ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাল আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস

দেশে সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দেশে সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৩ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য। এরমধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ ২১ হাজার এবং সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ৩২ হাজার। আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বুধবার এ তথ্য জানালেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী দেশের সাক্ষরতার চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, ২০১৬ সালের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার (আগামীকাল) আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হবে। ‘সাক্ষরতা অর্জন করি, ডিজিটাল বিশ^ গড়ি’- এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এবারও দেশে পালিত হবে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা, সংগঠন, এনজিও, শিক্ষক এবং শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে দিবসটি পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। ৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় দিবসটির উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। সাক্ষরতার চিত্র সম্পর্কে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিসংখ্যান তুলে ধরে গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘২০১৬ সালের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ। বর্তমান সরকারের নানামুখী কর্মসূচীর কারণে পূর্বের তুলনায় সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনও প্রায় ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। এসব নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষর করতে না পারলে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়। সাক্ষরতা অর্জনের মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, মানুষ সচেতন হয়, স্বনির্ভর হয়, দেশে জন্মহার এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস পায়, স্বাস্থ্যসূচকের উন্নয়ন ঘটে, গড় আয়ু বৃদ্ধি পায়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। সর্বোপরি পরিবার, সমাজ, দেশ তথা পৃথিবীতে একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণে সাক্ষরতার কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশে নিরক্ষরতা দূর করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (ইঘঋঊ) ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা প্রদান করেছে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিস্বরূপ বর্তমান সরকার ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো সাক্ষরতা পুরস্কার লাভ করেছে। শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞানদান, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকায়ন, দক্ষ মানবসম্পদে পরিণতকরণ, আত্ম-কর্মসংস্থানের যোগ্যতা সৃষ্টিকরণ এবং বিদ্যালয় বহির্ভূত ও ঝরেপড়া শিশুদের শিক্ষার বিকল্প সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশে ‘উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন’ ২০১৪ প্রণীত হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী আরও বলেন, দেশের বিদ্যমান নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে কার্যকর জীবনদক্ষতা ভিত্তিক সাক্ষরতা প্রদান করার জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা)’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে ৪৫ লাখ নিরক্ষর নারী-পুরুষকে জীবনদক্ষতাসহ মৌলিক সাক্ষরতা প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচিত ২৫০টি উপজেলার মধ্য হতে প্রথম পর্যায়ে ১৩৭টি উপজেলার জন্য নির্বাচিত বেসরকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাক্ষরতা মানে শুধু মাত্র লিখতে পড়তে পারলেই হবে না। আমরা সাক্ষরতা বলতে বুঝি বা সংজ্ঞায় আছে যিনি লিখতে পারেন, পড়তে পারেন, শব্দ গঠন করতে পারেন, খবরের কাগজ পড়তে পারেন তাকেই সাক্ষর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখন বিবিএস কিসের ভিত্তিতে করেছে, কাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে তা আমাদের জানা নেই। প্রাথমিক মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য পরীক্ষা নিলাম। এখনও তাদের নিয়োগ দিতে পারি নাই। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাইয়ে অনেক সময় নিচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের যে সংখ্যক শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। পিএসসি’র মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া হয়। আমাদের পক্ষ থেকে বলেছিলাম, বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে যারা লিখিত পরীক্ষায় টিকেন, কিন্তু পদ স্বল্পতার অভাবে নিয়োগ পান না এমন প্রার্থীদের সবাইকে প্রাথমিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হোক। ভাইবা’র দরকার নাই। আমরা সব নিয়ে নেব। এতে আমরা ধন্য হব। দেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেখানে যত স্কুল, যত ক্ষতি হয়েছে, তত সংস্কার করা হবে। যেভাবে ক্ষতি হয়েছে সেভাবেই ঠিক করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত সকলকে পুনর্বাসন ও স্কুলের অবকাঠামো মেরামতের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ জরিপ করে কাজ শুরু হবে। ২০১৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে কোথাও খোলা আকাশের নিচে পাঠদান থাকবে না।
×