ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারপ্রাপ্ত ঢাবি ভিসির দায়িত্ব নিলেন ড. আখতারুজ্জামান

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ভারপ্রাপ্ত ঢাবি ভিসির দায়িত্ব নিলেন ড. আখতারুজ্জামান

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এদিকে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার অভিযোগে প্রক্টরসহ ১১ আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বজায় রেখে সবাইকে কাজ করার অনুরোধ জানিয়ে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বুধবার সকালে উপাচার্যের কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোঃ এনামউজ্জামানের কাছ থেকে আখতারুজ্জামান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নতুন ভিসিকে এ সময় ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সহকর্মীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। দায়িত্ব গ্রহণকালে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সবার সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তবে আগের ভিসির কাছ থেকে নতুন ভিসির দায়িত্ব বুঝে নেয়ার যে ঐতিহ্য সেটি মানা হয়নি এবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতি অনুযায়ী, বিদায়ী ও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যের উপস্থিতিতে দায়িত্ব হস্তান্তর হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা অবস্থায় অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের অনুপস্থিতিতেই দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, বিদায়ী উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু সময় সমন্বয় হয়নি। তা ছাড়া নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে অবিলম্বে আদেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ সাময়িক দায়িত্ব। যে কোন সময় আমাকে অন্য চেয়ারে যেতে হতে পারে। আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ভাল কাজের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য সমুন্নত রাখা আমার দায়িত্ব। গত সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে সাময়িকভাবে বর্তমান উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানকে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মোঃ আবদুল হামিদ। অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকর করতে হবে। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ১১ (২) ধারা অনুযায়ী এই নিয়োগ দিয়েছেন। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি ছুটি, অসুস্থতা, পদত্যাগ বা অন্য কোন কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হয়, তবে আচার্য তা পূরণ করবেন। এদিকে, গত ২৪ আগস্ট উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ হয়। গত ১৬ জুলাই এক চিঠিতে সিনেট সদস্যদের জানানো হয়, ২৯ জুলাই সিনেটের বিশেষ অধিবেশনের মাধ্যমে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হবে। এই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২৪ জুলাই ১৫ শিক্ষক ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট ওই চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করে। পরে চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ২৯ জুলাই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হয়। সেখানে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ মোঃ কামাল উদ্দীন ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন আবদুল আজিজকে নিয়ে তিন সদস্যের উপাচার্য প্যানেল তৈরি হয়। পরে ৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচনের জন্য মনোনীত তিন সদস্যের প্যানেলের পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত করে রিট আবেদনটি চার সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয় আপীল বিভাগ। আদেশে আপীল বিভাগ বলে, রিট আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তার দায়িত্ব পালন করে যাবেন। আগামী ৩ অক্টোবর রিটের পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারিত আছে। উপাচার্যের স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ হলেও আপীল বিভাগের ওই আদেশবলে ২৪ আগস্টের পর থেকে আরেফিন সিদ্দিক দায়িত্ব পালন করছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দেয়া ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রক্টরসহ ১১ হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগপত্র প্রদান ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ ১১ আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। বুধবার প্রক্টরসহ ১১ হলের প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর সংবলিত এই পদত্যাগপত্রে বলা হয়, ‘আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টর গত ৪/৯/১৭ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রদত্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ-১৯৭৩ এর লংঘন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীর মিথ্যাচার ও দ্বৈতাচারের প্রতিবাদে হলের ও প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করছি’। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙঙ্খলা বজায় রেখে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি। তিনি সবাইকে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য অনুরোধ করেছেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান ১৯৬৪ সালের ১ জুলাই বরগুনা জেলার আজিজাবাদ উপজেলার কালিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বি এ অনার্স ও এম এ পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকার করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা ইন পার্সিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ বিষয়ক পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করেন। তিনি ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন কলেজের ফুলব্রাইট স্কলার এবং যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৫ সালের ১৫ জানুয়ারি সহকারী অধ্যাপক, ২০০০ সালের ২ জানুয়ারি সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০০৪ সালে তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কবি জসীম উদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৯ ও ২০১১ সালে সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হন। দেশ-বিদেশে প্রকাশিত বিভিন্ন জার্নালে আর ৪২ গবেষণামূলক প্রবন্ধ রয়েছে।
×