ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী...

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী...

হুঙ্কার উঠছে চারদিকে। হাঁকডাক শোনা যায় সর্বত্র। এই বুঝি বেজে উঠছে কাড়া নাকাড়া। কোথাও কোথাও পড়ছে ছড়িয়ে বোমা বারুদের গন্ধ। নিনাদিত হচ্ছে হুমকি-ধমকির উচ্চকণ্ঠ। কলহ আর নিন্দামন্দর ধ্বনি প্রকম্পিত হচ্ছে দেশে দেশে। ভয়াবহতা আর বীভৎসতার দিনগুলো ফিরিয়ে আনার এক ক্লান্তিকর প্রচেষ্টায় মত্ত যুদ্ধবাজরা। বিস্ফোরণের শব্দ শোনাতে তারা প্রস্তুত প্রায়। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ব কাঁপিয়ে হাইড্রোজেন বোমার বিপজ্জনক বিস্ফোরণ যেন ধ্বংসের গর্জন হানছে। পৃথিবী আজ পরমাণু অস্ত্রের মুখোমুখি। পারমাণবিক অস্ত্রধারীদের উন্মাদনার মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। শক্তিমত্তার পরীক্ষা দিতে কেউ কেউ নেমে পড়েছে অঘোষিত যুদ্ধের মাঠে। বৃহৎ শক্তির হুমকি যদি কার্যকর হয়, তবে বিশ্বের ধ্বংস অনিবার্য। যুদ্ধ মানে শুধু শত্রু শত্রু খেলা নয়। যুদ্ধ মানেই মৃত্যু, ধ্বংস আর পোড়া গন্ধের বীভৎস বিস্তার। একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষে এসেও বিশ্বজুড়ে হিংসা, হানাহানি, গোলাগুলি, গণহত্যা বন্ধ হয়নি। সর্বত্র যেন যুদ্ধের সাজ সাজ রব। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বারুদের গন্ধ এখনও ভেসে আসছে। লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুকে বরণ করেছে যুদ্ধবাজদের নির্দয় লড়াইয়ে। ঘরবাড়ি ছেড়ে কোটি কোটি মানুষ শরণার্থী জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছে। এখনও শরণার্থী হয়ে নিজ বাসভূম ছেড়ে যেতে হচ্ছে। অসহায়, নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরছে দেশে দেশে বন্দরে, শত মরু কন্দরে। যুদ্ধের বিপরীতে শান্তির বাতাস বহে না কোথাও। যুদ্ধবিমুখ দেশ ও জাতিকেও জড়িয়ে যেতে হচ্ছে বারুদের আবরণে, মৃত্যুর উপত্যকায়। আক্রমণাত্মক এবং ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। দেশ-মহাদেশজুড়ে কেবলই কানামাছি কেবলই অন্ধকার ঘন হচ্ছে। মানুষের বাঁচার অধিকার হরণ করা হচ্ছে। যেমন বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব হরণ করেই স্থিত নয়; তাদের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং গণহত্যা চালিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করছে। বিশ্ববাসীর নিন্দায় তাদের কিছুতেই কিছু যায় আসে না বলেই মিয়ানমার ক্রমশ হিংস্র হয়ে উঠছে। একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে তারা যে পথ বেছে নিয়েছে, তা বর্বরতারই নামান্তর। মানবতা সেখানে ভূলুণ্ঠিত। জাতিসংঘও পারছে না তাদের রেশ টেনে ধরতে। ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়াজুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী ন্যাটো বাহিনী এক দশকের বেশি সময় ধরে যে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলছে, তা বিশ্বের শান্তি, স্বস্তিকে উচ্ছন্নে ফেলেছে। অস্ত্রের ঝঙ্কারে যুদ্ধবাজরা প্রাণ খুঁজে পেয়েছে বলেই সেসব দেশের সাধারণ মানুষ বিপন্নতায় আবিষ্ট। তাদের জীবনে ধ্বংসের বারতা শুধুই ডাকে। আর এই সবের মধ্যে জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছে যুদ্ধবাজরাই। ধর্মীয় জঙ্গীবাদের বিস্তার এমনই ঘটিয়েছে যেÑ তারা নিজেরাই আজ আক্রান্ত তাদের সৃষ্ট দানবের নির্মম, নিষ্ঠুর গণহত্যাযজ্ঞে। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবাজ নেতারা অস্ত্র ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করার জন্য আরও দেশকে যুদ্ধের দিকে টেনে নিতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এদের হুমকির মুখে উত্তর কোরিয়া আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিককালের মধ্যে সব থেকে আধুনিক শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা; যা বিশ্বমানবের জন্য ভয় ও আতঙ্কের অবশ্যই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন এমনভাবে যেন, পাল্টা আক্রমণ ঘটাতে পিছপা হবেন না। সে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে কি না, তা ভেবে দেখছেন ট্রাম্প। উত্তর কোরিয়ার যে কোন হামলার জবাব দিতে তৈরি তাদের সেনাবাহিনী। মনে হয়, পরমাণু যুদ্ধ বুঝি অত্যাসন্ন। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন মনে করেন কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান যে অবস্থান তাতে বিশ্বে বিপর্যয় নেমে আসবে। যুদ্ধ সমস্যা সমাধানের পথ নয়। তাই পুতিন বলেছেন, স্পর্শকাতর সমস্যাগুলোর সমাধানে কূটনীতিই হলো সবচেয়ে ভাল পথ। পশ্চিমা হস্তক্ষেপ ইরাককে ধ্বংস করেছে। সিরিয়াকেও ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। কোরিয়া যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তবে আত্মরক্ষার্থে সে ধ্বংসের পথে যেতে বাধ্য। বাংলাদেশ জানে যুদ্ধের ভয়াবহতা। পাকিস্তানী হানাদারদের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ মোকাবেলা করেই তবে দেশটি স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশ যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির বার্তাই শোনাতে চায়। হিংসায় উন্মত্ত বিশ্বকে শান্তির বাণী শোনাতে চায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ। যুদ্ধমুক্ত বিশ্ব চির জাগরূক থাক- এটাই প্রত্যাশা।
×