ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম টেস্ট

তবু সুবিধাজনক অবস্থানে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

তবু সুবিধাজনক অবস্থানে বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ বৈরী আবহাওয়া, দু’দিন বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল সাগরিকা টেস্টে, বৃষ্টির হানা দেয়ার শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত রোদ্রকরোজ্জ্বল পরিবেশে নির্বিঘেœই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথমদিনটা শেষ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টের। শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়লেও ৬ উইকেটে ২৫৩ রান তুলে স্বস্তিদায়ক অবস্থান নিয়েই শেষ করেছে টাইগাররা। এমনটাই দাবি বাংলাদেশের পক্ষে ৬৬ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলা সাব্বির রহমান। শুরুটা হয়েছিল যথারীতি এবং অনুমিত স্পিন ভেল্কিতে। তবে এবার শিকার ছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। সাগরিকার উইকেট উত্তাল হয়েছে অসিদের স্পিন আক্রমণে। সেই খাদের কিনার থেকে বাংলাদেশকে টেনে তুলেছেন সাব্বির রহমান ও মুশফিকুর রহীম জোড়া হাঁফসেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। কিন্তু প্রতিপক্ষের ৬ উইকেট তুলে নেয়াতেই দিনশেষে তৃপ্ত অসিরা। বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মিরপুর টেস্টের মতোই ভুগিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ডানহাতি অফস্পিনার নাথান লিয়ন। বাংলাদেশের একাদশে ৮ ব্যাটসম্যান! পুরো একাদশে মাত্র এক পেসার আর ৩ জন স্বীকৃত স্পিনার। এমনটা বাংলাদেশ দল গত বছর অক্টোবরেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মিরপুর টেস্টে করেছিল, এমনকি ভারতের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের জুনেও একাদশ তেমনই ছিল। এমন সমন্বয়ের কারণেই পেসার শফিউল ইসলামের জায়গায় ঠাঁই করে নেন গত দুই টেস্টে একাদশের বাইরে থাকা মুমিনুল হক। সবমিলিয়ে দলে ৭ বাঁহাতি খেলানোর ঘটনা অবশ্য বিরল বাংলাদেশের জন্য। আর সে কারণেই ১৯৩৮ সালের পর এই প্রথম বোলিং আক্রমণের শুরুতেই স্পিন নিয়ে আসে অসিরা। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে ডানহাতি অফস্পিন কার্যকর হওয়ায় ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আসেন লিয়ন। ৭৯ বছর আগে যেটা তাদের হয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে করেছিলেন লেগস্পিনার বিল ও’রেইলি যার ডাক নাম টাইগার। সেই ইতিহাসের পুনর্জন্ম ঘটায় অসিরা বাংলাদেশের প্রথম সারির ৫ জন ব্যাটসম্যানই বাঁহাতি হওয়ার কারণে। ২০০৬ সালে সাগরিকার এই মাঠেই শেন ওয়ার্ন, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল আর ড্যান কালেনÑ এই তিন স্পিনারকে নিয়ে একাদশ গড়েছিল অসিরা। সে কারণে আবারও পুনরাবৃত্তি করে তারা একাদশে। তবে ম্যাচ শুরুর আগে বৃষ্টির শঙ্কা ছিল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা আগেই ঝলমলে রোদ ওঠাতে ভাল একটি টেস্ট ম্যাচ শুরুর প্রত্যাশা নিয়ে দর্শকরা আসতে থাকেন টাইগারদের লড়াই দেখতে। শুরুতেই তারা বাড়তি উন্মাদনার প্রয়াস পেয়ে যায় বাংলাদেশ টসে জেতার