ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মসমর্পণের কথা বলে জঙ্গীদের সময়ক্ষেপণ ॥ টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা আস্তানা থেকে দুই সহোদর অস্ত্র, গোলাবারুদ ও ড্রোনসহ গ্রেফতার

মিরপুর আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা হামলা ॥ দফায় দফায় গুলি

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিরপুর আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা হামলা ॥ দফায় দফায় গুলি

শংকর কুমার দে/শরীফুল ইসলাম/গাফফার খান চৌধুরী/ইফতেখারুল অনুপম ॥ আত্মসমর্পণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কালক্ষেপণ করে ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায় দুর্ধর্ষ জঙ্গীরা। রাজধানী ঢাকার মিরপুরে র‌্যাবের অভিযানকালে মঙ্গলবার রাতে একটি ৬তলা ভবনের ৫তলার আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছে জঙ্গীরা। এ সময় জঙ্গী আস্তানায় আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের টিম গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বোমা বিস্ফোরণের পাশাপাশি সেখানে দফায় দফায় গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটে। জঙ্গীদের বোমার স্পিøন্টারের আঘাতে ৪ র‌্যাব সদস্য আহত হয়। রাত পৌনে ১২টায় অভিযান আপাতত স্থগিত করা হয় এবং আজ সকালে আবারও অভিযান শুরু করা হবে বলে র‌্যাব জানায়। এর আগে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় অপর এক আস্তানা থেকে ছাত্র শিবিরের সাবেক কর্মী দুই সহোদর জঙ্গীকে অস্ত্রগোলাবারুদ ও একটি ড্রোনসহ গ্রেফতার করা হয়। রাত পৌনে ১২টায় ঘটনাস্থলের পাশে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান মুফতি মাহমুদ খান দারুস সালামে জঙ্গী আস্তানার অভিযান আপাতত স্থগিত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, রাতের আঁধারে আমরা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইনি। সকালে পুনরায় অভিযান শুরু করব। তিনি বলেন, আত্মসমর্পণের জন্য জঙ্গীদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে নেগোসিয়েশন করেছি। একটি পর্যায়ে এসে তারা সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে আত্মসমপর্ণ করবে বলে জানিয়েছিল। পরবর্তীতে আবার যোগাযোগ করা হলে জঙ্গীরা ফের ৩০ মিনিট সময় চায়। সেই ৩০ মিনিট পার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ১০টায় ভেতরে থাকা জঙ্গীরা নিজেরাই ৩টি বড় বিস্ফোরণ ঘটায়। এর ফলে জঙ্গীদের অবস্থানস্থল ৫ তলায় আগুন ধরে যায়। এটা কেমিক্যাল ফায়ার বলে ধারণা করছে র‌্যাব। তবে অভিযান হাউস ক্লিয়ারিং রেল শেষে বাকিটা জানানো হবে। মিরপুরের দারুস সালাম থানার জঙ্গী আস্তানায় টানা প্রায় ২০ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর ভেতরে থাকা দুর্ধর্ষ জঙ্গী আব্দ্ল্লুাহ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে স্বজনদের নিয়ে আত্মসর্মপণ করতে রাজি হয়। কিন্তু কালক্ষেপণ করে শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণতো করেইনি, বরং দফায় দফায় ভয়াবহ বোমাবর্ষণ ও গুলি ছোড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তবে আত্মঘাতী হামলায় জঙ্গীরা নিহত হয়েছে কি না রাত ১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত র‌্যাব এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। জঙ্গী আবদুল্লাহ আত্মসমর্পণ করবেন বলে র‌্যাব সদস্যদের অপেক্ষার মধ্যে রাত ৯টা ৪৭ মিনিটে সেখানে বিকট শব্দে কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে। এরপর ৬তলা ভবনের ৫ তলার জঙ্গী আস্তানায় আগুন জ্বলতে দেখা যায় এবং সেখান থেকে ব্যাপকভাবে ধোঁয়া আসতে থাকে। রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ওই ভবনের কাছে কয়েক দফা গুলির শব্দ হয়। অভিযানকালে জঙ্গীদের বোমার স্পিøন্টারের আঘাতে ৪ জন র‌্যাব সদস্য আহত হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তারা আশঙ্কা মুক্ত আছেন বলে র‌্যাব জানায়। রাত সাড়ে ১০টায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান মুফতি মাহমুদ খান বলেন, রাজধানীর দারুস সালামে জঙ্গীদের ফাটানো বোমার স্পিøন্টারে চার র‌্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, জঙ্গীদের আত্মঘাতী বোমায় কেউ হতাহত হয়েছেন কিনা এখন পর্যন্ত বলতে পারছি না। তবে বোমা বিস্ফোরণের পর ভবনের ৫ তলায় আগুন ধরে যায়। