ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগে রাখাইন রাজ্যে শিল্পাঞ্চল ও অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা হবে * রোহিঙ্গা বোঝাই আরও ১১ নৌকাডুবি, ৯ লাশ উদ্ধার * অনুপ্রবেশ অব্যাহত, জিরো পয়েন্টে আছে লক্ষাধিক

রোহিঙ্গা গণহত্যা, বিতাড়ন ॥ নীলনক্সা ফাঁস

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা গণহত্যা, বিতাড়ন ॥ নীলনক্সা ফাঁস

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের গণহারে হত্যা ও দেশান্তরি হতে বাধ্য করার নেপথ্যে যে নীলনক্সা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ইতোপূর্বে তৈরি করেছে তা বর্তমান আউং সান সুচি সরকারের মাধ্যমে চূড়ান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ষড়যন্ত্রের এ নীলনক্সা উদ্ঘাটন ফাঁস হয়েছে। একে একে উন্মোচিত হচ্ছে এর স্বরূপ। মোদ্দা কথায় ফাঁস হচ্ছে সকল ষড়যন্ত্র। সীমান্তের ওপার থেকে বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য মিলেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ায়ও এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমও ওপারের সূত্রসমূহের তথ্যানুযায়ী, মিয়ানমারে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগ শুরু হওয়ার পর শিল্পাঞ্চল ও অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সে দেশের সরকার রাখাইন রাজ্যকে বেছে নিয়েছে। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো সুফল আসবে বলে সামরিক জান্তার মদদপুষ্ট কথিত গণতান্ত্রিক সরকারের নীতি-নির্ধারক মহলের ধারণা। কারণ হিসেবে আরও বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথা হয়ে আছে। বহুজাতিক কোম্পানিসহ বিদেশীদের মোটা অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগ যাতে হাতছাড়া না হয় সে লক্ষ্যে রোহিঙ্গাদের হত্যা ও বিতাড়িত করে রাখাইন রাজ্যকে বিনিয়োগবান্ধব করে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েই তারা রোহিঙ্গাদের ওপর মরণ কামড় দিয়েছে। এবারের সেনা অভিযান রাখাইনকে রোহিঙ্গামুক্তকরণ অভিযান। অপরদিকে, রাখাইন রাজ্যে সে দেশের নাগরিক তথা বৌদ্ধ ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যরা রয়েছে তাদেরও সরিয়ে নেয়ার তৎপরতা শুরু হয়ে তা অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ এতই বেশি যে, তা বুধবার পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখে পৌঁছেছে। সীমান্তে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ছাড়িয়ে তা কক্সবাজার শহরাঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিস্তৃতি লাভ করছে। ষাটের দশক থেকে মূলত রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন ও গণহারে নির্যাতন শুরু হয়। এ বর্বরতা কখনও দীর্ঘস্থায়ী আবার কখনও সাময়িক হয়েছে। ’৮২ সালে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়। এখন শুরু হয়েছে সমূলে নিধন ও বিতাড়ন প্রক্রিয়া। যার কারণে প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের শঙ্কা হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে ইতোমধ্যে সরকারী বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতা বন্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রসমূহের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। অপরদিকে, এনএলডি নেত্রী আউং সান সুচি সর্বশেষ আবারও বলেছেন, রাখাইন রাজ্যের সরকারী তৎপরতা জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। উল্লেখ করা যেতে পারে, দশকের পর দশক সামরিক শাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ দেশটির ওপর বিভিন্ন শক্তিশালী দেশের অবরোধ আরোপিত ছিল। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অবরোধ প্রত্যাহার হওয়ার পর গত বছর আউং সান সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সরকার গঠন করেছে। আর অবরোধ প্রত্যাহার হওয়ায় বিশ্বের বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নজর এখন মিয়ানমারের প্রতি। ইতোমধ্যে সেখানে বহুজাতিক বহু কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। পাইপ লাইনে আছে আরও অনেকে। বর্তমান সিটওয়ে সমুদ্র বন্দরসহ (সাবেক আকিয়াব) রাখাইন রাজ্যটি বিভিন্ন সম্পদে ভরপুর। সমুদ্রে রয়েছে তেল ও গ্যাস সম্পদ। আর সমতলে রয়েছে বনজ, মৎস্যসহ আরও নানাবিধ সম্পদারাজি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত পুরো রাখাইন (সাবেক আরাকান) রাজ্যকে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগে শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সরকার। সামরিক বাহিনীর প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌথ পুঁজি বিনিয়োগে শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী বিদেশী বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ অধ্যুষিত এই রাখাইন রাজ্য। রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব