ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের আগের রাতে গরু না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন অনেকেই

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ঈদের আগের রাতে গরু না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন অনেকেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম গরুর সঙ্কটে এবার ঈদের দিন শনিবার কোরবানি দিতে পারেননি। দ্বিতীয় দিন রবিবার গাবতলী পশুর হাট থেকে গরু কিনে কোরবানি দিয়েছেন তিনি। বাজারে ভাল সরবরাহ ও ভারতের গরু এসে দাম পড়বে, এ আশায় ছিলেন। তাই ঈদের আগের রাতে গরু কিনতে গিয়ে দাম বেশি দেখে ফিরে আসেন সিরাজুল। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, গরু কিনতে পারিনি। দাম ছিল নাগালের বাইরে। তাই বাধ্য হয়ে ঈদের পরের দিন কোরবানি দিয়েছি। এর আগে ঈদের আগের রাতে কম দামে গরু কেনার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু এবার তার উল্টোটা দেখা গেছে। সিরাজুলের মতোই ভারতের গরুর আশায় রাজধানীর অনেকেই হাট থেকে ফিরে এসেছেন। ঈদের দিনে কোরবানি দিতে পারেননি তারাও। গাবতলী হাটের ব্যাপারীরা জানান, গত বছরের আগের প্রায় সব ঈদে প্রচুর ভারতীয় গরুর আমদানি হয়েছে। ফলে শেষ মুহূর্তে পানির দরে কিনে বাড়ি ফিরেছেন অনেকে। কিন্তু এবার সেভাবে ভারতের গরু আসেনি। যাও এসেছে তার বেশিরভাগই কসাইদের কাছে বিক্রি হয়েছে। কোরবানির ঈদের সাধারণত এক সপ্তাহ আগেই পশু বেচা-কেনা শুরু হয়। কিন্তু গরুর দাম কমবে, এ আশায় এবার আগেভাগে কেনেননি ক্রেতারা। ফলে শুধু কোরবানির ঈদের আগের দু’দিন বৃহস্পতি ও শুক্রবার বেশি গরু বিক্রি হয়েছে। ওই দু’দিনে হঠাৎই হাটে ছিল জনস্রোত। তাদের অনেকেই গরু না পেয়ে ফিরে গেছেন। তবে রবিবার গাবতলীর হাটে প্রচুর গরু-ছাগলের আমদানি হয়েছে। এদিকে ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, পুচুর ক্রেতার ঢল। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ ঘুরেও কাক্সিক্ষত গরু কিনতে পারেননি অনেকেই। বেপারিরা জানালেন, মূলত বৃহস্পতিবার রাতের হাটে অধিকাংশ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে হাতে থাকা বাকি গরুর দাম অনেক বেশি চাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতা। গরু কিনতে আসা সরকারী চাকরিজীবী মোজাম্মেল হোসেন জানান, গরুর আকার অনুযায়ী যে দাম চাওয়া হচ্ছে তা আমার বাজেটের তুলনায় অনেক বেশি। দুপুর থেকে হাটে ঘুরছি। কিন্তু গরু কিনতে পারছি না। এদিকে হাট থেকে গরু কিনে বাড়ি ফিরছেন এমন অনেকেই সেদিন গরুর যে দামের কথা জানান, তাতে বেশিরভাগ গরুর দাম ৬০ থেকে এক লাখ টাকার ওপর। কুষ্টিয়ার মুরাদ বেপারি বলেন, রাজধানীর গাবতলী হাটে ভারত থেকে হাজার হাজার গরু আসার খবরে অনেক ক্রেতাই শেষ দিনের অপেক্ষায় ছিলেন। শেষে দাম কমবে, এই আশায় একসঙ্গে হুমড়ি খেয়ে হাটে পড়েছেন। তাই গরু না পেয়ে ছাগল কিনে বাড়ি গেছেন অনেকেই। বেপারিরা জানান, কোরবানির সময় হাটে কয়েক ধাপে গরু ওঠান তারা। পাঁচ থেকে ছয়জন একসঙ্গে গরুর ব্যবসা করেন। কয়েকজন হাটে আসেন আর বাকিরা গ্রামে থাকেন। হাটেরগুলো বিক্রি হয়ে গেলে আবারও ট্রাকভর্তি গরু হাটে তোলেন দ্বিতীয় চালানে। কিন্তু এবার আগেভাগে প্রথম চালানের সব গরু বিক্রি হয়নি। ফলে দ্বিতীয় ধাপে গরু আনেননি তারা। তবে বেপারিরা ভাবতেই পারেননি যে, হঠাৎ করে শেষ দু’দিনে এত বেশি গরু বিক্রি হবে। এ কারণে দ্বিতীয় ধাপে গরু হাটে তোলার সময়ও পাননি অনেকে। প্রায় ১৫ বছর ধরে গরুর ব্যবসায় নিয়োজিত কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বেপারি শাহিন বিশ্বাস জানান, প্রথম ধাপে দুই ট্রাকে ২৮টি গরু হাটে তুলেছেন ঈদের এক সপ্তাহ আগে। সবই বিক্রি হয়েছে দু’দিন আগে। ফলে দ্বিতীয় চালান হাটে তোলার সময় পাননি তিনি। শাহিন বেপারি বলেন, অন্যান্য ঈদে আমরা চার থেকে পাঁচ গাড়ি (ট্রাক) গরু হাটে তুলি। এবার মাত্র দুই গাড়ি তুলেছি। সেগুলো বিক্রি হয়েছে চাঁদরাত ও আগের রাতে। ফলে নতুন করে গরু হাটে তুলতে পারিনি। ক্রেতারা ভারতের গরুর আশায় থেকে পরে পাননি। আসলে এবার ভারতের গরুই তেমন আসেনি। আফতাবনগর গরু হাটের ইজারাদার আব্দুর রহমান রুবেল বলেন, হাটে প্রথম থেকেই গরুর সরবরাহ ভাল ছিল। কোরবানির পশুর সঙ্কটও ছিল না বলে তিনি দাবি করেন। তবে ঈদের আগের দিন হঠাৎ গরুর সঙ্কটের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে অধিকাংশ গরু কিনেছেন নগরবাসি। এছাড়া অনেকেই ভেবেছিলেন ভারতীয় গরু আসবে। ফলে শেষদিন শুক্রবার হাটে কৃক্রিম সঙ্কট সৃষ্টি হয়। ওই দিন হাটে ক্রেতার বাড়তি চাপে আকাশচুম্বি দাম হাঁকিয়েছেন বেপারিরা। ক্রেতারাও তাই বাড়তি দামে গরু কিনেছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার কোরবানির পশু প্রস্তুত ছিল, সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। হয়ত একসঙ্গে সবাই কেনায় গরুর সঙ্কট হতে পারে। কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের চীফ ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আব্দুল হালিম বলেন, দেশে গরুর কোন সঙ্কট নেই। একসঙ্গে সবাই কেনার কারণেই ঝামেলা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা, গণমাধ্যমে যেভাবে প্রচারিত হয়েছে সেভাবে ভারতের গরু আসেনি।
×