ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিক সালেহ চৌধুরীর নাগরিক শোকসভায় বক্তারা

‘এক ব্যক্তির মধ্যে এত গুণ সচরাচর দেখা যায় না’

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

‘এক ব্যক্তির মধ্যে এত গুণ সচরাচর দেখা যায় না’

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ ৬ সেপ্টেম্বর ॥ প্রখ্যাত সাংবাদিক, খ্যাতনামা লেখক, কলামিস্ট, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সালেহ চৌধুরীর স্মরণে সুনামগঞ্জে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগার মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের আয়োজনে নাগরিক শোকসভায় মিলিত হন তার রণাঙ্গনের সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা, সংসদ সদস্যবৃন্দ, আইনজীবী, নাট্যকার, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, জেলা ও জেলার বাইরের তার শুভাকাঙ্খী গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ প্রয়াতের শোকাহত পরিবারবর্গ। নাগরিক শোকসভায় বক্তারা বলেন, সালেহ চৌধুরী একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক, চিত্রশিল্পী, ভাস্করশিল্পী, সাংবাদিক ও কলাম লেখক ছিলেন। এক ব্যক্তির চরিত্রে এত গুণের সমাহার সচরাচর দেখা যায় না। ‘অপরাজেয় বাংলা’র নামকরণও করেন সালেহ চৌধুরী। এছাড়া তিনি ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯২ সালের ‘গণ আদালতে’র অন্যতম সাক্ষী, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার সাক্ষী। দায়িত্ব পালন করেছেন কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি ও দাবা ফেডারেশেনের সাবেক কর্মকর্তা হিসেবেও। দেশসেরা দাবাড়ু নিয়াজ মোর্শেদের মেন্টর ছিলেন তিনি। বক্তারা বলেন, সালেহ চৌধুরীর সবচেয়ে বড় গুণ তিনি ছিলেন ভাল মনের মানুষ। অহঙ্কার ছিল না, আত্মপ্রচারও তিনি করতেন না। সুনামগঞ্জ জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ জেলার অনেকগুলো শহীদ মিনারের আর্কিটেক্ট ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য তার উপর নির্ভরশীল ছিলেন। আগুনের পরশমনি ছবির গেটাপ, পোশাক, মুক্তিযোদ্ধাদের আচরণ নিয়ে হুমায়ুন আহমেদ তার সঙ্গে আলোচনা করে ছবিটি নির্মাণ করেছেন। ঘেঁটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্রসহ প্রায় সবকটি নাটক সিনেমায় হুমায়ুন আহমেদ দিক নির্দেশনামূলক পরামর্শ নিতেন। বক্তারা বলেন, সর্বশেষ তিনি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিটি ইউনিয়নে পাঠাগার ও সংগ্রহশালায় মুক্তিযোদ্ধাদের বই ও স্মৃতি ধরে রাখার আহ্বান জানান এবং জেলা প্রশাসন তার উদ্যোগ নেয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ডের আহ্বায়ক ও জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে শোকসভার শুরুতেই প্রয়াত সালেহ চৌধুরীর স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় শোকসভায় বক্তব্য রাখেন, প্রয়াত সালেহ চৌধুরীর বড় ছেলে উবায়েদ আজমান চৌধুরী, ছাতক- দোয়ারাবাজার আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, দিরাই-শাল্লা আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা, সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট শামসুন্নাহার বেগম শাহানা রব্বানী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এ্যাডভোকেট আপ্তাব উদ্দিন, সিনিয়র আইনজীবী ও কলামিস্ট হোসেন তওফিক চৌধুরী, শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে, এ্যাডভোকেট হুমায়ুন মঞ্জুর চৌধুরী, জেলা উদীচীর সভাপতি শীলা রায়, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোঃ ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু, মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার হাজী নুরুল মোমেন, মুক্তিযোদ্ধা আতম সালেহ, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাসিম, মুক্তিযোদ্ধা আবু সফিয়ান, নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা ফজলুল কবির তুহিন, স্থানীয় সাংবাদিক পংকজ কান্তি দে, এমরানুল হক চৌধুরী, শামস শামীম প্রমুখ । এছাড়াও নাগরিক শোকসভায় উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত সালেহ চৌধুরীর পরিবারবর্গ। নাগরিক শোকসভায় সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য দল ক্ষমতায় এসেছে তখনই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল রাজনৈতিক পরিবারের ওপর নেমে এসেছে দুর্যোগ। তবে আমি এ ধরনের অবস্থার সম্মুখীন হইনি। কারণ বটবৃক্ষের মতো আমার পরিবারের পাশে ছিলেন সালেহ চৌধুরী। কি শূন্যতা আজ আমি অনুভব করছি তা বলবার নয়। এসময় তিনি প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরী স্মরণে নানা উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান। শোকসভায় প্রয়াত সালেহ চৌধুরীর বড় ছেলে উবায়েদ আজমান চৌধুরী বলেন, বাবা আমাদের প্রায় সবসময় সৎভাবে জীবন যাপন করতে বলতেন। অল্প সময়ের মধ্যে এই নাগরিক শোকসভার আয়োজন করায় তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমার বাবাকে সব সময় কাছে টানতেন, ৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পুরো উত্তরবঙ্গ চষে বেরিয়েছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নৌকা মার্কার একজন কর্মী ছিলেন।
×