ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় নির্বিঘ্নে কাটল ঈদ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় নির্বিঘ্নে কাটল ঈদ

শংকর কুমার দে ॥ এবারের পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে, যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে পুলিশ প্রশাসনের দাবি। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, অজ্ঞানপার্টি, মলম পার্টি, পথে পথে চাঁদাবাজি, চামড়া সন্ত্রাস, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, জালনোটের ব্যবসা ও প্রতারণা বন্ধ ও যানজট মুক্ত ঈদ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময় অতিবাহিত হওয়ায় জনমনে স্বস্তির নিঃশ্বাস বয়েছে। বিশেষ করে সম্ভাব্য জঙ্গী হামলার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গোয়েন্দা নজরদারি ও সতর্কতা অবলম্বন আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের চাবিকাঠি বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি। পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিটগুলোর সদস্যদের পারিবারিকভাবে ঈদ বিনোদন ছাড়াই ছুটিবিহীন ব্যাপক তৎপরতা প্রশংসা অর্জন করেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, এবারের ঈদের আগে থেকে ছুটির পর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার কৃতিত্বের দাবি করতেই পারে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ঈদ উপলক্ষে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়। ঈদের দিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোন ঈদগায় জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটতে দেয়া হয়নি। কোন রাজনৈতিক হত্যাকা- বা গুপ্ত হত্যার ঘটনা ঘটেনি। বড় ধরনের ছিনতাই বা ডাকাতির খবর পাওয়া যায়নি। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি নিয়ে সহিংসতা হয়নি। মাদকদ্রব্য, বৈদেশিক মুদ্রাসহ বড় ধরনের চোরাচালান ছিল অনুপস্থিত। এমনকি বহুল সমালোচিত ক্রসফায়ারের কোন ঘটনা ঘটেনি। জাল টাকার জমজমাট ব্যবসার কোন খবর পাওয়া যায়নি। যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু থাকায় ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাতায়াতে কোন ভোগান্তি ও দুর্ভোগ ছিল না। যুদ্ধাপরাধীদের তৎপরতা, জঙ্গী হামলার উল্লেখযোগ্য কোন রেকর্ড নেই পুলিশের খাতায়। পরিকল্পিতভাবে ডিএমপির ইউনিফর্ম পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্য, মহিলা পুলিশ দলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দশ সহস্রাধিক সদস্যের নিরলস চেষ্টায় রাজধানীবাসীর কাছে এবারের ঈদ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের ছুটিতে জনমনে বয়ে এনেছে স্বাস্তির নিঃশ্বাস। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা জানান, এবারের ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসহ বিশেষ বিশেষ জায়গায় ব্যাবস্থা করা হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যে কোন ধরনের আপৎকালীন মুহূর্ত মোকাবেলার জন্য রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়। জঙ্গীদের প্রাধান্য ও তৎপরতা রয়েছে এমন এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বেশি। বিশেষ নজরদারির মধ্যে রাখা হয় যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণস্থান ও গেটগুলোতে বসানো হয় আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয়েছে। ঈদগাহ ময়দান, উচ্চ আদালতসহ আশপাশের বসানো হয়েছে বিপুলসংখ্যক সিসি ক্যামেরা। পাশাপাশি রাখা হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। ঈদগাহ ময়দানে আসা সর্বস্তরের মুসুল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও তার আশপাশের এলাকায় ভাসমান দোকানপাট ও হকার তুলে দেয়া হয়। যানবাহন চলাচলেও নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিট দফায় দফায় তল্লাশি চালায়। র‌্যাবের ডগ স্কোয়াডও ছিল তৎপর। রাজধানীর কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, এক কোটিরও বেশি মানুষের মেগাসিটি রাজধানী ঢাকাতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটতেই পারে। এটা সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তুলনায় কিছুই নয়। পবিত্র ঈদ-উল-আযহার শেষে ঈদের ছুটিতে ফাঁকা হয়ে যাওয়া রাজধানী ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ম্যাজিক দেখিয়েছে বলে আমরা দাবি করতে পারি। ঈদের ছুটিতে দশ সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, প্রায় দুই কোটি মানুষের মেগাসিটি রাজধানী ঢাকাতে অপরাধী চক্রের তৎপরতা থাকবে এবং বিচ্ছিন্ন কিছু অপরাধ সংঘঠিত হবে তা ধরে নিয়েই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ছক কষা হয়। তারপরও এবারের ঈদের ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণের ফলে অপরাধ প্রবণতার হার ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। এতে ঘরমুখো, ঘরফেরা মানুষসহ রাজধানীবাসী নিশ্চিন্তে নির্বিঘেœ আনন্দ বিনোদনের মধ্য দিয়ে এবারের পবিত্র ঈদ-উল-আযহার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ছুটি কাটিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ বিনোদন ভাগাভাগি করার বিসর্জন দিয়ে সাধারণ মানুষজনের জানমাল নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট থাকার ভূমিকা পালন করেছে, যা প্রশংসা অর্জন করেছে।
×