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা কাজ করেন। তিনি বলেন রাত ৯টা ৪৭ মিনিটে জঙ্গী আস্তানা থেকে চার থেকে পাঁচটি বিস্ফোরণ ঘটে। সেইসঙ্গে কয়েক রাউন্ড গুলিও করে তারা। ধারণা করা হয় জঙ্গীরা আত্মঘাতী হামলা চালায়। ভবনে থাকা মানুষের নিরাপত্তা দেয়াই আমাদের লক্ষ্য ছিল। সেটি আমরা নিশ্চিত করেছি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জঙ্গীরা আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিল। সেই অনুযায়ী তাদের সময় দেয়া হয়েছিল। পরে তারা আরও আধাঘণ্টা সময় চায়। সেই অনুযায়ী তাদের সময় দেয়া হয়। এরপর ভারি কেমিক্যাল (রাসায়নিক) বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গীরা। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় সোমবার রাতে এক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জঙ্গী দুই ভাইকে ড্রোন ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটকের পর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে মিরপুরে র‌্যাবের এই অভিযান শুরু হয়। মাজার রোডের পাশে বর্ধনবাড়ি ভাঙ্গা ওয়ালের গলির ২/৩-বি হোল্ডিংয়ে ছয়তলা ওই বাড়ির পঞ্চম তলায় আবদুল্লাহ তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগীসহ মোট সাতজন অবস্থান নিয়েছিলেন বলে র‌্যাব জানায়। মঙ্গলবার সকালেই আব্দুল্লাহর এক প্রতিবন্ধী বোন মেহেরুন্নেছা আত্মসর্মপণ করে। এর আগে জঙ্গীরা সোমবার দিবাগত রাতে অভিযানকালে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে পাঁচ দফায় বোমা হামলা করে। তবে তখন কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আস্তানার ভেতরে দুর্ধর্ষ জঙ্গী আব্দুল্লাহ, তার দুই সহযোগী জঙ্গী, দুই স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানসহ সাত জন অবস্থান করে। বাড়িতে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক থাকতে পারে বলে র‌্যাব আগে থেকেই ধারণা করে। তাই বাড়িটির চারদিকে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কর্ডন করে রাখে র‌্যাব। আশপাশে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ওই এলাকার বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হলেও তারা এ নিয়ে কোন অস্বস্তির কথা জানাননি। বলছেন, কষ্ট হলেও জঙ্গী নিধন হউক। টাঙ্গাইলের জঙ্গী আস্তানায় অভিযান সোমবার গভীর রাতে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার এলেঙ্গা পৌরশহরের মসিন্দা এলাকায় একটি জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালিয়ে দুই সহোদর জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১২। আস্তানা থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি ড্রোন (মানুষ ছাড়াই চলাচলে সক্ষম ছোট আকারের বিমান) বিস্ফোরক, জিহাদী বই ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, সৈয়দ নুরুল হুদা মাছুম (৩৪) ও তার ছোট ভাই সৈয়দ মাজহারুল ইসলাম খোকন (২৫)। তারা বাড়ির মালিক সৈয়দ আবুল হাসান চিশতিয়ার দুই ছেলে। মাদ্রাসায় পড়ার সময় তারা ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে তারা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সক্রিয় সদস্য। র‌্যাব-১২ এর অধিনায়ক সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের জানান, সোমবার রাত এগারোটার দিকে বাড়ি শনাক্ত হওয়ার পরেই সেখানে অভিযান চালিয়ে দুই জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীরা জানিয়েছে, তৈরিকৃত ড্রোন দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও স্থাপনার ওপর হামলার চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। গ্রেফতারকৃতদের অপর একটি দল ঢাকার মিরপুরের মাজার রোড এলাকায় একটি জঙ্গী আস্তানা রয়েছে বলেও তারা তথ্য দেয়। র‌্যাব জানায়, গ্রেফতাকৃতদের মধ্যে মাসুম একটি মাদ্রাসায় নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। অনেকদিন ধরেই জেএমবির সঙ্গে জড়িত। তার ছোট ভাই খোকন বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। তবে তা শেষ না করেই ২০১২ সালে দেশে ফেরতে আসে। সে ভাইকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিত। জঙ্গী দুই ভাই মিলেই নাশকতা চালানোর জন্য উদ্ধারকৃত ড্রোনটি