ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনৈতিক তৎপরতায় সরকার ব্যর্থ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনৈতিক তৎপরতায় সরকার ব্যর্থ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক তৎপরতায় ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১০ম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুটি জাতিসংঘে তুলে ধরতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ফখরুল বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সে দেশের সামরিক বাহিনী নির্যাতন চালাচ্ছে। এ ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্ক উদ্বেগ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ছুটে আসছেন। কিন্তু আমাদের সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি সম্মানজনক সমাধানে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ বিষয়ে আর চুপ থাকার সুযোগ নেই। ফখরুল বলেন, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা এখন বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে দেশে সামরিক অভিযানে নিরীহ নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। বাঁচার তাগিদে যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসছে, মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয়া যেমন বাংলাদেশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তেমনি দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়াও সরকারের দায়িত্ব। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এক-এগারোতে তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখনও ক্ষমতাসীনরা সুপরিকল্পিতভাবে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কারণ, তারেক রহমানকে তারা ভয় পায়। কিন্তু তারেক রহমানের অন্যায়ের কোন কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। তিনি বলেন, এ সরকার আরেকটি একদলীয় নির্বাচন করতে চায়। তাই দেশকে বিরোধী মতশূন্য করতে বিএনপিকে নির্মূল করার ষড়যন্ত্র করছে। এর মাধ্যমে তারা আরেকটি ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, এ দেশের মানুষ আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করতে দেবে না। আগামী নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই বর্তমান সরকার জনগণকে সুশাসন ও জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে এখন দুই বছরের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধও নিরাপদ নয়। খুন, গুম, ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক’দিন আগে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান নিখোঁজ হয়ে গেছেন। সরকারের জবাবদিহিতা নেই বলে এ ধরনের অন্যায় ঘটনা ঘটেই চলেছে। নতুন করে জঙ্গী আস্তানায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ১০ বছরের শিশুকেও মেরে ফেলা হচ্ছে। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা তুলে ধরে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নয়, ভাঙ্গা রাস্তাঘাটের মতো আপনাদেরই বেহাল অবস্থা। সেজন্য বিচার বিভাগ ও বিচারপতিদের অপমান করে কথা বলেন। আর আমাদের জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন দেখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাছিদ আঞ্জুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ প্রমুখ। এদিকে বুধবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিকে হরণ করে দেশের বৃহত্তম ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করতে প্রায় প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং তাদের নামে নতুন নতুন কাল্পনিক ও উদ্ভট মামলা দায়েরের মাধ্যমে নাজেহাল করছে। এ ধরনের অপকর্মের উদ্দেশ্যই হচ্ছে রাষ্ট্রক্ষমতা হাতছাড়া না করা। মির্জা ফখরুল বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর শেরপুর সদর উপজেলা বিএনপি আয়োজিত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবসের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের লোকদের হামলা এবং পরবর্তীতে মামলা দায়ের করে। আমরা এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই শেরপুর সদর উপজেলা আয়োজিত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবসের আলোচনা সভায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ হামলা চালিয়ে অনুষ্ঠানে ভাংচুর করে এবং অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করে। ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা বিএনপির সাধারণ স¤পাদক হযরত আলীসহ ২৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। অবিলম্বে এ মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।
×