ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভয়াবহ নিপীড়ন

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ভয়াবহ নিপীড়ন

রোহিঙ্গা নিপীড়ন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, গত এক সপ্তাহে লাখখানেক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সামরিক জান্তারা বোমা মেরে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্য দাবি করে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তরুণদের। পরে তাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। যাদের ধরতে পারছে না তাদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। আগুন জ্বেলে মানুষ হত্যা, ঘর পোড়ানো যে কত সহজ মিয়ানমারের সেনারা সে প্রমাণ রেখেছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী গত ১২ দিনে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এক লাখের মতো রোহিঙ্গা। অভিযানে নিহত হয়েছে চার শতাধিক রোহিঙ্গা। বিশ্বের মধ্যে বর্তমানে দেশহীন সম্প্রদায় হচ্ছে রোহিঙ্গা। এ এক বেদনার কথা। ১৯৪২ সালে জাপানীদের চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এই রোহিঙ্গারা। তখন প্রায় চল্লিশ হাজার রোহিঙ্গা চট্টগ্রামে এসে আশ্রয় নেয়। আর ১৯৭৮ সালে নির্যাতনের মুখে নাফ নদীর বানের মতো কয়েক লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটে বাংলাদেশে। এদের মধ্যে কয়েক হাজার পরে ফিরে গেলেও অধিকাংশই থেকে যায় এবং বংশ বিস্তার ঘটায়। এর পরও দফায় দফায় রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করতে থাকে। আবারও বড় ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটে ১৯৯১ সালে। ২০১৬ সালেও সেনা নিপীড়নের মুখে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নেয়। ধারণা করা হয়, পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এখনও এদেশে আশ্রিত। আর গত আগস্ট মাস থেকে নিপীড়নের মাত্রা সীমাহীন হওয়ার কারণে দলে দলে রোহিঙ্গারা আসছে। চার দশক ধরে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ভার বহন করে আসছে। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে কোন অগ্রগতি নেই বললেই চলে। বিস্ময়কর যে, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানের নেতৃত্বে রাখাইন রাজ্যে শান্তির লক্ষ্যে গঠিত কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। ধ্বংসলীলা নতুন করে শুরু হয়। শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ রাখাইনের জনগণের ভবিষ্যত প্রসঙ্গে কোফি আনান কমিশন ছেষট্টি পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে মোট আটান্নটি সুপারিশ করেছে। আশা ছিল ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাখাইন নিয়ে শান্তি আলোচনা শুরু হবে। কিন্তু ঘটল বিপরীত ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ে এটাই হচ্ছে রাখাইনে সবচেয়ে বড় সংঘাত। ইতোমধ্যে জঙ্গী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ভাষ্য হচ্ছে, রোহিঙ্গার ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ইন্ধন রয়েছে। সমস্যা সমাধানে চীন, ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলো এগিয়ে আসছে না। বরং নীরব দর্শক যেন। রোহিঙ্গাদের স্রেফ মুসলিম হিসেবে দেখার কারণে বিশ্ববাসীর আগ্রহ বাড়ছে না নিপীড়নের বিরুদ্ধে। জাতিগত দিক থেকে বিবেচনা না করে মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করা উচিত। পাকিস্তানী প্ররোচনায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি নামে গড়ে ওঠা সংগঠনটি একই সঙ্গে ২০টি তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালায় বলে মিয়ানমারের দাবি। কিন্তু এটা মিয়ানমার সরকারের নতুন ধরনের রাজনৈতিক চালও হতে পারে। আর এই ঘটনার উল্লেখ করে বাড়ানো হয়েছে নিপীড়ন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের কোন নীতিমালা নেই। নীতিমালা প্রণয়ন অবশ্যই জরুরী। এমনকি রোহিঙ্গাদের কোন তালিকাও প্রণীত হচ্ছে না। অথচ ভারত তাদের দেশে আশ্রিত ষাট হাজারের তালিকা করেছে। বাংলাদেশও আশঙ্কা করছে শরণার্থীদের সঙ্গে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ কোন সফলতা দেখাতে পারেনি। শক্তিধর দেশগুলোও নির্বাক। বাংলাদেশ পড়েছে বিপাকে। বিশ্ববাসীর এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা জরুরী।
×