ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে সংঘবদ্ধ সুন্দরী নারী অপরাধী চক্র

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রাজধানীতে সংঘবদ্ধ সুন্দরী নারী অপরাধী চক্র

গাফফার খান চৌধুরী ॥ রাজধানীতে সংঘবদ্ধ সুন্দরী নারী অপরাধী চক্র সক্রিয়। তারা দামী স্বর্ণালঙ্কার পরিধান করে আর দামী গাড়ি হাঁকিয়ে বিয়ের দাওয়াত কার্ড দেয়ার কথা বলে টার্গেটকৃত বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ভাব জমিয়ে কৌশলে স্বর্ণালঙ্কার, টাকা পয়সাসহ মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ঈদের আগে রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন রায়ের বাজারের গদিঘর এলাকার একটি বাড়িতে ঘটেছে এমন এক অভিনব প্রতারণা। প্রতারণার শিকার হয়েছেন তানজিনা আক্তার নামের এক গৃহিণী। এ বিষয়ে হাজারীবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বাড়ির বাসিন্দারা জানান, সন্ধ্যার দিকে এক মহিলা বাড়ির গেটে আসে। তার সারা গায়ে দামী স্বর্ণালঙ্কার। লম্বা। দেখতে খুবই সুন্দরী। বাড়িতে প্রবেশ করতে গেলে দারোয়ান বাধা দেয়। তিনি বাড়িতে এসেছেন বলে জানান। ওই গৃহিণীর আমেরিকা প্রবাসী ননদের বান্ধবী বলে পরিচয় দেয় ওই মহিলা। বিষয়টি দারোয়ান ওই গৃহিণীকে জানান। স্বাভাবিক কারণেই ভদ্রতার খাতিয়ে ওই গৃহিণী মহিলাকে বাড়িতে প্রবেশ করার অনুমতি দেন। মহিলা গৃহিণীর ফ্ল্যাটে গিয়ে হাজির হয়। ওই মহিলা গৃহিণীকে বলেন রেডিসন হোটেলে তার ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। তাই দাওয়াত দিতে এসেছেন। মহিলা নিজেকে ওই গৃহিণীর আমেরিকায় থাকা ননদের বান্ধবী বলে পরিচয় দেন। বিয়ের জন্য তারা আমেরিকা থেকে ঢাকায় এসেছেন। আলাপ আলোচনায় ওই মহিলা গৃহিণীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সম্পর্কেও নানা কিছু বলেন। যা সত্য। এতে করে গৃহিণীর মনে বিশ্বাস হয়। গৃহিণী ওই মহিলাকে ড্রয়িং রুমে বসতে দেন। ওই মহিলা গৃহিণীকে বলেন, ঈদের সময় ভাল করে সাজগোছ করবেন। গৃহিণী জানান, তার স্বামী বাইরে আছেন। তিনি এলে সাজগোছ করবেন। এদিকে মহিলা বলেন, আমেরিকা থেকে আমার ভাই ও অন্য সদস্যরাও এসেছেন। তারাও আপনার বাসায় বেড়াতে আসছেন। তারা নতুন অতিথি। তারা এসে অগোছালো দেখলে খারাপ লাগবে। তাই গৃহিণীকে সাজার জন্য জোর করতে থাকেন। এক পর্যায়ে গৃহিণী স্বর্ণালঙ্কারের বাক্স বের করে সাজগোছ করতে থাকেন। ইতোমধ্যেই ভাব জমায় ওই মহিলা ফ্ল্যাটের প্রতিটি রুমই দেখে নেয়। বাক্সে থাকা অনেক গহনার মধ্যে কিছু নিয়ে সাজগোছ করেন। বাকিগুলো বাক্সেই থেকে যায়। বাক্সটি পাশেই রেখে দেন। কারণ ওই মহিলার গায়ে যে পরিমাণ গহনা আছে, তার চেয়ে অনেক কম আছে ওই বাক্সে। ফলে ওই মহিলা গহনা হাতিয়ে নিতে পারে, সেটি গৃহিণীর কল্পনারও বাইরে। সাজগোছ করার পর দু’জনে আবার গল্প করতে থাকেন। এ সময় মহিলা মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। কথাবার্তার ভাব অন্যরকম। ফোনে তার ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, বিদেশ থেকে আনা উন্নতমানের চকলেট নিয়ে আয় বাচ্চার জন্য। বেশি দেরি করিস না। এমন আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে গৃহিণী ছোটখাটো প্রয়োজনের জন্য এক রুম থেকে অন্যরুমে যাতায়াত করছিলেন। এই ফাঁকে ওই মহিলা গহনার বাক্স নিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলে। এরপর অন্য একটি রুম থেকে বিদ্যুতের বিলের কাগজ নিয়ে আসে। সেই কাগজ একটি শপিং ব্যাগে ভরে। এ সময় গৃহিণী বাথরুমে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় ওই নারী কাগজের ব্যাগটি গৃহিণীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন, ব্যাগে চার হাজার ডলার আছে। ডলারগুলো রেখে দেন। আমি পরে এসে নিয়ে যাব। গৃহিণী তাতে রাজি হয় না। গৃহিণী বলেন, যদি হারিয়ে যায়, তখন কি হবে। তখন ওই মহিলা বলেন, আমেরিকায় অনেক টাকা কামিয়েছি। জানি আপনি খুবই দায়িত্বশীল মানুষ। হারানোর প্রশ্নই আসে না। যদিও নিতান্তই হারিয়ে যায়, তাহলে আমার কোন দাবি নেই। নেন, চট করে বাথরুম সেরে আসুন। বাথরুম থেকে বেরিয়ে গৃহিণী দেখেন বাড়িতে ওই মহিলা নেই। সঙ্গে সঙ্গে নিচে থাকা দারোয়ানের কাছে গেলে তিনি মহিলা দ্রুত বেরিয়ে গেছেন বলে জানান। পরবর্তীতে বাসায় রেখে যাওয়া ডলারের ব্যাগ তল্লাশি করে দেখা যায়, তার ভেতরে বাসারই বিদ্যুত বিলের সব কাগজ। আর বাড়িতে পরিবারের সবার স্বর্ণালঙ্কার রাখার পুরনো বড় বাক্সটি নেই। প্রায় ২০ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে গেছে মহিলা। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলছেন, এরা সংঘবদ্ধ অপরাধী। তারা নানা কৌশলে বাসায় প্রবেশ করে এ ধরনের অপরাধ করে থাকে। তবে এ ধরনের অপরাধে জড়িতরা টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়। আর সঙ্গে নিকট প্রতিবেশী ছাড়াও ঘনিষ্ঠ অন্যরা জড়িত থাকে। তারাই মূলত প্রতারক চক্রের কাছে পরিবার সম্পর্কে তথ্য দেয়। সেই তথ্যকে পুঁজি করেই প্রতারণার এমন ঘটনা ঘটায়। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
×