ও সকল অধিকার প্রতিষ্ঠায় নানাভাবে সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। যার কারণে বিভিন্ন সময়ে সহিংসতার ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থায় বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা অবারিত করতে রাখাইন রাজ্যকে রোহিঙ্গাসহ সে দেশের নাগরিকদের সরানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সরকার। কিন্তু রোহিঙ্গারা তা মানতে নারাজ। উল্টো রাখাইন রাজ্য নিয়ে তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের দাবি জানিয়ে আসছে। ফলে ইতোপূর্বেকার সামরিক জান্তা বারে বারে হামলে পড়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারও একই পথ অনুসরণ করছে। যা ইতোপূর্বেকার বর্বরতার সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি রাখাইন রাজ্য থেকে দলে দলে রোহিঙ্গারা এখনও অনুপ্রবেশ করছে। গত ২৬ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার অঞ্চলের বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা ও স্থানীয় সূত্রসমূহ। এছাড়া লাখো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তের (মিয়ানমার) ওপারে অপেক্ষা করছে। কেউ নৌকা নিয়ে সাগরপথে টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর বস্তিতে ঢুকে পড়ছে। বিজিবি-কোস্টগার্ড সদস্যদের নজরদারি ফাঁকি দিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ অভিমুখী হওয়ার পথে বুধবার ভোরে সাগরে ডুবে গেছে রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুবোঝাই ১১টি নৌকা। বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীর মোহনায় এ ঘটনা ঘটে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত ৯ রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার হয়েছে। টেকনাফ সাবরাং ইউপি সদস্য ফজলুল হক জানিয়েছেন, বদরমোকাম এলাকার উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনার পর অনেকে সাঁতরে তীরে উঠেছে। নৌকাডুবির পর ভাসতে ভাসতে তীরে পৌঁছে যাওয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা জানায়, ডুবে যাওয়া ১১ নৌকায় থাকা শতাধিক রোহিঙ্গা এখনও নিখোঁজ রয়েছে। একেকটি নৌকায় ২৫ থেকে ৩০ জন করে রোহিঙ্গা ছিল। ধারণক্ষমতার বেশি রোহিঙ্গা নৌকাগুলোতে উঠে পড়ায় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের কবলে পড়ে এগুলো ডুবে যায়। টেকনাফ থানার ওসি মোঃ মাঈনুদ্দিন খান জানিয়েছেন, স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের ১১টি নৌকাডুবির ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। হুমকির মুখে প্রাকৃতিক পরিবেশ এদিকে, টেকনাফ থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ঢলে পরিবেশ এখন জেরবার। প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে মিয়ানমার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন কক্সবাজার পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির নেতৃবৃন্দ। সংগঠনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান ও প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন এক যুক্ত বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। ৬৮ হাজার গণস্বাক্ষর মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের জাতিগত নিধনের অভিযোগে মিয়ানমারের এস্টেট কাউন্সিলর নেত্রী আউং সান সুচি ও সেনাপ্রধান মিং অং হিলিঙ্গকে অপসারণের জন্য ৬৮ হাজার ব্যক্তির স্বাক্ষর সংবলিত একটি আবেদন আন্তর্জাতিক আদালতে পাঠানো হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দরখাস্তের জন্য ‘চিন অর্গ’ নামের সংস্থার ওয়েবসাইটে ৬৮ হাজার ৪৫৫ জনের স্বাক্ষর রয়েছে। সংস্থাটির এক বার্তায় বলা হয়েছে, তাদের কাছে প্রচুর পরিমাণ ভিডিও আছে যেগুলোতে দেখা গেছে মিয়ানমার সরকার ও বিভিন্ন উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গাদের পাশবিক নির্যাতন করছে। সাইটে আরও বলা হয়, নারী ও শিশুদের গণধর্ষণসহ বৃদ্ধ নারী-পুরুষরা গণহত্যার শিকার হয়েছে। খাল কেটে কুমির আনা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে থাকার জায়গা দেয়া খাল কেটে কুমির আনার মতো বলে মত প্রকাশ করা হয়েছে কক্সবাজার অঞ্চলের বিশেষজ্ঞ মহল সূত্রে। তাদের মতে, যারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে জায়গা দেয়ার কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, আবেগ দিয়ে দেশ চলে না। রোহিঙ্গারা নিজ দেশে যাতে নিরাপত্তা নিয়ে থাকতে পারে, সেটার জন্য আওয়াজ তুলুন, এই দেশে এনে আশ্রয় দেয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা ঠিক হবে না। বরং রোহিঙ্গা হত্যাকা- বন্ধ করতে মিয়ানমারকে চাপ দিন। যেসব পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা আসছে রোহিঙ্গারা যেসব পয়েন্ট দিয়ে দলে দলে আসছে সেগুলো হচ্ছে- টেকনাফ সদর, উলুবনিয়া, হোয়াইকং, হ্নীলা, লেদা, মৌলবি