ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মঘাতী জঙ্গী আস্তানা

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আত্মঘাতী জঙ্গী আস্তানা

র‌্যাব কর্তৃক রাজধানীর মিরপুরের একটি জঙ্গী আস্তানার ২৪ ঘণ্টা অবরোধের পরিসমাপ্তি ঘটেছে আত্মঘাতী রাসায়নিক বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। এই ঘটনায় দুর্ধর্ষ জঙ্গী নেতা আবদুল্লাহসহ তার পরিবারের ৭ সদস্য নিহত হয়েছে বলে খবর আছে। পরে বাড়িটিতে অভিযান চালিয়ে বিপুল বিস্ফোরকদ্রব্য ও জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়। এই জঙ্গী পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বসবাস করে আসছিল। এর একদিন আগে র‌্যাব টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় অভিযান চালিয়ে দুই জঙ্গী সহোদরকে আটক করে। সেখান থেকেও বিপুল বিস্ফোরক, দেশীয় অস্ত্র, জিহাদী বইপত্র এমনকি জঙ্গী কাজে ব্যবহারযোগ্য ড্রোন উদ্ধার করা হয়। পরে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতেই র‌্যাব অভিযান চালায় রাজধানীর মিরপুরের জঙ্গী আস্তানায়। পুলিশ র‌্যাব কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সোয়াটসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত নজরদারির পরও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, জঙ্গী তৎপরতা কমছে না দেশে। বরং জঙ্গীরা গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে রাজধানীসহ সারা দেশে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। পুলিশী ভাষ্যমতে, জঙ্গীরা অসংগঠিত ও দুর্বল হয়ে এলেও নব্য জেএমবি নামে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হামলা ও নাশকতার পাঁয়তারা করছে। মিরপুর ও এলেঙ্গার ঘটনাটি এরই একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ। তার মানে দেশ থেকে জঙ্গী তৎপরতা একেবারে নির্মূল হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও তা স্বীকার করেছেন। সরকার ইতোমধ্যে আনসার আল ইসলামসহ কয়েকটি জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জঙ্গীদের হাতবোমা, অস্ত্রশস্ত্র, জিহাদী বইসহ ধরাও হচ্ছে। গোলাগুলিতে নিহত ও আহত হওয়ার খবরও আছে। এত কিছুর পরও তাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি ও জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুখ্যাত জামায়াত-শিবির হানাদার পাকিস্তান সেনাবহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মাধ্যমে প্রসার ঘটায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। তবে আশার কথা এই যে, এ দেশের মাটিতে তা কখনই শিকড় গেঁড়ে বসতে পারেনি এবং জনসমর্থন পায়নি। ফলে দেশী-বিদেশী গডফাদারসহ আন্তর্জাতিক সহায়তায় সময়ে সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ব্যর্থ হয়েছে চূড়ান্তভাবে। গুলশান, শোলাকিয়া ও অন্যান্য স্থানে ছোট-বড় কয়েকটি হামলার পর এদেশীয় জঙ্গীদের সঙ্গে আইএস, আল কায়েদা, আলশামস, জইশ-ই-মোহাম্মদ, তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ ও মদদের কথা দেশে-বিদেশে উচ্চারিত হলেও সেসব কখনই প্রমাণিত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। তবু এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও বেশ দক্ষ। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদা সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। টঙ্গী ও কুমিল্লায় জনপ্রতিরোধের বিষয়টি লক্ষণীয়। দেশ যদি আধুনিক শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে অগ্রসর হতে পারে, তাহলে এমনিতেই জঙ্গীবাদ নির্মূল হতে বাধ্য। সর্বোপরি নব্য জেএমবিসহ নামে-বেনামে সংগঠিত যে কোন জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে অবিলম্বে।
×