ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পারমাণবিক হামলা চালাব

প্রকাশিত: ০৩:১০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পারমাণবিক হামলা চালাব

হোয়াইট হাউস রবিবার হুঁশিয়ার করে বলেছে, উত্তর কোরিয়ার অব্যাহত হুমকির মুখে মিত্রদের রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিজের পরমাণু সক্ষমতাকে ব্যবহার করতে প্রস্তুত আছে। রবিবার হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা চালানোর দাবি করেছে উত্তর কোরিয়া। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে ফোনে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। এএফপি ও বিবিসি। ট্রাম্প আবেকে নিশ্চিত করেছেন নিজ ভূখ-, টেরিটরি এবং মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক, প্রথাগত ও পারমাণবিক সক্ষমতা পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। উত্তর কোরিয়া রবিবার ষষ্ঠ পরমাণু পরীক্ষা চালিয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা পরই তারা জানায় যে হাউড্রোজেন বোমা নিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দাবি করেছে তাদের রবিবারের হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা সফল হয়েছে। রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের রাস্তায় এদিন জনতাকে উল্লাস করতে দেখা গেছে। বাতাসে কোন তেজষ্ক্রিয়তার দূষণ ঘটেনি। সাধারণ পরমাণু বোমার চেয়ে হাইড্রোজেন বোমার ধ্বংস ক্ষমতা অনেক বেশি। রবিবারের পরীক্ষার পর ট্রাম্প তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ পরমাণু পরীক্ষার নিন্দা জানিয়েছে। উত্তর কোরিয়া এর আগেও হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষার দাবি করেছে। গত বছর জানুয়ারিতে চতুর্থ পরমাণু পরীক্ষার পর একটি হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে পিয়ংইয়ং দাবি করেছিল। তবে এর কম্পন মাত্রা এত কম ছিল যে আসলে হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করা হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। উত্তর কোরিয়ার কেসিএনএ বার্তা সংস্থার কর্মকর্তারা রবিবার পরীক্ষাগুলো চালানোর আগে আগ মন্তব্য করেন তাদের হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ক্ষমতা টার্গেট ভেদে বাড়ানো কমানো সম্ভব। হাইড্রোজেন বোমার এই পরীক্ষা সফল হয়ে থাকলে রবিবার উত্তর কোরিয়া পূর্ণ পরমাণু ক্ষমতাধর দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে বলা যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজের কু কাব উ বলছেন, আমি মনে করি উত্তর কোরিয়া এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তাদের আর নতুন করে পরীক্ষা চালানোর দরকার হবে না।’ তিনি মনে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচীর সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার আসান ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজের চা দু হায়েগন বলেন, হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। যে কোন প্রযুক্তিগত পরীক্ষাই পোকার গেম খেলার মতো। কতটুকু অগ্রগতি আপনি অর্জন করেছেন তা পরিমাপ করার জন্য একজন প্রতিপক্ষ এতে প্রয়োজন হয়। তিনি মনে করেন পিয়ংইয়ং আগামী কয়েক মাসে আরও আইসিবিএম পরীক্ষা করতে পারে। পরমাণু বোমা যা ‘এ বোমা’ নামেও পরিচিত সেটি কাজ করে পরমাণু ফিসন প্রক্রিয়ায়। অন্যদিকে ‘এইচ বোমা’ নামে পরিচিত হাইড্রোজেন বোমা যা কাজে করে ফিউসন প্রক্রিয়ায়, এর কারণে এর শক্তি অনেক বেশি। এটি থার্মোনিউক্লিয়ার নামেও পরিচিত। উত্তর কোরিয়া আসলেই হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করেছে কী না সেটি নিরপেক্ষ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রবিবারের বিস্ফোরণটি ছিল অনেক শক্তিশালী। অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন হাইড্রোজেন বোমার সঙ্গে এর অনেক মিল রয়েছে। জাপান জানিয়েছে, পরমাণু পরীক্ষা গোপনে নজরদারি করার জন্য তারা স্নাইফার প্লেন তৈরি করেছে। তেজষ্ক্রিয়তার ধরণ পর্যবেক্ষণ করে যা পরমাণু অস্ত্রটির বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করে থাকে। তবে এই প্লেন ইতোপূর্বে কোন নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেনি। সিউলের বিশেষজ্ঞরা বলছেন গত সেপ্টেম্বরে উত্তর কোরিয়া যে পরমাণু পরীক্ষাটি করেছিল সেটি তাদের আগেকার বিস্ফোরণগুলোর চেয়ে অন্তত পাঁচ ছয়গুন বেশি শক্তিশালী ছিল। পরমাণু পরীক্ষার ফলে ভূমিকম্পের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে তারা ওই মন্তব্য করেন। সেটি ছিল ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় ফেলা ১৫ কিলোটন পরমাণুর চেয়ে ১০ কিলোটন কম শক্তি সম্পন্ন।
×