বাজার, খারাংখালী, কাঞ্জরপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকা তুমব্রু, ঘুমধুম, কোনাপাড়া, মধ্যমপাড়া, পাথরকাটা, রেজুআমতলী, আছারবাগান, জলাপাইতলী, কলাবাগান, গর্জনবনিয়া, কেউয়াছড়ি, পাথরা ঝিরি, বাইশছাড়ী, আজুখাইয়া ও উখিয়ার পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়া, নলবনিয়া, রহমতেরবিল, ধামানখালী, বালুখালীর ঘাটসহ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা। ১৫টি নতুন বস্তি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা কক্সবাজার জেলার উখিয়া, টেকনাফ ও পার্শ্ববর্তী ঘুমধুমের কয়েকটি এলাকায় পাহাড় কেটে নতুন নতুন বস্তি গড়ে তুলছে। ইতোমধ্যে ১২টি বিক্ষিপ্তি নতুন বস্তি গড়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় তারা উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়িতে নতুন করে এসব বস্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অনেকে এখন যেনতেনভাবে বসতি গড়ে তুলছে। উখিয়ার বালুখালী, থাইংখালী ঢালার মুখ, তাজনিরমার খোলা, শফিউল্লাহ কাটা, হাকিমপাড়া, কুতুপালংয়ের টিভি রিলে উপকেন্দ্রের সংলগ্ন অংশ, টেকনাফের রইক্ষ্যং, বাহারছড়ার শামলাপুর ও নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুমের বাঁশবাগান, চাকঢালা, জারুল ছড়ি, চিকন ঝিরি এলাকায় বনাঞ্চল সাবাড় করে গত কয়েকদিনে আসা রোহিঙ্গারা এসব বস্তি গড়ে তুলছে। ওসব এলাকায় পাহাড়ী ভূমি দখল করে অন্তত আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বসবাস শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, এর আগে থেকেই উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের নয়াপাড়া, লেদা ও শামলাপুর এলাকায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা বন বিভাগের জমির ওপর বসবাস করে আসছে। নতুন ক্যাম্প হতে দেয়া হবে না রোহিঙ্গাদের নতুন করে বস্তি গড়ে তোলা প্রসঙ্গে কক্সবাজারের উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, আর কোথাও নতুন করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প হতে দেয়া হবে না। এক সপ্তাহ ধরে উখিয়ায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্প এলাকায় নিয়ে আসা হবে। টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রণয় চাকমা বলেন, পুটিবনিয়া বনভূমিতে নতুন করে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছি। সরকারী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাজার একর বনভূমি রোহিঙ্গার দখলে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আলী কবির জানিয়েছেন, এবার রোহিঙ্গাদের তৎপরতা খুব বেশি। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের নামে নতুন করে বস্তি তৈরির চেষ্টা করছে। আমরা অভিযান চালিয়ে দু’একটি বস্তি উচ্ছেদও করেছি। এসব এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪০০ একর বনভূমি রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। এছাড়াও পুরনো ক্যাম্পগুলোর দখলে রয়েছে ৬০০ একর বনভূমি। এসব বনভূমি থেকে দখল উচ্ছেদ করতে না করতে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল পুরো প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। এনজিও সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ সীমান্তে কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করা এসব রোহিঙ্গারা পরবর্তীতে আশ্রয় নিচ্ছে কক্সবাজারের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্প-বস্তিগুলোতে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী এনজিওর প্রশ্রয়েই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সমস্যা সমাধানে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। রোহিঙ্গাদের নিয়ে অবৈধ ব্যবসা উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের নিয়ে অবৈধ ব্যবসা জোরেশোরে শুরু হয়েছে। ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ট্রলার যোগে রোহিঙ্গাদের এনে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কারসহ যাবতীয় কিছু ছিনিয়ে নিয়ে নিরীহ রোহিঙ্গাদের আটক করে নির্যাতনের মাধ্যমে বিদেশে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। বিদেশে থাকা স্বজনরাও নিরুপায় হয়ে টাকার বিনিময়ে দালালদের হাত থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা আত্মীয়দের ছাড়িয়ে নিচ্ছে। রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়রা জানায়, মাথাপিছু সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের মুক্ত করা হচ্ছে। এদিকে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করার অপরাধে এ পর্যন্ত ৪৩ জন দালালকে আটক করা হয়েছে। এতে ৪২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান ও হ্নীলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দালাল সেলিমকে অসুস্থতাজনিত কারণে অর্থদন্ড- দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
×