কারণে। মিরপুর থেকে চট্টগ্রামÑ একটি ইতিহাস রচনার সুযোগ। ২০০৫ ও ২০১৪ সালে জিম্বাবুইয়ে এবং ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পর সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ দলই। এবার সাগরিকাতেও সেই স্বপ্ন মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ ২০ রানের ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয়ায়। কিন্তু শুরুতেই সেই প্রত্যাশা বড় ধাক্কা খায় যখন নির্ভরযোগ্য ওপেনার তামিম ইকবাল ৯ রানে সাজঘরে ফেরেন। এর আগেও একবার স্লিপে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লিয়নের বলে আর বাঁচতে পারেননি, হয়েছেন এলবিডব্লিউ। একে একে চার টপঅর্ডার ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার ও মুমিনুল হককে এলবিডব্লিউ করেই সাজঘরে ফিরিয়ে অনন্য এক কীর্তি গড়েন তিনি। টেস্ট ইতিহাসে এর আগে কোন বোলার টপঅর্ডার চারজনের উইকেট এলবিডব্লিউ করে নিতে পারেনি। মাত্র ৭০ রানে ৪ উইকেট যাওয়ার মাঝে অবশ্য সৌম্য-মুমিনুল ৪৯ রানের জুটি গড়েছিলেন। সেই জুটি ভাঙ্গে ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙ্গে দারুণ খেলতে থাকা সৌম্য ৩৩ রানে সাজঘরে ফেরার পর। ইমরুল ৪ রানে ফিরেছেন আগেই। এরপর মুমিনুলও ৩১ রানে আউট হন লিয়নের ঘূর্ণিতে। সাকিব আল হাসানও (২৪) দ্রুত ফিরে গেলে ১১৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ দল। ষষ্ঠ উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন মুশফিক-সাব্বির। উভয়ে অর্ধশতক করেন। সাব্বির দীর্ঘ ৮ ইনিংস পর অর্ধশতকের দেখা পেয়ে ক্যারিয়ারসেরা ৬৬ রান করে সাজঘরে ফিরলেও ততোক্ষণে বিপদ কাটিয়েছে বাংলাদেশ। মুশফিকের সঙ্গে ১০৫ রানের জুটি গড়ে তিনি এ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রেকর্ড জুটির কীর্তি গড়েন। সাব্বির সাজঘরে ফিরলেও মুশফিক ছিলেন সুস্থির। দিনের শেষ অংশটা তিনি নাসির হোসেনকে নিয়ে নির্বিঘেœই পাড়ি দিয়েছেন। ১৮তম ফিফটি হাঁকিয়ে মুশফিক অপরাজিত থাকেন ১৪৯ বলে ৫ চারে ৬২ রান নিয়ে। আর নাসির ১৯ রান নিয়ে ব্যাট করছেন। দিনশেষে ৬ উইকেটে যে ২৫৩ রান করেছে বাংলাদেশ, এর মধ্যে লিয়নের শিকার ৫। তিনি ৭৭ রান দিয়ে এ উইকেট শিকার করেন। টানা তৃতীয় টেস্টে ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন তিনি। তবে দিনশেষে তৃপ্ত সাব্বির বলেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত খেলেছি। মুশফিক ভাই আছে, নাসির আছে। ২৫৩ করেছি, উইকেট একটু বেশি পড়েছে। জানি না কত রান নিরাপদ। আমরা প্রথমদিনে ভাল খেলেছি, এটিই খুশির ব্যাপার। দ্বিতীয়দিনে ভাল খেলার চেষ্টা করব। আমরা আপাতত ভাল অবস্থানে আছি।’ কিন্তু লিয়নেরও দাবি তারা ভাল অবস্থানে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৬ উইকেট তুলে নিয়েছি। তাই নিজেদের যে অবস্থান তাতে আমরা অনেক খুশি। আশা করছি আগামী দিন তাদের শেষ কয়েকটি উইকেট দ্রুত তুলে নিতে পারব আমরা।’ উভয় দলের এ সন্তুষ্টির অবস্থা কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে দ্বিতীয়দিনের খেলা শুরু হওয়া পর্যন্ত। সাগরিকার রহস্যময় উইকেটে সাধারণত প্রতিদিনই চরিত্র পাল্টে যায়। কি অপেক্ষা করছে আজ তা দেখার জন্য অপেক্ষা আবার বল মাঠে গড়ানো পর্যন্ত।
×