ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বন্যাদুর্গত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্লাস নেয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বন্যাদুর্গত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্লাস নেয়ার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বন্যাদুর্গত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও ক্লাস নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্ধারিত সময়ে সিলেবাস শেষ করতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশ বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি বন্যায় দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া এসব অঞ্চলের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম নানাভাবে ব্যহত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথাসময়ে সিলেবাস সমাপ্ত করার লক্ষ্যে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব সালমা জাহান বলেন, বন্যায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকার স্কুলগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা বাৎসরিক সিলেবাস থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে আমরা ছুটিগুলোতে ক্লাস কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। সেখানে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এদিকে জানা গেছে, এবার বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অন্তত ২৫টি জেলার শিক্ষাঙ্গন। অন্তত সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। তবে পানি নেমে যাওয়ার পর এসব প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছুতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগের বন্যার কারণে বেশ কিছু জেলায় জুন থেকেই বন্ধ ছিল স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। সর্বশেষ বন্যায় বিপর্যয়ের মাত্রা চরম আকার ধারণ করে। পানি ঢুকে পড়ায় উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের শিক্ষাঙ্গন ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবচেয়ে বেশি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর বলছে, অন্তত ২৫ জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনটি আংশিক, কোনটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আসবাবপত্র, বই-খাতাসহ স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার্থীরা। বন্যাকবলিত প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই প্রাথমিক বিদ্যালয় হলেও মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের সংখ্যাও কম নয় বলে জানিয়েছে অধিদফতর। প্রায় দুই হাজার মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক জেলায় অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হয়। দেশের জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাস দুয়েক আগে হাওড়ের বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের বন্যা দেখা দেয় দেশের বেশ কিছু জেলায়। বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা দিনাজপুর। এখানেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া লালমনিরহাট, জামালপুর, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, বগুড়া, পাবনা, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁওসহ বেশ কিছু এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্র এসেছে শিক্ষা দফতরে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ। আয়ব্যয়ের সরকারী বিধান না মানলে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সরকারী স্কুল ও কলেজের আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত পরিপত্রের বিধান না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে আয়ব্যয় সংক্রান্ত পরিপত্রের বিধান উপেক্ষা করে যথেচ্ছভাবে টাকা আদায় ও খরচ করছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। বেহিসাবী টাকা আদায় ও খরচের পক্ষে সরকারী কলেজ অধ্যক্ষরা অজুহাত দেখাচ্ছেন একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন গ্রহণের। কিন্তু অর্থ খরচ করার অনুমোদন দেয়ার এখতিয়ার একাডেমিক কাউন্সিলের নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের জুলাই মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা ‘ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে আদায়কৃত অর্থের আয়ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ বাধ্যতামূলক। মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব আহমদ শামীম আল রাজী স্বাক্ষরিত আদেশে ওই পরিপত্রের বিধান উল্লেখ করা হয়। আদেশটি দেশের সব সরকারী কলেজ ও স্কুলের প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
×