তৈরি করেছিল। মাসুমের সাংগঠনিক নাম কুফরা জামানা। তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা জঙ্গীবাদে জড়িত কিনা তার তদন্ত হচ্ছে। এলাকাবাসী জানায়, মাসুম বাড়ির কাছে মসিন্দা বাজারে একটি ফার্মেসি ও স্টেশনারি দোকান চালাতেন। আর খোকন টাঙ্গাইল শহরের ভিক্টোরিয়া রোডে ক্যাপসুল মার্কেটে কম্পিউটারের ব্যবসা করতেন। রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করা খোকন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য প্রায় নয় বছর মালয়েশিয়ায় ছিলেন। বছর তিনেক আগে দেশে ফিরে এলাকায় থাকতে শুরু করেন। চিশতি পরিবারের আদি বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকায়। প্রায় দুই যুগ আগে তারা এলেঙ্গার মসিন্দায় বসবাস শুরু করেন। প্রতিবছর ২৪ অক্টোবর ওই বাড়িতে ওরস হতো। বাড়ির মালিক সৈয়দ আবুল হোসেন চিশতি আড়াই বছর আগে মারা গেছেন। তবে তার আরেক ছেলে তাপস নিয়মিত ওরস পরিচালনা করে আসছিলেন। র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত সহোদররা ছাত্রজীবনেই জেএমবির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। খোকন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ইলেক্ট্রিনিক এ্যান্ড ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ লেখাপড়া করত। ২০১২ সালে লেখাপড়া ছেড়ে সে বড় ভাইয়ের সঙ্গে জেএমবিতে যোগ দেয়। টাঙ্গাইলের সূত্র ধরে ঢাকার জঙ্গী আস্তানার সন্ধান র‌্যাবের গোয়েন্দাদের কাছে থাকা তথ্য মোতাবেক সোমবার রাতে র‌্যাবের একটি দল মিরপুর দারুস সালাম থানাধীন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানের এক পর্যায়ে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশে বর্ধমান বাড়ির ভাঙ্গা দেয়াল গলির ২/৩-বি নম্বর কমল প্রভা নামের ছয়তলা বাড়িটিকে সন্দেহভাজন জঙ্গী আস্তানা হিসেবে ঘিরে ফেলে র‌্যাব। রাত সাড়ে বারোটার দিকে র‌্যাব সদস্যরা সন্দেহভাজন বাড়িটিতে অভিযান চালানোর চেষ্টা করে। এ সময় বাড়িটির পাঁচতলা থেকে পর পর তিনটি শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করা হয়। স্থানীয়রা জানায়, ভোরের দিকে আরেকবার র‌্যাবকে লক্ষ্য করে একটি বোমা নিক্ষেপ করে জঙ্গীরা। বোমাটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এ সময় পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। দ্রুত র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়। এরপর র‌্যাব বাড়িতে জঙ্গী আস্তানা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরপর পুরো এলাকা কর্ডন করে ফেলে। বাড়িটির চারদিকে প্রায় আধাকিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয় সর্বসাধারণের। সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। মঙ্গলবার ভোরে টাঙ্গাইলের কালিহাতি আস্তানা থেকে গ্রেফতারকৃত দুই জঙ্গীর বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, জঙ্গীদের একটি দল দারুস সালাম থানা এলাকায় অবস্থান করছে। এরপর র‌্যাব ওই বাড়িটিই যে, জঙ্গী আস্তানা তা নিশ্চিত হয়। রাতে আর অভিযান চালায়নি র‌্যাব। সকালে অভিযান চালাতে গেলে আবার হামলা করে জঙ্গীরা। পরে ফায়ার সার্ভিস দূর থেকে বাড়ির সামনে পানি ছিটিয়ে আগুন ধরা থেকে রক্ষা করে। এরপর ধাপে ধাপে বাড়িতে থাকা লোকজনদের সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে। চার ইউনিটের বাড়িতে ২৪টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২৩টি ফ্ল্যাটের ৬৫ জন বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়া হয়। শুধুমাত্র জঙ্গীদের ফ্ল্যাট থেকে কাউকে সরানো সম্ভব হয়নি। তাদের খাবার দেয়া হয়েছে। বাড়িটির পানি বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, বাড়িটির মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ। বাড়ি ঝিনাইদহে। তিনি টিএ্যান্ডটির সিবিএ নেতা। পাশাপাশি তিনি বাড়ির পাশেই বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদের সহ-সভাপতি। তাকে র‌্যাব সদর দফতরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। দুর্ধর্ষ জঙ্গী আব্দুল্লাহ প্রায় পনেরো বছর ধরে ওই বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়ায় বসবাস করছেন। মসজিদটি থেকেই আব্দুল্লাহ চিল্লায় যেত। আব্দুল্লাহ কবুতর পালন ও আইপিএস বানানোর কাজ করত। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের বক্তব্য মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, সোমবার রাতে টাঙ্গাইলে জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালিয়ে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রসহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে মিরপুরের দারুস সালামের জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালানো হচ্ছে। বাড়িটির পঞ্চম তলায় সন্দেহভাজন জঙ্গীরা অবস্থান করছে। বাড়িতে থাকা জঙ্গী আস্তানায় আবদুল্লাহ নামের এক দুর্ধর্ষ জঙ্গী রয়েছে। এ ছাড়া জঙ্গী আস্তানায় আবদুল্লাহর দুই স্ত্রী, দুই সস্তান ও দুই সহযোগী আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জঙ্গী আস্তানার ভেতরে প্রচুর বিস্ফোরক থাকার খবর তথ্য পাওয়া গেছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খানের বক্তব্য সোমবার রাতেই র‌্যাব ওই বাড়ি ঘিরে ফেলার পর রাত একটার দিকে বাড়ি থেকে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি বোমা নিক্ষেপ করে জঙ্গীরা। পরে আরও একটি বোমা নিক্ষেপ করে জঙ্গীরা। সর্বশেষ নিক্ষেপ করা বোমাটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এ সময় পুরো এলাকা কেঁপে উঠেছিল। ওই বাড়ি থেকে ছোড়া বোমার মধ্যে পেট্রোল বোমাও ছিল। বাইরে পড়ার পর সেখানে আগুন ধরে যায়। তবে কেউ হতাহত হয়নি। ওই বাড়ি থেকে র‌্যাবের দিকে গুলিও ছোড়া হয়। সোমবার রাতেই ওই বিস্ফোরণের পর ফায়ার ব্রিগেডের একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ওই বাড়ির সামনের অংশে পানি ছিটানো হয়। বাড়ি থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া বাসিন্দাদের মধ্যে ১৫ জন শিশু, ২৪ জন নারী ও ২৬ জন পুরুষ রয়েছে। জঙ্গী আব্দুল্লাহর বোনের আত্মসমর্পণ মূলত ভোর থেকেই জঙ্গীদের আত্মসর্মপণ করানোর চেষ্টা করছে র‌্যাব। এমন ডাকে সাড়া দেন এক নারী। তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে র‌্যাবের কাছে আত্মসর্মপণ করেন। র‌্যাব তাকে দ্রুত নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায়। ওই নারীর জবানবন্দীর বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, আত্মসর্মপণকারী নারী জঙ্গী আস্তানায় থাকা দুর্ধর্ষ জঙ্গী আব্দুল্লাহর বোন। তিনি প্রতিবন্ধী। তার তথ্য মোতাবেক ভেতরে আব্দুল্লাহ ছাড়াও তার দুই স্ত্রী, তার আড়াই বছর বয়সী ছেলে ওসামা ও দশ বছর বয়সী ছেলে ওমর রয়েছে। এছাড়া আব্দুল্লাহর দুই সহযোগী রয়েছে আস্তানায়। আত্মসর্মপণকারী ওই নারী ঈদ উপলক্ষে ওই বাড়িতে এসেছিল। অন্য জঙ্গীদের আত্মসর্মপণ করানোর চেষ্টা আত্মসর্মপণকারী নারীর কাছ থেকে আস্তানায় থাকা জঙ্গীদের মোবাইল নম্বর পেয়েছে র‌্যাব। সেই মোবাইল নম্বর ধরে জঙ্গীদের সঙ্গে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানাচ্ছে র‌্যাব। পাশাপাশি আব্দুল্লাহর বোন ও তার আত্মীয়স্বজনদের দিয়েও আস্তানায় থাকা জঙ্গীদের আত্মসর্মপণ করানোর চেষ্টা চলছে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত ভেতরে থাকা জঙ্গীরা আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়নি। বারো বছর ধরে জঙ্গীবাদে জড়িত আবদুল্লাহ জেএমবির শীর্ষ ও দুর্ধর্ষ জঙ্গী। ২০০৫ সাল থেকে সে জঙ্গীবাদে জড়িত। প্রায় পনেরো বছর ধরে মিরপুর মাজার রোডে বসবাস করে আসছে। কবুতরের ব্যবসার পাশাপাশি আইপিএস ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী মেরামতের কাজেও সে জড়িত। তার কক্ষে অন্তত ৫০টির মতো আইইডি (ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) আছে। এছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ রয়েছে। সোমবার রাতে অভিযান শুরুর পর ওইদিক থেকে গুলি করা হয়েছিল। তার কাছে এক বা একাধিক পিস্তলও থাকতে পারে বলে র‌্যাবের ধারণা। জঙ্গী আব্দুল্লাহ আত্মসমর্পণে রাজি আব্দুল্লাহকে তার স্বজনদের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকার এক পর্যায়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর জঙ্গী আব্দুল্লাহ আত্মসর্মপণ করতে রাজি হয় বলে র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান। আব্দুল্লাহর এমন বক্তব্যের পেছনে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা সে জন্য তৎপর হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার রাতে জঙ্গীরা আত্মসমর্পণ করেনি।
×