ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে হিন্দুত্ববাদের সমালোচক সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ নিহত

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ভারতে হিন্দুত্ববাদের সমালোচক সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ নিহত

ভারতে হিন্দুত্ববাদের কট্টর সমালোচক অকুতোভয় সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশকে (৫৫) তার বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিহত গৌরী বাম ঘরানার পত্রিকা ‘লঙ্কেশ পত্রিকে’-এর স¤পাদক ছিলেন। তার বাবা চল্লিশ বছর আগে পত্রিকাটি চালু করেছিলেন। মঙ্গলবার রাতে ব্যাঙ্গালুরুর কাছে রাজরাজেশ্বরী নগরে নিজ বাড়ির সামনেই গৌরীর লাশ পাওয়া যায় বলে জানায় কর্নাটক পুলিশ। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও বিবিসি। ব্যাঙ্গালুরু পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার জানান, রাত ৮টার দিকে গৌরী যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন বাড়ির সামনেই মোটরসাইকেল আরোহী হামলাকারীরা তার মাথা ও বুকে গুলি চালায়। অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতকারীরা সংখ্যায় ছিল তিনজন, তারা খুব কাছ থেকে অন্তত সাতটি গুলি ছোড়ে গৌরীকে লক্ষ্য করে। তার মধ্যে তিনটি গৌরীর মাথা, গলা ও বুক ফুঁড়ে দেয়। কী কারণে নির্ভীক সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত গৌরীকে হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ভারতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। গৌরী লঙ্কেশ পত্রিকে নামে কন্নড় সাপ্তাহিক ট্যাবলয়েড স¤পাদনা করতেন। গৌরী তার পত্রিকার মাধ্যমে ‘কমিউনাল হারমনি ফোরাম’ নামে একটি গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। এই ফোরাম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সপক্ষে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে কাজ করে আসছে। ২০০৮ সালে লঙ্কেশ পত্রিকায় ছাপা হওয়া কয়েকটি লেখার জন্য গৌরীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও হয়েছিল। বিজেপির সাংসদ প্রহাদ যোশীর করা সেই মামলায় গৌরীর ছয় মাসের জেলও হয়েছিল।সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পান। গৌরী ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা কবিতা লঙ্কেশের বোন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন দলের নেতা এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা গৌরী হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। কর্নাটকের কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার মতে, গৌরীর হত্যা আসলে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা। রাহুল গান্ধী টুইট করেছেন, এভাবে গৌরীকে খুন করে সত্যকে চাপা দেয়া যাবে না। হত্যার খবরটা সাংঘাতিক। সাংবাদিকদের ওপরে যে কোন ধরনের হামলার নিন্দা জানাচ্ছি, গৌরী হত্যার খবর পেয়ে টুইটারে এমনটাই বলেন ভারতের ক্রীড়ামন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, খুবই দুর্ভাগ্যজনক। খুবই ভীতিকর। আমরা বিচার চাই। কবি জাভেদ আখতার লিখেছেন, দাভোলকর, পানসারে, কালবুর্গি এবং এখন গৌরী লঙ্কেশ। যদি পর পর এভাবে প্রগতিশীল লোকদের হত্যা করা হয়, তাহলে হত্যাকারীরা কারা? কর্নাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও এস ইয়েদুরাপ্পা এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, নাগরিক সমাজের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে এটা দেখে। রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানাচ্ছি হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে চেষ্টার যেন ত্রুটি না হয়। এর আগে কর্নাটকেরই যুক্তিবাদী লেখক এম এম কালবুর্গি, মহারাষ্ট্রের নরেন্দ্র দাভোলকর ও গোবিন্দ পানসারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। গৌরীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, বিজেপি সমর্থকরা হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা তারা করছিলেন।
×