ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ কোরবানির ঈদ ২০১৭

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ কোরবানির ঈদ ২০১৭

এবারকার ঈদ-উল-আযহা বা কোরবানির ঈদ পালিত হলো দারুণ ভারাক্রান্ত অন্তর নিয়ে। অহিংস বাদী হিসেবে পরিচিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মিয়ানমারের তথা বার্মা দেশের নিষ্ঠুর সামরিক জান্তা সেদেশের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্মম অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়ে তাদের ঘরবাড়ী ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছে। রোহিঙ্গা নারীদের ইজ্জত হরণ করে হত্যা করেছে। দলে দলে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ জান বাঁচানোর তাগিদে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। নাফ নদীতে বহু নারীর গুলিবিদ্ধ লাশ ভেসে উঠেছে। এসব দেখে মানবতা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। রোহিঙ্গাদের এই করুণ হাল থেকে উদ্ধার করতে অবিলম্বে বিশ্ব মানবতা সোচ্চার হবে এটা সবার কাম্য। শান্তির জন্য নোবেল পদক বিজয়িনী সুচি কি শান্তিকে ভুলে গেছেন? কোরবানি ২০১৭ আমাদের এই ভূখ-ে এসেছিল ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হতে। রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা আমাদের কাঁদাচ্ছে। আমরা চাই রোহিঙ্গারা তাদেরই ছেড়ে আসা ঘর-বাড়িতে নির্বিঘেœ ফিরে যাক, তারা নাগারিকত্ব ফিরে পাক। মিয়ানমার সরকারের বোধোদয় হোক। কোরবানির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রথম কোরবানির ঘটনা ঘটে মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আলায়হিস সালামের দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের মধ্যে এক নারী আকলিমাকে বিয়ে করা নিয়ে তুমুল বিরোধের সৃষ্টি হলে হযরত আদম (আ.) দুই পুত্রকে কোরবানি দিতে বললেন। যার কোরবানি কবুল হবে তার সঙ্গে আকলিমার শাদি হবে। হাবিল একটা হৃষ্টপুষ্ট দুম্বা এবং কাবিল বাছাই করা কিছু ফসলাদি পাহাড়ের চূড়ায় কোরবানির নিয়তে রেখে আসলেন। আসমান থেকে বজ্রপাত হয়ে হাবিলের রেখে আসা দুম্বাটি পুড়ে ছাই হয়ে গেল, এতে প্রমাণিত হলো আল্লাহ ঐ কোরবানি কবুল করেছেন। এতে কাবিল হাবিলকে হত্যা করল। মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম হত্যাকা- এটিই। কোরবানির যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের জন্য ঈদ-উল-আযহা উদযাপিত হয় সেটা পিতা কর্তৃক পুত্রের যবেহ করার ঘটনাকে স্মরণ করে। তওহীদবাদের প্রতিষ্ঠাতা হজ প্রবর্তনকারী আল্লাহর রসুল হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস সালাম স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার উদ্দেশ্যে পুত্র ইসমাঈল আলায়হিস সালামকে শোয়ায়ে তাঁর গলায় ছুরি চালিয়ে যবেহ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। এটা ছিল ইব্রাহীম আলায়হিস সালামের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস সালাম আশি উর্ধ বয়সেও নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি একটি পুত্রের জন্য আল্লাহ্র নিকট দু’আ করেন। কোরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে (ইব্রাহীম বললো) হে আমার রব। আমাকে একটি সৎকর্মপরায়ন সন্তান দান করুন। অতঃপর আমি (আল্লাহ) তাকে এক স্থির বুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর সে (ইসমাইল) পিতার সঙ্গে কাজ করবার মতো বয়সে উপনীত হলো তখন ইব্রাহীম বলল বেটা আমি স্বপ্নে দেখি যে আমি তোমাকে যবেহ করছি এ ব্যাপারে তুমি কি বল তখন পুত্র বলেন, আপনি যা স্বপ্নে আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। যখন তারা দু’জনের আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং ইব্রাহীম তার পুত্রকে কাত করে শোয়ালেন তখন আমি (আল্লাহর) আহ্বান করে বললাম হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্ন সত্যে পরিণত করলে। এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়নদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে মুক্ত করলাম এক কোরবানির বিনিময়ে। আমি এটা পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। (সুরা সাফ্ ফাত: আয়াত ১০০-১০৮)। হযরত ইব্রাহীম পুত্রের বিনিময়ে দুম্বা কোরবানি করেছিলেন সেই কোরবানির স্মরণে প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ কোরবানির ঈদ পালিত হয়ে আসছে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর ধরে। এই কোরবানি পাশবিকতাকে হত্যা করবার শক্তি সঞ্চারিত করে। ২০১৭ তে রোহিঙ্গার মুসলিম নর-নারীদের ওপর যে জুলুম নির্যাতন চলছে তার অবসান ঘটুক এটাই আমাদের কাম্য। লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ উপদেষ্টা ইনস্টিউিট অব হযরত মুহম্মদ (সা.)
×