ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ চূড়ান্ত পর্ব, আট দলের লড়াইয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করতে পারলে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত ;###;অনুর্ধ-১৭ বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ নারী দল, গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ উত্তর কোরিয়া, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া

লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাইল্যান্ডে কৃষ্ণাবাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাইল্যান্ডে কৃষ্ণাবাহিনী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে এশিয়ার সেরা আট দলের অংশগ্রহণে ‘এএফসি অ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে’র মূলপর্বের খেলা শুরু হবে থাইল্যান্ডের চনবুুরিতে। তাতে প্রথমবারের মতো খেলবে বাংলাদেশ দল। সেই লক্ষ্যে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিমানযোগে থাইল্যান্ড রওনা হচ্ছে বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল। এই আসরে গ্রুপ বি’তে পড়েছে বাংলাদেশ। তাদের সঙ্গে আছে জাপান, উত্তর কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। উত্তর কোরিয়া বর্তমান চাম্পিয়ন। বাকি দুই দলও হট ফেভারিট। চনবুরিতে বাংলাদেশের গ্রুপ ম্যাচগুলো হলো যথাক্রমে ১১ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়া, ১৪ সেপ্টেম্বর জাপান ও ১৭ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। থাইল্যান্ড যাবার আগে ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর, চীন ও জাপানে গিয়ে অনেকগুলো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে কৃষ্ণাবাহিনী। থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য মূলপর্বের আসরে শীর্ষ তিন দলের মধ্যে থাকতে পারলে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিতব্য ২০১৮ সালের ফিফা অনুর্ধ-১৭ মহিলা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলতে পারবে বাংলাদেশের মেয়েরা। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ বাছাইপর্বের ‘সি’ গ্রুপ থেকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূলপর্বে ওঠে। বাছাইপর্বে ইরানকে ৩-০ গোলে, সিঙ্গাপুরকে ৫-০, কিরগিজস্তানকে ১০-০, চাইনিজ তাইপেকে ৪-২ এবং আরব আমিরাতকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল কৃষ্ণারা। থাইভূমিতে রওনা হবার আগে বৃহস্পতিবার এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বাফুফে ভবনে। এতে উপস্থিত বাফুফে সদস্য ও ফিফা কাউন্সিল ও বাফুফে এবং মহিলা ফুটবল কমিটির সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘গত এক বছর ধরে মেয়েরা নিবিড় প্রশিক্ষণ নিয়ে আসছে। ফিজিক্যালি, মেন্টালি, ফুড, চিকিৎসা, প্র্যাকটিস ম্যাচ ... সবই করানো হয়েছে। দলকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসার মূল কৃতিত্ব বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের। আমরা পড়েছি ডেথ গ্রুপে। প্রতিটি ম্যাচই জিতবোÑ এটা বলার দুঃসাহস নেই। তবে মেয়েরা লড়াই করবে এবং ইতিবাচক খেলবে, এটাই তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা। সেরা তিন দলের মধ্যে থেকে কোয়ালিফাই করতে না পারলেও কোন দুঃখ পাব না। বরং এই দলটাকে আগামীতে আরও বেশি নার্সিং ও প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা করব। মেয়েদের দলটাকে আরও বেশি এগিয়ে নেয়ার জন্য স্পন্সরদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে মিডিয়ার সাহায্য কামনা করছি।’ মহিলা দলের পৃষ্ঠপোষক ওয়ালটনের অপারেটিভ ডিরেক্টর এ্যান্ড হেড অব ডিপার্টমেন্ট (স্পোর্টস এ্যান্ড ওয়েলফেয়ার) এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন) বলেন, ‘অ-১৬ মহিলা দল এরকম বড়মাপের একটি টুর্নামেন্ট খেলতে যাবে এজন্য তারা এখানে সমবেত হয়েছে। আজকের এই দিনটা সবার জন্য আনন্দের। এই আসরে মেয়েরা যদি কোয়ালিফাই করে অ-১৭ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তাহলে ওয়ালটন গ্রুপ এই দলের প্রত্যেককে একটি করে ফ্রিজ উপহার দেবে।’ দলের অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকারের মন্তব্য, ‘গত এক বছর আমরা অনেক হার্ডওয়ার্ক করেছি। অনেকগুলো প্রীতি ম্যাচ খেলেছি। টুকটাক যেসব ভুল হয়েছে সেগুলো কাটিয়ে ওঠতে কাজ করেছি। এই আসরে যেন দল ভাল খেলে সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ঠিকই। তাদের বিপক্ষে খেলতে নামলে একটু ভয় করবে। কিন্তু ভয়কে অবশ্যই জয় করতে হবে।’ দলের হেড কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘গত বছর ঘরের মাঠে কোয়ালিফাই করেই আমরা কঠিন পরীক্ষায় পড়েছিলাম। তার ওপর ডেথগ্রুপ। গত এক বছরে আমাদের দলের উন্নতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে ফিটনেসের ক্ষেত্রে। আগে মেয়েরা ১২ মিনিটে ২৭০০ মিটার দৌড়াতে পারতো। এখন তারা দৌড়াতে পারে ৩১০০-৩৫০০ মিটার। অথচ এর আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মানদ- হচ্ছে ৩০০০+ মিটার। গোলকিপিং পজিশন নিয়ে আগে কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও এখন তার উত্তরণ হয়েছে অনেক। মূলপর্বে খেলতে যাওয়ার কারণে অন্য দেশগুলো আমাদের সম্পর্কে জেনেছে। খেলায় হারজিত থাকবেই। তবে আমরা কম্পিটিটিভ ফুটবলই খেলব। চেষ্টা করব সমানতালে খেলার। মোটকথা, সর্বস্ব উজাড় করেই খেলব। ম্যাচ বাই ম্যাচ প্রতিপক্ষ দলের শক্তিমত্তা বুঝেই ফর্মেশন সাজাব।’ এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাফুফে সদস্য ও বাংলাদেশ অ-১৬ মহিলা জাতীয় ফুটবল দলের টিম লিডার আমিরুল ইসলাম বাবু, বাফুফে সদস্য ও বাংলাদেশ অ-১৬ মহিলা জাতীয় ফুটবল দলের টিম ম্যানেজার জাকির হোসেন চৌধুরী, বাফুফের টেকনিক্যাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলি, বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, স্পন্সর প্রতিষ্ঠান উজালার বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার নাজনীন আফরোজ, দলের সহকারী কোচ মাহাবুবুর রহমান লিটু প্রমুখ। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১০ ও ২০১৪ সালে সেমিফাইনাল খেলে, ২০১৬ সালে ফাইনাল খেলে, এছাড়া সাউথ এশিয়ান গেমসে ২০১০ ও ২০১৬ সালে করায়ত্ত করে তাম্রপদক। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান ১১০ নম্বরে (১৭৭ দেশের মধ্যে), এশিয়ার মধ্যে ২৪ নম্বরে ও সাফ অঞ্চলে ৩ নম্বরে। তবে জাতীয় দলের চেয়ে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে বয়সভিত্তিক জাতীয় দলগুলো। ‘এফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়নশিপে’র শিরোপা জিতেছে দু’বার। ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ কোয়ালিফায়ার্সে’ ‘সি’ গ্রুপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূলপর্বে উন্নীত হয় বাংলাদেশ। এখন দেখার বিষয় থাইল্যান্ডে কেমন করে কৃষ্ণারা। থাইভূমিতে কৃষ্ণাদের জয়ের তৃষ্ণা মিটবে কী?
×