ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লিয়নের ৭ উইকেট শিকারের রহস্য, অন্তত আরও ১৫০ রান বেশি হওয়া উচিত ছিল

টপ অডারে ধস- তা না হলে রান আরও বেশি হতো

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

টপ অডারে ধস- তা না হলে রান আরও বেশি হতো

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ সাগরিকার উইকেট মূলত ব্যাটসম্যানদের। নির্জলা ব্যাটিং ট্র্যাক। সেটা চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয়দিন শেষে দাবি করেছেন বাংলাদেশী অলরাউন্ডার নাসির হোসেন। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা উইকেট বিলিয়ে এসেছেন। কারণ ব্যাটসম্যানরা উইকেট বুঝতে পারেননি এমনটাই প্রথমদিন শেষে জানিয়েছিলেন সাব্বির রহমান। অথচ এই উইকেটে অফস্পিনার নাথান লিয়নও কার্যকর হয়েছেন বাংলাদেশ দলের প্রথম ইনিংসে প্রথম সারির ৫ ব্যাটসম্যানই বাঁহাতি হওয়ার কারণে। তিনি যে ৭ উইকেট শিকার করেন তার মধ্যে ৫ জনই ছিলেন বাঁহাতি। ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো ৭ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ বোলার ও চতুর্থ স্পিনার হিসেবে ৭ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান। তবে যে উইকেটে তিনি ঘূর্ণি ঝড় তুলেছিলেন সেখানে বাংলাদেশের স্পিনত্রয়ী সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম ছিলেন একেবারেই ধারহীন। এর মূল কারণ অবশ্য উইকেট ব্যাটিংবান্ধব হয়ে ওঠা। শুরুর দিন থেকেই আসলে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট ব্যাটসম্যানদের পক্ষে ছিল। তবে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংই ডুবিয়েছে। সেটা পরিষ্কার হয়েছে দ্বিতীয়দিন অসিরা ব্যাটিংয়ে নামার পর। তবে কি সাগরিকা টেস্ট ৫ দিনে গড়াচ্ছে? পরিসংখ্যানও সেটাই বলছে। সাগরিকার উইকেট প্রস্তুত করেছিলেন যারা তাদের ভাষ্যমতে দিনকে দিন গতিপ্রকৃতি পাল্টে ব্যাটসম্যানদের জন্য সহজ হয়ে উঠবে এটি। আর প্রথমদিন ব্যাট করা কঠিন হবে। এ বিষয়টিই হয়তো প্রভাব ফেলেছিল ব্যাটসম্যানদের মনে। এ কারণেই সাব্বির বলেছিলেন, ‘ব্যাটসম্যানদের মানসিক সমস্যা। আমরা উইকেট বুঝতেই পারিনি।’ স্বাগতিক দল হয়েও উইকেট বুঝতে না পারার খেসারত লিয়নের ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে উইকেট খুইয়ে আসা। প্রথমদিনে মাত্র ৩ ঘণ্টায় ৫ ওপরের সারির ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু সেই উইকেটেই পরে সাব্বির ও মুশফিকুর রহীম ঝড় তুলেছেন। ১০৫ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়েছেন ষষ্ঠ উইকেটে। যার ফলে পরের দেড়টি সেশনে মাত্র একটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ দল। সেখানেও প্রমাণ হয়ে যায় বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা উইকেট দিয়ে এসেছেন। আর ধারাবাহিক পারফর্মার তামিম ইকবালের উইকেট দ্রুত খুইয়ে আরও দুর্বল হয়ে যান ব্যাটসম্যানরা। সঠিক লাইনে বল ফেলে লিয়ন একাই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপাকে ফেলেন। প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে একাই এলবিডব্লিউ করে তিনি নতুন রেকর্ড গড়েন। সেই লিয়ন দ্বিতীয় দিনেও আরও দুটি উইকেট নিয়েছেন। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই ৪ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ দল। অথচ শুরু থেকেই উইকেট ব্যাটসম্যানদের পক্ষে কথা বলছিল। নাসির তেমনটাই বলেছেন। কিন্তু তিনি এবং মুশফিক দু’জনই ভুল শট খেলে উইকেট খরচা করে ফিরে যান সাজঘরে। আর এতেই প্রত্যাশিত সংগ্রহ পায়নি বাংলাদেশ দল। এ বিষয়ে লিয়নও প্রথমদিন বলেছিলেন, ‘অনেক কঠিন একটা দিন পার করেছি। এত গরমে বোলিং করা চ্যালেঞ্জিং।’ প্রথমদিনের পর উইকেটে পর্যাপ্ত রোদ পেয়ে একেবারে খটখটে হয়ে যায়। ফলে বিন্দুমাত্র টার্ন আদায় করতে পারেননি সাকিব, তাইজুল ও মিরাজরা। লিয়নের সাফল্যের পর ডানহাতি অফস্পিনার মিরাজকে দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করেও ফল হয়নি। তিনি দাগ কাটতে পারেননি অসি ব্যাটসম্যানদের ওপর। একমাত্র সমস্যা ছিল বল নিচু ও ধীর হয়ে আসা। এবার বাংলাদেশ সফরে আসার পর থেকেই নেটে দীর্ঘক্ষণ এ ধরনের বল মোকাবেলার অনুশীলন করেছে অসি ক্রিকেটাররা। একই ট্র্যাকে বাংলাদেশ দল রান করতে পারেনি উইকেট না বুঝতে পারায়। কিন্তু বাংলাদেশকে ১১৩.২ ওভার বোলিং করে অসি ক্রিকেটাররা ঠিকই উইকেট বুঝে ফেলেছেন এবং সেভাবেই ব্যাট করেছেন। মাত্র ২ উইকেটে ২২৫ রান তুলে এখন বাংলাদেশকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে তারা। কিউরেটররা ম্যাচ শুরুর আগে বলেছিলেন, ‘এই ম্যাচ ৫দিন যাওয়া সম্ভব নয়।’ কিন্তু সেটাই ঘটতে চলেছে। অন্তত নাসির বললেন, ‘৫ দিনেই গড়াবে এই টেস্ট।’ তাহলে বাংলাদেশকেও অনেক ভাল ব্যাট করতে হবে দ্বিতীয় ইনিংসে। সেক্ষেত্রে আবার সেই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের লড়তে হবে ডানহাতি অফস্পিনার লিয়নের বিরুদ্ধে। তিনি এর আগে ভারতের বিরুদ্ধে তিনবার ৭ উইকেট নিয়েছিলেন (সর্বশেষবার এ বছর মার্চে ৫০ রানে নেন ৮ উইকেট)। এর আগে বাংলাদেশের মাটিতে হওয়া সর্বশেষ যে ৫ টেস্টের ফলাফল হয়েছে সেগুলোর খতিয়ান চলতি টেস্ট ৫ দিনে শেষ হওয়ার পক্ষে। এই ৫ টেস্টের মধ্যে বাংলাদেশ যে তিন ম্যাচ জিতেছে তার দুটি ছিল মিরপুরে, একটি সাগরিকায়। গত বছর ইংল্যান্ডকে ৩ দিনে এবং এবার সিরিজের প্রথম টেস্টে ৪ দিনে জয় পায় বাংলাদেশ। আর বাকি দুই টেস্টে প্রতিপক্ষরা জিতে যায়। এর মধ্যে মিরপুরে ২০১৫ সালের মে মাসে পাকরা জিতেছিল ৪ দিনে। কিন্তু চট্টগ্রামে বাকি দুই টেস্ট ৫ দিন গড়িয়েছে। গত বছর ইংল্যান্ডের কাছে পঞ্চমদিনে গিয়ে হার মেনেছে বাংলাদেশ। আর ২০১৪ সালের নবেম্বরে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৫ দিনে সাগরিকায় জিতেছিল টাইগাররা। এসব পরিসংখ্যান বলছে এবার সাগরিকা টেস্ট ৫ দিনেই গড়াচ্ছে।
×