ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তে উত্তেজনা এড়াতে মতৈক্য ॥ ব্রিকস সম্মেলনে শি-মোদি বৈঠক

চীন-ভারত স্থায়ী সুসম্পর্ক চাই

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চীন-ভারত স্থায়ী সুসম্পর্ক চাই

চীনের জিয়ামেনে অনুষ্ঠিত পাঁচ জাতির ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের এক পর্যায়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর সঙ্গে মঙ্গলবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে স্বাগতিক দেশের প্রেসিডেন্ট শি বলেন, উভয় দেশের জনগণের স্বার্থেই ভারত ও চীনের মধ্যে স্থায়ী সুসম্পর্ক বজায় রাখা আবশ্যক। শি জিন পিং বলেন, চীন ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও নীতির ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী। রাজনৈতিকভাবে পারস্পরিক আস্থার উন্নয়ন, উভয়পক্ষের মধ্যে কল্যাণকর সহযোগিতা এবং চীন ভারত সম্পর্ককে সঠিক পথে পরিচালিত করাই দু’দেশের অভিন্ন লক্ষ্য। দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দোকলাম সীমান্ত উত্তেজনার মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে সেই লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা পর্যায়ের যোগাযোগ আরও বাড়াতে সম্মত হয়েছে দু’দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। মঙ্গলবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ঘণ্টা বৈঠকে এ বিষয়ে দুই নেতা একমত হন বলে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জে জয়শঙ্কর জানিয়েছেন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও সিনহুয়ার। জয়শঙ্কর বলেন, সম্প্রতি যা ঘটে গেছে সেটি যেন আর না ঘটে সে বিষয়ে দু’নেতা একমত হয়েছেন। সাম্প্রতিক ঘটনা বলতে দোকলাম মালভূমির কাছে দু’দেশের সৈন্য সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অচলাবস্থার কথা বলা হলেও দুই নেতার কেউই শব্দটি উচ্চারণ করেননি। তিনি বলেন, উভয় পক্ষ একমত হয়েছে যে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার অন্যতম পূর্ব শর্ত সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। এছাড়া পারস্পরিক আস্থা আরও বাড়াতে অন্যান্য পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তারা একমত হয়েছেন। জুন মাসে দোকলাম সীমান্তে চীনের সীমান্ত সমাবেশের বিষয়ে জয়শঙ্করকে প্রশ্ন করা করা হলে তিনি কৌশলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘শি-মোদি বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দেখুন কি ঘটে গেছে সে সম্পর্কে আমরা (ভারত ও চীন) উভয়ে অবহিত আছি। এটি কোন পশ্চাতমুখী আলোচনা নয়। এ ছিল ভবিষ্যতমুখী আলোচনা।’ তিনি বলেন, গত জুনে কাজাখস্তানের রাজধানী অস্তানায় সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন বৈঠকের পার্শ্ব আয়োজনে মোদি ও শি পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও বাড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন ব্রিকস সম্মেলনে তারা সে কথারই পুনর্ব্যক্ত করেছেন। জয়শঙ্কর বলছেন, দুই নেতা এ বিষয়ে একমত হয়েছিলেন যে, পারস্পরিক মতভেদের বিষয়গুলোকে দুই দেশ বিবাদের ইস্যুতে পরিণত করবে না। বর্তমানে পরিবর্তনশীল বিশ্বে চীন-ভারত কখনও সভ্যতার রীতি কখনও বিসর্জন দেবে না। উল্লেখ্য, দোকলাম সীমান্তে চীনের সেনাবাহিনী সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিলে ১৬ জুন ভারত সেখানে সৈন্য পাঠিয়ে চীনের কাজে বাধা দেয়। সীমান্তে দু’দেশের সৈন্যরা মুখোমুখি অবস্থানে থাকে। ২৮ আগস্ট দু’দেশ সেখান থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে সম্মত হলে অচলাবস্থার অবসান ঘটে। মোদি ও শি’র বৈঠকে অবশ্য সন্ত্রাসবাদ স্থান পায়নি বলে জয়শঙ্কর জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, এই প্রথমবারের মতো ব্রিকস সম্মেলনের ঘোষণায় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কথা এসেছে। সন্ত্রাসবাদ প্রায় সবগুলো দেশের জন্য একই রকম হুমকি ছুড়ে দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে সব দেশই অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। এদিকে বৃহত্তর পরিসরে ব্রিকস জোটবদ্ধ দেশগুলো বিশ্বে বিকাশমান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে অর্থনীতি, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী তৎপরতায় পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে। ফুজিয়ান প্রদেশের বন্দরনগরী জিয়ামেনে ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলো পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে যে ঐকমত্যে পৌঁছে তা জিয়ামেন ঘোষণা নামে পরিচিত পেয়েছে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ব্রিকসের এই পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট শি বলেন, পরিবর্তনশীল বিশ্বের বর্তমান জটিল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিকস সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব আগের চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। শি জিন পিং বলেন, ব্রিকস সহযোগিতা চুক্তির সদস্যভুক্ত পাঁচটি দেশের উন্নয়নে অভিন্ন চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে এবং এর মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের বিপরীতধর্মী অভ্যন্তরীণ অবস্থা বিরাজ করলেও সামগ্রিকভাবে প্রতিটি দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। জিয়ামেন ঘোষণায় আরও বলা হয় যে, আমরা আমাদের জোটভুক্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বিষয়ে জাতিসংঘের মূল ভূমিকা ও বহুপাক্ষিক বিষয়ে বিশ্ব সংস্থাটির বিভিন্ন উদ্যোগের প্রতি আমাদের জোরালো সমর্থন জ্ঞাপন করছি। একই সঙ্গে ব্রিকস সদস্য রাষ্ট্রগুলো জাতিসংঘ ও এর অঙ্গ সংগঠনের গঠন কাঠামো ও নীতিমালার অধীনে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে। ব্রিকস জোটভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর গঠন কাঠামো ও শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবসমূহ পর্যালোচনা করে চায়নিজ একাডেমি অব সোস্যাল সায়েন্সের ডিরেক্টর উ বাই-ই গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, কোন একটি দেশ এককভাবে বিশ্ব কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে পারে না। তবে ব্রিকসের মতো জোটভুক্ত দেশগুলো যারা বিকাশমান অর্থনীতি ও উন্নয়নের অধিকারী তারা একত্রিত হয়ে বিশাল কিছু অর্জন করে ফেলতে পারে। এ প্রসঙ্গে উ বাই-ই সাম্প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতির কিছু ঘটনার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ব্রিকস সদস্যভুক্ত রাষ্ট্র হওয়ার সুবাদে গত বছর রাশিয়া যখন ইউক্রেন ও ক্রিমিয়া নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তখন ব্রিকস দেশগুলো তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। অনুরূপভাবে চীন, দক্ষিণ চীন সাগরে তার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কটে অপরাপর ব্রিকস দেশগুলোর সমর্থন পেয়ে যাচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় নিলে জিয়ামেনের ব্রিকস সম্মেলন এর সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ করে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করবে।
×