ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন মুস্তাফিজ-মিরাজ

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন মুস্তাফিজ-মিরাজ

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ অবশেষে বৃষ্টি এলো যেন আশীর্বাদ হয়ে। সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে স্বাগতিক বাংলাদেশের চলমান দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয়দিনের ৩৬ ওভার খেলা নষ্ট হলো। কিন্তু যে ৫৪ ওভার ব্যাট করল অসিরা তাতে ৭২ রানের লিড নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানেই চলে গেছে অস্ট্রেলিয়া। আগেরদিন ২ উইকেটে ২২৫ রান করার পর শঙ্কা তৈরি হয়েছিল অনেক বড় সংগ্রহ গড়ে স্বাগতিকদের চরম চাপের মুখে ফেলবে তারা। এ কারণেই ক্রিকেটপ্রেমীরা ও টাইগাররা বৃষ্টিকে আশীর্বাদই মনে করেছিলেন। তারপরও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশী বোলারদের দারুণ প্রত্যাবর্তনে অস্ট্রেলিয়া চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয়দিন শেষ করেছে ৯ উইকেটে ৩৭৭ রানে। যার পেছনে তৃতীয় উইকেটে ডেভিড ওয়ার্নার ও পিটার হ্যান্ডসকম্বের ১৫২ রানের জুটিই বড় অবদান রেখেছে। টানা দুই টেস্টে শতক হাঁকানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছেন ওয়ার্নার। তবে পেসার মুস্তাফিজুর রহমান তার ২২তম জন্মদিনে বল হাতে জ্বলে উঠে ওয়ার্নারের উইকেট শিকারের পাশাপাশি সবমিলিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন। তার সঙ্গে ঘূর্ণি বলে ম্যাজিক দেখিয়ে ডানহাতি অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজও ৩ উইকেট শিকার করে। এ কারণেই দিনশেষে পিছিয়ে থাকলেও সাগরিকায় দলের জয় কিংবা ড্র কোনটারই সম্ভাবনা কম দেখছেন না মুস্তাফিজ। যদিও ওয়ার্নার তুষ্টি নিয়ে বলেছেন আক্রমণাত্মক মনোভাব থেকে বদলে যাওয়া বাংলাদেশই এখন কিছুটা চাপে রয়েছে। দ্বিতীয়দিনটা ছিল ভয়ানক এক অগ্নিপরীক্ষার। বাংলাদেশের বোলিংয়ে অন্যতম শক্তির জায়গা স্পিন বিন্দুমাত্র কার্যকর হয়নি। সেই সুযোগে ২ উইকেটে ২২৫ রান তুলে বড় একটি সংগ্রহের পথে এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তৃতীয়দিনে ম্যাচের আগেই বৃষ্টি- ফলাফল মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত এবং এরপর আরও আধাঘণ্টার বেশি খেলা না হওয়া। খেলা শুরুর পর অবশ্য পুরনো বলেই আক্রমণ শুরু করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। অথচ বৃষ্টিতে আর্দ্র উইকেটে পেস আক্রমণ কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু মুস্তাফিজকে আনা যায়নি। শুরু করেছিলেন সাকিব-মিরাজ। তারা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। ৮৮ রান নিয়ে অপরাজিত থাকা ওয়ার্নার ও ৬৯ রানে উইকেটে থাকা হ্যান্ডসকম্ব আগেরদিনের ধারাবাহিকতা রেখে খেলে গেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। তবে ১৫২ রানের রেকর্ড জুটি গড়ার পর দু’জনের ভুল বোঝাবুঝিটাই বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনে। দিনের দশম ওভারে ৮২ রান করে সাজঘরে ফেরেন হ্যান্ডসকম্ব রানআউট হয়ে। কিন্তু ওয়ার্নার ততোক্ষণে শতকের কাছাকাছি। সেটা পেতে তাকে ১৬ বল অপেক্ষা করিয়েছেন ডানহাতি অনিয়মিত অফস্পিনার নাসির হোসেন। ওয়ার্নারকে টানা দুই ওভার মেডেন দেন তিনি। অবশেষে নাসিরকেই চার হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ধীরতম শতকটা পেয়ে যান ওয়ার্নার। এরপরই নতুন বল হাতে আক্রমণে আসেন মুস্তাফিজ এবং শুরু থেকেই চমকে দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও ওয়ার্নারকে। নিজের মোক্ষম অস্ত্র কাটার নয়, দুর্দান্ত কিছু বাউন্সারে এ দুই ব্যাটসম্যানকে ভুগিয়েছেন তিনি। তবে ম্যাক্সওয়েল সহজ ক্যাচ দিয়েও রক্ষা পেয়েছেন মিরাজের হাত ফসকে যাওয়ায়। সেই মিরাজ নিজের ফিরতি বলে তালুবন্দী করতে পারেননি পরবর্তীতে হিলটন কাটরাইটকেও। তবে তিনিই পরে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাকে। ফিরিয়ে দিয়েছেন কাটরাইটকে এবং ১০ রানে জীবন পাওয়া ম্যাক্সওয়েলকে। এর আগেই অস্ট্রেলিয়ার লিড অনেক বড় হওয়ার আগেই তীব্র আঘাতটা হেনেছিলেন মুস্তাফিজ। ইনিংসের ৮৮তম ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন ২৩৪ বলে মাত্র ৭ চারে ১২৩ রান করা চরম ধৈর্যশীল ওয়ার্নারকে। ক্যারিয়ারের ২০ শতকের মধ্যে এটিই তার সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড। সেই মুস্তাফিজ টানা ৫ ওভার অসি ব্যাটিং অর্ডারে কাঁপন ধরিয়ে দিলেও আশ্চর্যজনকভাবে তাকে আর আক্রমণে আনেননি অধিনায়ক মুশফিক। কিন্তু ইনিংসের ১০৬তম ওভারে ফিরেই আবার আঘাত হেনে তিনি এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন ম্যাথু ওয়েডকে। ওয়ার্নার ফিরে যাওয়ার পর থেকেই মূলত আর বড় কোন জুটি গড়তে পারেনি অসিরা। সাকিব চলতি ইনিংসে তার আগের ৪ স্পেলে কোন প্রভাব ফেলতে না পারলেও পঞ্চম স্পেলে এসে ভয়ানক হয়ে ওঠেন। তবে তার বলেও এ্যাগার ব্যক্তিগত ৪ রানে স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান সৌম্য সরকারের বাজে ফিল্ডিংয়ের কল্যাণে। কিন্তু অবশেষে সাগরিকার উইকেটে স্পিন ধরতে শুরু করেছে সেটা বোঝা যায় মিরাজের উইকেট শিকার এবং সাকিবের বোলিং দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠার মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এ্যাগারকে বেশিদূর যেতে হয়নি। ২২ রান করে বোল্ড হয়ে যান সাকিবের বলেই। ম্যাচে প্রথম উইকেটের দেখা পান সাকিব। আলোর স্বল্পতায় অবশ্য ৬টা পর্যন্ত খেলা হওয়ার কথা থাকলেও ২০ মিনিট আগে ১৩ ওভার বাকি রেখেই সমাপ্তি টানতে হয়েছে। শেষ মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ দল মুস্তাফিজ-মিরাজের বোলিংয়ে। কিন্তু স্পিনবান্ধব হয়ে ওঠা সাগরিকার উইকেট আজ চতুর্থদিনে আরেকটি ভয়ের কারণ হয়ে গেছে বাংলাদেশের। প্রথম ইনিংসে ডানহাতি অফস্পিনার নাথান লিয়ন ৭ উইকেট শিকার করেছিলেন। এবারও তাকেই মোকাবেলা করতে হবে হঠাৎ আচরণ বদলে ফেলা উইকেটে। বাংলাদেশের লাইনআপে ৭ বাঁহাতি ব্যাটসম্যানও লিয়নের জন্য সুবিধা তৈরি করে দেবে। সবমিলিয়ে বোলাররা ঘুরে দাঁড়ালেও পরীক্ষার মধ্যেই আছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু ভালকিছুর সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন মুস্তাফিজ, ‘এখনও দুই দিন আছে। যদি আমরা খুব ভাল করতে পারি, তাহলে অসম্ভব (জয় কিংবা ড্র) কিছু না। আর একটা উইকেট নিতে হবে। আমাদের ব্যাটসম্যানরা যদি বড় টার্গেট দিতে পারে, অসম্ভব কিছু না।’ কিন্তু ওয়ার্নার বললেন, ‘আমরা এমন পরিবেশের জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম যতক্ষণ উইকেটে থাকা যায় এবং রান বাড়ানো যায়। সেটা আমরা করতে পেরেছি।’ আজ চতুর্থদিনেই সাগরিকা টেস্টের গতি প্রকৃতি নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। অসিদের ১ উইকেট হয়তো দ্রুতই তুলে নিতে পারবে টাইগাররা। কিন্তু এরপর ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জ বড় একটি লিড পেরিয়ে অসিদের জন্য একটি ভাল টার্গেট তৈরি করার।
×