ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

বিশ্বে মর্যাদার সঙ্গে দাঁড়াতে ত্যাগ ও নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করুন

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বিশ্বে মর্যাদার সঙ্গে দাঁড়াতে ত্যাগ ও নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করুন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের চলমান অগ্রগতি অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ যাতে বিশ্বে মর্যাদার সঙ্গে দাঁড়াতে পারে সেজন্য ত্যাগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। এজন্যই আন্তরিক ও নিবেদিতভাবে প্রত্যেকের কাজ করা উচিত, যাতে প্রিয় মাতৃভূমির সমৃদ্ধির পথে যে যাত্রা শুরু হয়েছে তা যেন অব্যাহত থাকে এবং বিশ্বে এ দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। পবিত্র ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে গত শনিবার গণভবনে দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ঈদ-উল আযহা মানব কল্যাণের জন্য আত্মত্যাগের একটি মহান পথ। যে কোন মানবতার জন্য আত্মোৎসর্গে প্রস্তুত থাকা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এ সমৃদ্ধি ধরে রাখতে চাই। স্বাধীনতার যে মূল চেতনা তা সমুন্নত রেখে বাংলাদেশকে আমি বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, জাতি হিসেবেও আমরা বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসন নিয়ে বাস করতে চাই। দেশবাসী ও হজ যাত্রীদের প্রতি ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশ আমাদের, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন অনুযায়ী এদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়তে চাই। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমি এই সমৃদ্ধি অব্যাহত রাখব ইনশাল্লাহ। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সম্প্রতি বন্যা পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবেলা করেছে। সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য নতুন ঘরবাড়ির ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তিনি বলেন, জাতির পিতা জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। আর দেশের মানুষ সরকারের এই সাফল্য ভোগ করছে এবং তারা লাভবান হয়েছে। তিনি বলেন, ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। মাথাপিছু আয় বাড়ার পাশাপাশি দারিদ্র্যবিমোচনের হার শতকরা ২২ ভাগ হ্রাস পেয়েছে, দারিদ্র্যবিমোচনের হার আরও কমে আসবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব। তিনি জঙ্গীবাদ থেকে সমাজকে সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং অভিভাবক, শিক্ষক, ইমাম, সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পুরোহিত এবং সর্বস্তরের জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তরুণরা যাতে বিপথগামী না হয় সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ দেশ উন্নতির পথেও এগিয়ে যাবে। এ সময় বঙ্গবন্ধু কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সম্পাদকম-লির সদস্য ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শেখ রেহানার সঙ্গে আলাপ প্রধান বিচারপতির পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনের প্রধানদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, আপীল বিভাগ ও হাইকোর্টর বিভাগের বিচারপতিগণ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর প্রথম একসঙ্গে হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিচারপতি এস কে সিনহা, করলেন ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। অনুষ্ঠানে শেখ রেহানার সঙ্গেও প্রধান বিচারপতির একান্ত আলাপ করতে দেখা যায়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রধান বিচারপতি যখন গণভবনে পৌঁছান তখন প্রধানমন্ত্রী গণভবনের মাঠে কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কথা বলছিলেন। অনুষ্ঠানে প্যান্ডেলের উত্তর প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, প্রধান বিচারপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বসার স্থান নির্ধারিত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সোফার বাঁ পাশে ছিল প্রধান বিচারপতির বসার স্থান। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ঢুকে তার জন্য নির্ধারিত সোফার কাছে গিয়ে দাঁড়ালে শেখ রেহানাও সেখানে যান। প্রায় মিনিট পাঁচেক তাদের দুজনকে কথা বলতে দেখা যায়। ওই সময় তাদের কাছে কেউ ছিলেন না। একটু দূরে দাঁড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, যিনি রায়ের পর অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কূটনীতিক ও উচ্চ আদালতের বিচারপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর তার জন্য নির্ধারিত সোফায় গিয়ে বসবার আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোফায় বসে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে ডান পাশের সোফায় বসা স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেন। এরপর ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানের প্রায় শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী তার সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালে সবাই উঠে দাঁড়ান। তখনই প্রধানমন্ত্রী আর প্রধান বিচারপতির মধ্যে কথা হয়। হাসিমুখে কথা বলতে দেখা যায় শেখ হাসিনাকে। হাস্যোজ্জ্বল এস কে সিনহার পাশে তখন দাঁড়িয়েছিলেন আপীল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। কী কথা তাদের মধ্যে হয়েছে, তা জানা যায়নি। এরপর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাসহ বিচারপতিদের সঙ্গে ছবি তোলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
×