ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবারও দালাল চক্র সক্রিয়

মালয়েশিয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের আই-কার্ড দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মালয়েশিয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের আই-কার্ড দেয়া হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য আই-কার্ডের বেলায়ও দালাল চক্র সক্রিয়। এর আগে প্রবাসী কর্মীদের ই-কার্ড নিয়েও দালাল চক্র বড় ধরনের ব্যবসা করেছে। এই দালাল চক্রের কারণে ৩ লাখের বেশি কর্মী ই-কার্ডের আওতায় আসতে পারেনি। গত জুলাইয়ে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য আই-কার্ড দেয়ার ঘোষণা দেয়। ঘোষণা অনুযায়ী ছাত্রদের মধ্যে দেশটির কর্তৃপক্ষ আই-কার্ড বিতরণ শুরু করেছে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের ঘোষণায় বলা হয়, আই-কার্ড ছাড়া কোন ছাত্র দেশটিতে পড়তে পারবে না। আই-কার্ড না থাকলে তারাও অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। মালয়েশিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মোনাশ, ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামের মতো বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। দেশটির নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার খরচ অন্য যে কোন দেশের তুলনায় অনেক কম। সবচেয়ে বড় সুযোগ মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ রয়েছে। ভিসা পাওয়া শতভাগ সম্ভাবনা, ভাল মান, তুলনামূলক কম টিউশন ফি, কাজের সুযোগ ও জীবনযাত্রার খরচ অনেক কম হওয়ায় মালয়েশিয়া এ মুহূর্তে শিক্ষা গ্রহণের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ। সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে এক শ’টিরও বেশি দেশের ৫০ হাজারের বেশি বিদেশী শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করছে। বাংলাদেশের গত দুই বছরের হিসেবে দেখা যায় ২০১৬ সালে প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমিয়েছে। এদের মধ্যে ৭ হাজার ৫৩৪ ছাত্র মালয়েশিয়া, এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ৬ হাজার ৪৪১ জন উচ্চ শিক্ষার জন্য গেছে। কিন্তু মালয়েশিয়ার এই বিপুল সংখ্যক বিদেশী শিক্ষার্থীদের কাছে সর্বক্ষণিক পর্যাপ্ত তথ্য বা কাগজপত্র না থাকায় প্রতিনিয়তই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নানামুখী বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। বর্তমানে দেশটিতে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের পর থেকে শিক্ষার্থীদের হয়রানি আরও বেড়ে গেছে। এ পর্যন্ত দেশটিতে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি বাংলাদেশী অবৈধ কর্মীকে ইমিগ্রেশন পুলিশ আটক করেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন ছাত্রও আটক হয়েছেন বলে খবর মিলেছে। যদিও পরে আটককৃত ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আইডি কার্ড পরীক্ষা করে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপরই কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্রছাত্রীদের আই-কার্ড দেয়ার। তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্রছাত্রীদের আই-কার্ড দেয়া শুরু করা হয়েছে। কিন্তু এখানেও দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কর্মীদের মতো ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকেও দালাল চক্র টাকা নিয়ে আই-কার্ড করে দেয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছে। প্রলোভনে পড়ে অনেকে দালালদের হাতে কাগজপত্র তুলে দিচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে কর্মীদের মতো ছাত্রদেরও একই পরিণতি ঘটতে পারে। দেশটির কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে নিজের আই-কার্ড নিজেই করতে হবে। অন্য কোন মাধ্যমে করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন দফতরের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী ঘোষণা দিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীদেরও পরিচয়পত্র নিতে হবে। ছাত্রদের জন্য আই-কার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অবৈধ কর্মীদের জন্য সুযোগ দেয়া হয়েছিল ই-কার্ডের। ই-কার্ড না থাকার কারণে বাংলাদেশের বহু কর্মীকে আটক করা হয়েছে। ছাত্ররা যাতে এমন কিছুর শিকার না হয়, সে জন্য তাদের আই-কার্ড দেয়া হবে। আই-কার্ড দেয়ার কর্মসূচী চালু হয়েছে। ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে ছাত্রদের আই-কার্ড দেয়া শুরু হয়েছে। আই-কার্ডের আওতায় যারা আসবে না তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আই-কার্ডের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বিদেশী শিক্ষার্থীদের শিক্ষানবিস বৈধ ডকুমেন্ট হিসেবে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নিবন্ধিত হওয়ার মাধ্যমে আই-কার্ড সুযোগটি দেয়া হবে। বিষয়টি আপাতত অভিবাসন বিভাগের গ্যাজেটিংয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে অভিবাসন বিভাগের প্রধান জেনারেল মুস্তাফার আলি বলেন, উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত বিদেশী শিক্ষার্থীরা ইমিগ্রেশন এক্ট ১৯৫৯/৬৩ এবং ইমিগ্রেশন রেগুলেশন ১৯৬৩ অনুযায়ী শনাক্তকরণ ‘আই-কার্ড’ ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। এদিকে মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যাজেটের মাধ্যমে বিদেশী শিক্ষার্থীরা আই-কার্ড একটি শনাক্তকরণ ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। তবে এটি শুধু বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। পাসপোর্টের বিকল্প বলে বিবেচ্য হবে না। মুস্তাফার আলি সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পাসপোর্টের পরিবর্তে আই-কার্ড কে বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ পৌঁছে দিয়েছে। আই-কার্ডকে সাজানো হবে নতুন ও ভিন্নরূপে যাতে করে এর অপব্যবহার না হয়। এতে থাকবে বায়োমেট্রিক চিপ এবং স্থায়ী শনাক্তকরণ নাম্বার। যা দেখে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সহজেই শনাক্ত করতে পারবে। তবে এই আই-কার্ড বিতরণ শুরু করার কোন সুনির্দিষ্ট তারিখ জানানো হয়নি। এ ঘোষণা দেয়ার পর থেকে ছাত্র হয়রানি বন্ধ করেছে দেশটির পুলিশ। উল্লেখ্য, এ বছরের জুনে ই-কার্ডের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ শেষ হয় মালয়েশিয়ায়। এই সময়সীমা শেষ হওয়ার পরপরই মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশন পুলিশ সাড়াশি অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশী কর্মীকে আটক করা হয়। অভিযান এখনও চলমান রয়েছে। তবে মালয়েশিয়া সরকার ই-কার্ড দেয়া বন্ধ করলেও আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রি-হায়ারিং প্রক্রিয়া চালু রেখেছে। রি-হায়ারিং ব্যবস্থায় বয়স ও নাম জটিলতায় মালয়েশিয়ায় প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশীর বৈধতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
×