ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবীণ সাংবাদিক সালেহ চৌধুরীর ইন্তেকাল

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রবীণ সাংবাদিক সালেহ চৌধুরীর ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভাটি অঞ্চল চষে বেড়ানো মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী আর নেই। শুক্রবার রাতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন ছেলেসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের গচিয়া বাজার মাঠে তিন দফা জানাজা শেষে রবিবার তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। পারিবারিক সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাতে সালেহ চৌধুরী রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার নিজ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন। শনিবার বাদ জোহর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সালেহ চৌধুরীর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে। সেখানে সালেহ চৌধুরীর প্রতি তার সহকর্মীসহ সকল পর্যায়ের সাংবাদিকরা শেষ শ্রদ্ধা জানান। সেখানে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবে মুক্তিযুদ্ধে সালেহ চৌধুরীর অবদানের জন্য তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবে সালেহ চৌধুরীর জানাজা ও শেষ শ্রদ্ধায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার, বাসস’র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক হারুন হাবিব, বাংলাদেশ নিউজের সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ূন, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূইয়া, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ প্রমুখ। রবিবার বাদ যোহর সালেহ চৌধুরীর নিজ গ্রাম সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের গচিয়া বাজার মাঠে তৃতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন, দিরাই উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার প্রমুখ। জানাজার আগে তার মরদেহে বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। বিলুপ্ত দৈনিক বাংলা সহকারী সম্পাদক ছিলেন সালেহ চৌধুরী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সালেহ চৌধুরী দৈনিক বাংলায় যোগ দিয়ে বন্ধ হওয়া পর্যন্ত সংবাদপত্রটিতে ছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য সালেহ চৌধুরী কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতিও ছিলেন। সালেহ চৌধুরী ১৯৭১ সালে টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের অধীনে সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুরসহ ভাটি অঞ্চলে বেশকিছু সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তিনি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিতে সক্রিয় ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচারে ১৯৯২ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে গণআদালত বসেছিল, তার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায়ও তিনি সাক্ষ্য দেন। সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ খালেদ নির্মিত ভাস্কর্য ‘অপরাজেয় বাংলা’র নামকরণও করেন সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী। এছাড়াও তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জে যে অনন্য শহীদ মিনার নির্মিত হয় তার নক্সাকার ছিলেন। সবুজ জমিনে লালবৃত্তের উপরে লেখা ‘যাদের রক্তে মুক্ত এ দেশ’ স্লোগানটিও তার দেয়া। ১৯৩৬ সালের ১১ নবেম্বর সুনামগঞ্জের গচিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সালেহ চৌধুরী। নিজ গ্রামের পাশাপাশি মৌলভীবাজার, সিলেট এবং লাহোরে তিনি পড়াশোনা করেন। তার স্ত্রী শাহেরা চৌধুরী। তিন ছেলের জনক সালেহ চৌধুরীর আগ্রহের বিষয় ছিল লেখালেখি, আঁকিবুকি ও দাবা। ভালোবেসে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ তাকে ডাকতেন ‘নানাজি’ বলেন। তিনি অন্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হুমায়ুন আহমেদ রচনাবলীর সম্পাদক। এছাড়াও তিনি বিচিত্র বিষয়ে বই লিখেছেন। সালেহ চৌধুরী মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব ওমর ফারুক এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী।
×