ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রেনে এখনও ঘরমুখো মানুষের ভিড়, রাজধানী ফাঁকা

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ট্রেনে এখনও ঘরমুখো মানুষের ভিড়, রাজধানী ফাঁকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘরে ফেরাটা অনেক ঝক্কির ছিল। রাস্তা নষ্ট থাকার খবর ছিল সবার কাছেই। তাই নৌ ও রেলপথে মানুষের আস্থা ছিল বেশি। আশঙ্কা করা হয়েছিল এবার সড়কপথে দুর্ভোগ রেকর্ড গড়াবে। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। অন্তত কিছুটা হলেও স্বস্তি ছিল। শেষ হলো ঈদের ছুটি। এবার কর্মস্থলে ফেরার তাগিদ। ফিরতে কোন পথেই এখনও তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না। সহজেই আসতে পারছেন সবাই। তবে রেলপথে বাড়ি ফেরার হিড়িক যেন রয়েই গেছে। ঠিক ঈদের আগের চিত্র। সোমবার কমলাপুর থেকে প্রায় প্রতিটি ট্রেনেই ছিল বাড়তি যাত্রী। ছাদ, ইঞ্জিন, জোড়া কোথাও ঠাঁই ছিল না। সবখানেই মানুষ আর মানুষ। নৌপথেও বাড়ি ফেরার তাগিদ দেখা গেছে। যাত্রীরা জানিয়েছেন, কেউ কর্মব্যস্ততার কারণে যাননি। আবার কেউ রাস্তার ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ঢাকায় ঈদ করেছেন। এখন নিরিবিলি যাবার চেষ্টা। কিন্তু বিধি বাম। মানুষের ভিড় থামছে না। বিভিন্ন জেলা থেকে বাসে যারা রাজধানীতে আসছেন তাদের অনেকেই বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন। সেই সঙ্গে টিকেট পাওয়ার কিছুটা বিড়ম্বনা তো আছেই। এদিকে ঈদ শেষে সোমবার ছিল প্রথম কর্মদিবস। এখনও জমে উঠেনি অফিসপাড়া মতিঝিল। কর্মব্যস্ততা দেখা যায়নি সচিবালয়েও। প্রথম দিনে শুভেচ্ছা বিনিময় আর দাফতরিক কিছু কাজকর্ম করেই কেটেছে। এখন ভিন্ন আবহ রাজধানী শহরে। কোলাহলমুক্ত পরিবেশ। কোরবানির বর্জ্যরে দুর্গন্ধও খুব একটা নেই। সব সড়কেই চলছে রিক্সা। ভ্রমণপিপাসুরা ইচ্ছেমতো ছুটছেন। সিনেমা হল, পার্ক, হাতিরঝিল থেকে শুরু করে সবখানেই মানুষের ভিড়। কোন রকম সিগন্যাল ছাড়াই চলছে সব ধরনের যানবাহন। রাস্তায় ট্রাফিকেরও কোন ব্যবস্ততা নেই। ঈদ কাটিয়ে যারা টার্মিনালে নামছেন তাদের রয়েছে নানা রকমের অভিযোগ। প্রথম অভিযোগ হলো গণপরিবহন সঙ্কট। এরপর বাড়তি ভাড়া, স্বল্প দূরত্বে যেতে না চাওয়ার সমস্যা তো রয়েছেই। হাওড় এক্সপ্রেস থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে নেমে কমলাপুর রেল স্টেশনে এক ঘণ্টার বেশি অটোরিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিলেন আবুল কালাম। তিনি জানান, চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকাচ্ছেন। অনেকেই আছেন চালকের ভাড়াতেই গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা যারা স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের পক্ষে তো ১০গুণ ভাড়া দেয়া সম্ভব নয়। কমলাপুর রেল স্টেশনে কথা হয় নীলসাগর ট্রেনের যাত্রী বশিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, নাড়ির টানে ঈদ করতে বাড়ি গিয়েছিলাম স্ত্রী সন্তানসহ। আরও ক’দিন বাড়িতে থেকে যেতে ইচ্ছে করছিল। তবে ব্যাংকসহ অফিস-আদালত খোলায় ফিরতে হলো রাজধানীতে। আবারও আগামী বছরের অপেক্ষায় রইলাম। কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ঈদের মতোই এখনও মানুষ বাড়ি যাচ্ছেন। সব ট্রেন বাড়তি যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি ঝুঁকিমুক্ত ভ্রমণ নিশ্চিত করতে। কিন্তু কারো কথাই যাত্রীরা শোনেন না। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ট্রেনের ছাদে গেলে টিকেট লাগে না। তাই ছাদভর্তি মানুষ। তাছাড়া ভিড়ের সময় সবার টিকেট নিশ্চিত করা আমাদের জন্য খুবই কঠিন বিষয়। তিনি জানান, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঈদ ফিরতি অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ক’টি বিভাগীয় ও বড় জেলা শহর থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়। মঙ্গলবার থেকে চলাচল শুরু করবে মৈত্রী এক্সপ্রেস। সোমবার বিকেলে হাতিরঝিলে দেখা গেছে মানুষের ভিড়। মুক্তবাজারে ভ্রমণপিপাসুর আড্ডা। অনেকেই অভিযোগ করেছেন ভ্রমণ বোটে বাড়তি ভাড়া নেয়ার। হাতিরঝিলের মগবাজার অংশ থেকে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৮০টাকা। রামপুরা অংশে শিশুদের প্যাডেল বোট দিয়ে পানিতে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ কোন রকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। লাইফ জ্যাকেটও নেই। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান প্যাডেল বোটের ব্যবসা করছে। রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ভূগর্ভস্থ জাদুঘর, জাতীয় জাদুঘর, বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানাসহ সব বিনোদন কেন্দ্রেই মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এদিকে পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, রাজধানীতে ফেরা মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে আরও বাড়বে বলে জানান তারা। জমে ওঠেনি সচিবালয় ॥ ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় জমেনি। ছিল না কোন কর্মব্যস্ততা। রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলও সরগরম হয়ে উঠেনি। ঈদের তিন দিনের ছুটি কাটিয়ে সোমবার ছিল প্রথম কর্মদিবস। সরকারী অফিসপাড়া সচিবালয়ে উপস্থিতির হার ছিল অন্যান্য ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসের তুলনায় একটু বেশি।। ঈদ-উল-আযহায় এবার তিনদিন ছুটির মধ্যে দুদিনই শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি পড়েছে। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হিসেবে এবার তারা ছুটি কম পেয়েছেন। বাড়তি ছুটি না পাওয়ায় অনেকে এবার ঢাকাতেই ঈদ করেছেন বলে সোমবার অফিস খোলার পর প্রথম কর্মদিবসে উপস্থিতি ছিল অন্যান্য ঈদের পর অফিস খোলার প্রথম দিনের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। সোমবার সচিবালয়ে উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশের বেশি হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা ধারণা দেন। উপস্থিতি ভাল হলেও ছুটির পর প্রথম দিনের অফিস কেটেছে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়, কোলাকুলি আর খোশগল্পে। সচিবালয়ে দর্শনার্থীর অভ্যর্থনা কক্ষটি সব সময় সরগরম থাকলেও ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে অনেকটাই ফাঁকা দেখা যায়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সকালে দফতরে এসে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে দিন শুরু করেন। পরে তিনি সাংবাদিকের সঙ্গেও কথা বলেন। ঈদ উপলক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অতিথি সবাইকে মিষ্টিমুখও করান অর্থমন্ত্রী। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু নিজ নিজ দফতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেন।
×