ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকি নেয়ার সাহস রাজনীতিকদের থাকতে হয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ঝুঁকি নেয়ার সাহস রাজনীতিকদের থাকতে হয়

বিডিনিউজ ॥ দেশকে ভালবাসা, দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার ও ঝুঁকি নেয়ার সাহস একজন রাজনীতিকের জন্য ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ মন্তব্য করে সে অনুযায়ী নিজেদের গড়ে তুলতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা বলেন, যে শিক্ষা পেয়েছি বাবার কাছ থেকে, যে শিক্ষা পেয়েছি মায়ের কাছ থেকে-দেশকে ভালবাসা, দেশের কল্যাণে কাজ করা, দেশের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করা, যে কোন ঝুঁকি নেয়ার সাহস রাখা; একজন রাজনীতিকের জীবনে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের কথা স্মরণ করার পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পাশে বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের ভূমিকার কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন তাদের মেয়ে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পেছনে আমার মায়ের অবদান রয়েছে। মা জানতেন বাবা কী চাচ্ছেন। বাবার জন্য আমার মায়ের ভূমিকা ছিল অনন্য। কখনও দেখিনি ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া নিয়ে বাবাকে বিরক্ত করতে। বাবা এই দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন; এটা তিনি উপলব্ধি করতেন। ছাত্রলীগের সেøাগান ‘শিক্ষা শান্তি প্রগতি’র কথা মনে করিয়ে দিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সেই আদর্শে গড়ে ওঠার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রতিটি নেতাকর্মীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তাহলেই এই দেশকে আমরা গড়ে তুলতে পারব। ভবিষ্যত নেতৃত্বে আসতে হবে। তার জন্য শিক্ষা একান্তভাবে দরকার। শান্তি ছাড়া প্রগতি কখনই আসে না। তাই আমরা সব সময় চাই, আমাদের দেশে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে। আমরা ধীরে ধীরে প্রগতির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। যে কোন দুর্যোগে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা নিয়ে কাজ করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যখনই কোন দুর্যোগ-দুর্বিপাক হয় আমি তখন আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করি, সেই দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষের সেবা করা। তিনি বলেন, মানুষের সেবা করাই আওয়ামী লীগের কাজ, এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। এই আদর্শ নিয়েই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তৈরি হতে হবে। অতীতে দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার এত ত্যাগ, আমার মায়ের এত ত্যাগ, আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা যে জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছে এবং জনগণের যে আকাক্সক্ষা তা বৃথা যেতে পারে না। জাতির পিতা তো বলে গেছেন, ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’। বাংলাদেশের জনগণকে কেউ দাবাতে পারবে না। জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার আদর্শ নিয়েই আমাদের চলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর নাশকতার বিভিন্ন ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি, যারা বাঙালী জাতি বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হোক চায়নি, তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই ছিল। পাটের গুদামে আগুন দেয়া, আমাদের আওয়ামী লীগের সাত সংসদ সদস্যকে হত্যা করা থেকে শুরু করে থানা লুট করা, নানাভাবে কেউ পূর্ববঙ্গ স্বাধীন করো, কেউ আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি, কেউ অমুক পার্টি, তমুক পার্টি নানা কিছু করে ব্যতিব্যস্ত করা। শেখ হাসিনা বলেন, তারা কারা ছিল? ওই পাকিস্তানীদের দালালি ছাড়া তো আর কিছু করেনি তারা। এভাবে বার বার বাধা দেয়া, অপপ্রচার চালানো। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে তার কন্যা বলেন, সদ্য স্বাধীন একটা দেশ, একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, যেখানে না আছে অর্থনীতি, না আছে অর্থ, না আছে টাকা, না আছে কিছু। তারপর, সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে তিন কোটিই গৃহহীন, শরণার্থী এক কোটি, শহীদ পরিবার, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিত মা-বোন প্রত্যেকের চিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের বাড়িঘরের ব্যবস্থা, তাদের প্রতিষ্ঠিত করা... সমস্ত কাজই তো তিনি করে গেছেন। কোনটা বাদ রেখেছেন? বঙ্গবন্ধু সমুদ্রসীমা আইন এবং ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি করে গেলেও পরবর্তী কোন সরকার সেসব বিষয় নিয়ে অগ্রসর না হওয়ায় তাদের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন যারা হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে, আসলে তাদের সাহস থাকে না। জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধী আর স্বাধীনতা বিরোধীদের এনে ক্ষমতায় বসানো। তাদেরকে মন্ত্রী, তাদেরকে উপদেষ্টা করে আমার লাখো শহীদের পতাকা দেয়া। আর জাতির পিতার হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি অডিন্যান্স দিয়ে তাদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে পুরস্কৃত করল বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে। আর যত যুদ্ধাপরাধীর সাজা হয়েছিল, তাদের মুক্ত করে দিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বিভিন্ন সরকারের সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেভাবে বিকৃত করা হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কয়েকটা জেনারেশন তো হারিয়েই গেছে। আমাদের বিজয়ের ইতিহাস, আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সে ইতিহাস জানতেই পারেনি। এটা একটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে মদদ দেয়া হয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া...সবাই ওই খুনীদের মদদ দিয়েছে। ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসিয়েছে। তাদের নানাভাবে উৎসাহিত করেছে। কেন? আমাকে আঘাত দেয়ার জন্য; আমি যাতে ভেঙ্গে পড়ি, সেজন্য। আমি কোন্ বাবার মেয়ে, কোন্ মায়ের সন্তান এটা তারা উপলব্ধি করতে পারেনি। ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এম জাকির হোসেইন আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।
×