স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে গৃহীত সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে প্যানেলের বাইরে থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেয়া ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের লঙ্ঘন বলে দাবি তুলেছেন সিনেট সদস্যরা। তবে উপাচার্য নিয়োগে আইন লঙ্ঘনের সকল অভিযোগ খ-ন করলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি ভারপ্রাপ্ত ভিসি নিয়োগ দেননি। একজন উপ-উপাচার্যকে সাময়িকভাবে ভিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আইনী ক্ষমতাবলে নিয়োগ দিয়েছেন। এখানে আইনের কোন ব্যত্যয় হয়নি।
এর আগে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানকে নিয়োগ দেয়া হয়। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এ অধ্যাপককে উপাচার্য হিসেবে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একটি অংশের ভোট ছাড়াই উপাচার্য প্যানেল চূড়ান্ত করা নিয়ে সমালোচনা এবং কয়েকজন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটের করা মামলায় ওই প্যানেলের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাওয়ার এক মাসের মাথায় সরকারের তরফ থেকে উপাচার্যের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামানকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রজ্ঞাপনের শর্তে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি মনে করলে যেকোন সময় তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন। বিধি অনুযায়ী পদ সংশ্লিষ্ট সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী হিসেবে সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন।
জানা গেছে, সোমবার নিয়োগের আদেশের সময় অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বরগুনার পাথরঘাটায় তার গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। মঙ্গলবার ঢাকায় ফিরতে দেরি হওয়ায় তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমি প্রজ্ঞাপনের কপি হাতে পেয়েছি। ঢাকার ফিরতে একটু দেরি হয়েছে তাই যোগদান করতে পারিনি। নতুন দায়িত্ব সম্বর্কে তিনি বলেন, এখনই কোন আগাম মন্তব্য করতে চাইনা। নিয়োগের প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি দেখি। যেখাবে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে সেভাবেই সকলকে নিয়ে কাজ করব। এদিকে ‘ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য’ নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশের পর কিছুটা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে অনেকের মাঝেই।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১ জন সিনেট সদস্যের সই করা এক বিবৃতিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন সিনেটররা। তারা দাবি করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে গৃহীত সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে প্যানেলের বাইরে থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেয়া ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের লঙ্ঘন। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের ওপর আঘাত ও সিনেটকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্রের পথ সুগম হয়েছে বলেও মনে করছেন তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যরা গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি দেখে বিস্মিত হয়েছি। উপাচার্য নিয়োগের উদ্দেশে গত ২৯ জুলাই সিনেট কর্তৃক তিন সদস্যের প্যানেল বিষয়ে একটি রিট আবেদন আদালতে বিচারাধীন এবং এই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্বপদে বহাল থাকবেন বলে উচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে। এমতাবস্থায় অন্য একজনকে (তিন সদস্যের প্যানেলের বাইরে) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া সরকার, উচ্চ আদালত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিব্রতকর।
তবে উপাচার্য নিয়োগে আইন লঙ্ঘনের সকল অভিযোগ খ-ন করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, রাষ্ট্রপতি ভারপ্রাপ্ত ভিসি নিয়োগ দেননি। একজন উপ-উপাচার্যকে সাময়িকভাবে ভিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে সাময়িকভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এই ক্ষমতা রাখেন। তাতে আইনের কোন ব্যত্যয় হয়নি।
মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি তার আইনী ক্ষমতাবলে এ নিয়োগ দিয়েছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, সেই হিসেবে তিনি ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার নিয়োগ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর পদ শূন্য হয়ে যায় গত ২৪ অগাস্ট, এটি চার বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। সেই পদে নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশেও বলা হয়েছে, উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামানকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট তিনজনের একটি প্যালেন নির্বাচন করে রাষ্ট্রপতিকে দিতে পারে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে উপাচার্য করতে পারেন, নাও করতে পারেন। বাইরে থেকেও তিনি নিয়োগ দিতে পারেন।
সিনেট সভায় উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, একটি মিটিং হয়েছিল। কিন্তু মামলা হয়ে সেই প্যানেলের কার্যক্রম স্থগিত আছে। উপাচার্য পদটি তো খালি হয়ে ছিল। অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে নিয়োগের আদেশে সাময়িকভাবে নিয়োগের কথা বলে যেসব শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে- সে বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একজন সহকারীকে সাময়িক দায়িত্ব দিলে যেমন তাকে ভারপ্রাপ্ত বলা হয়, অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের নিয়োগ তেমন নয়। এটি ফরমেটের মতো। আরেফিন সিদ্দিক যখন প্রথম দফায় সাময়িকভাবে উপাচার্য হলেন, তখন ওই শর্তগুলোই লেখা ছিল। সাময়িক নিয়োগ হলেও চার বছরের জন্য নিয়োগ দেয়ার সময় যেসব শর্ত থাকে, নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাই আছে।