ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় কাউন্সিলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

দুর্যোগে ক্ষতি এড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দুর্যোগে ক্ষতি এড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি এড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি ভাল থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম রাখা সম্ভব হয়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। আমাদের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গেই বসবাস করতে হবে। কাজেই সঠিক পরিকল্পনা থাকলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখা সম্ভব। আর আমরা যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সক্ষমতা রাখি। বুধবার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের বৈঠকে এ নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করে আরও বলেন, যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় তার সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। যখনই কোন দুর্যোগের খবর পাওয়া গেছে তখনই তারা সেখানে ছুটে গেছেন এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ’৯১’র ঘূর্ণিঝড়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, ক্ষমতাসীন বিএনপি সে সময় দুর্যোগের খবর পর্যন্ত রাখার প্রয়োজন মনে করেনি। এবারের বন্যায় সরকারের দুর্যোগকালীন প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল বলেই কেউ না খেয়ে মরেনি। সরকারের সকল দফতরের পাশাপাশি তার দলের নেতাকর্মীরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে বলেই দুর্গত মানুষের কাছে খাদ্য, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ত্রাণসামগ্রী যথাসময়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত রেখে জনগণের ভোগান্তি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সম্ভাব্য সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকার খাদ্য আমদানি করছে। দেশের পার্বত্য অঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী, দমকলবাহিনী, পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্থা সেখান থেকে দুর্গত জনগণকে উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাবার সঙ্গে সঙ্গে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সদস্য এবং তার দলের নেতাকর্মীরা দিনরাত মাঠে রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এ সময় সকলকে একযোগে কাজ করে যাবারও আহবান জানান। সরকারপ্রধান আরও বলেন, বন্যা ঘর-বাড়ি ও ফসলের ক্ষতি করে কৃষকের জন্য দুর্ভোগ বয়ে আনলেও এটি সঙ্গে করে অনেক পলি মাটিও বয়ে আনে, যা জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। উপকূলীয় জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা প্রতিরোধে বঙ্গবন্ধুর ‘মুজিব কেল্লা’ তৈরির কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এক হাজার সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন; যার ধারবাহিকতায় বর্তমান সরকার বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধে বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ১৯৯৮ সালে এক দীর্ঘমেয়াদী বন্যা প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছিল। যেখানে দেশের ৭০ শতাংশ ভূখ- পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল এবং অন্তত ২ কোটি মানুষ মারা যাবার আশঙঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তা অত্যন্ত সফলভাবেই মোবাবেলা করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ এখন যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করেছে। জাতির পিতা বন্যা মোবাবেলায় ৪৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন আর এই সরকার ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক গড়ে তুলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন এবং কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এ্যাডমিরাল আবু মোজাফফর মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
×