ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ার হুঁশিয়ারি জাতিসংঘের

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করছে মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করছে মিয়ানমার

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রচেষ্টা আটকাতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়েছে মিয়ানমার। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থুং তুন রাজধানী নেপিডোতে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রোহিঙ্গা প্রশ্নে জাতিসংঘে কোন প্রস্তাব এলে তা যেন আটকে দেয়া যায়, সে জন্য নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়ার ওপর নির্ভর করছে মিয়ানমার। ইয়াহু নিউজ। চাপের মুখে রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্দশা নিয়ে ভুয়া সংবাদ ছড়ানোকেই দায়ী করেছেন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী আউং সান সুচি। সুচি বলছেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের সবাইকেই তার সরকার সুরক্ষা দিচ্ছে। একই সঙ্গে রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে প্রচুর ভুয়া তথ্য এবং ছবি ছড়ানো হচ্ছে। এগুলো সন্ত্রাসীদের স্বার্থ রক্ষা করছে। ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্য। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় সুচি রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রথম মন্তব্যে এসব কথা বলেন। উপপ্রধানমন্ত্রীর টুইটারে পোস্ট করা নিহত রোহিঙ্গার ছবির প্রসঙ্গ টেনে সুচি দাবি করেন, ওই ছবি মিয়ানমার নয়, অন্য কোথাও তোলা। অন্যদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা দমন অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা তিন লাখে পৌঁছতে পারে বলে ধারণা করছেন জাতিসংঘ কর্মকর্তারা। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর বাংলাদেশ মুখপাত্র দ্বীপায়ন ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘ কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন এক লাখ ২০ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে আসতে পারে। এখন তারা মনে করছেন এ সংখ্যা তিন লাখে পৌঁছতে পারে। তারা আসছে অপুষ্টির শিকার হয়ে, সম্ভবত এক মাসেরও বেশি সময় তারা প্রয়োজনমতো খাবার পায় না। তাদের ক্ষুধার্ত ও ভীতসন্ত্রস্ত দেখাচ্ছে। শরণার্থীরা নৌকা ছাড়াও স্থল সীমান্তের অনেক জায়গা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে জানান দ্বীপায়ন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ জানিয়ে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিষয়টিকে আর অগ্রাহ্য করা যায় না। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, মিয়ানমার সঙ্কটের মূল কারণ উদ্ঘাটন করে কাযর্কর সমাধানের উদ্যোগ এখনই নেয়া প্রয়োজন। এ নিয়ে আর দেরি করার কোন সুযোগ নেই। এখন রাখাইন রাজ্যের মুসলিমদের হয় জাতীয়তা অথবা এখনকার জন্য কমপক্ষে আইনগত স্বীকৃতি দেয়া জরুরী, যেন তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা, শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগসহ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়। এদিকে জাতিসংঘের আঞ্চলিক সংস্থাগুলো আগামী তিন মাসের জন্য বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ১৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার সাহায্যের অনুরোধ জানিয়েছে। গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যা¤েপ রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪শ’ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ঢলের মধ্যেই বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের অংশে বিস্ফোরণ ও গুলির ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তের একাংশ জুড়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভূমিমাইন বসানোরও খবর এসেছে। সেনাবাহিনীর সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে পালানো রোহিঙ্গারা যেন আর মিয়ানমারে ফিরতে না পারে সেজন্যই মাইন পাতা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×