে। কিন্তু এই নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি দেশের কোথাও। নির্ধারিত দামের চেয়ে স্থানীয় পর্যায়ে বেশি দামে কেনাবেচা হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। আবার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিতে চাচ্ছেন না ট্যানারি মালিকরা। এই অবস্থায় কাঁচা চামড়া সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা পূরণ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ বেশি দাম পাওয়ার প্রত্যাশায় চামড়া পাচার হয়ে যেতে পারে। এছাড়া সময়মতো লবণ মাখানো ও সঠিক নিয়মে সংগ্রহ না হওয়ায় এ বছর সবচেয়ে বেশি পরিমাণ চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর মোট চাহিদার ৪৫-৫০ শতাংশ চামড়া কোরবানির সময় সংগ্রহীত হয়ে থাকে। আর বাকি ৫০ ভাগ চামড়া সারা বছরে পাওয়া যায়। সাধারণত মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন। আড়ত হয়ে এগুলো কিনে নেন ট্যানারি মালিকরা। ইতোপূর্বে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করা হলেও এ বছর সবচেয়ে কম দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও চামড়ার উপকারভোগী মসজিদ, মাদ্রাসা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও চামড়ার সঠিক দাম নির্ধারণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিতে হলে তাদের লোকসান গুনতে হবে। আর কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের বেশি মূল্যে কিনতে হয়েছে। এ অবস্থায় ট্যানারি মালিক ও এ শিল্পের বড় উদ্যোক্তারা চামড়া ক্রয়ে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করেছেন। এতে করে চামড়ার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটঅয়্যার এ্যাক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি (বিএফএলএলএফইএ) মোঃ শাহিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, মাঠ পর্যায়ে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ভুল করেছেন। ট্যানারি মালিকরা ঘোষিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিনলে নিশ্চিত লোকসানের মুখে পড়বেন। এই কারণে নির্ধারিত দামের চেয়ে এক টাকাও বেশি দিয়ে চামড়া কিনবেন না মালিকরা। ঢাকার বাইরের চামড়ার দাম আরও কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো ট্যানারিতে এখনও আসা শুরু হয়নি। তবে কিছুদিনের মধ্যে আসবে। এদিকে বেশি দামে চামড়া কিনে ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করতে হলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলে জানান কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া খবরে এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচার এ চিত্রই উঠে এসেছে।
×