ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আনান কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ

রোহিঙ্গা সঙ্কটে স্বস্তি পরিষদের উদ্বেগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা সঙ্কটে স্বস্তি পরিষদের উদ্বেগ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বন্ধ, মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা ও কোফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নে জোর দিয়েছেন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে এসব আলোচনা হয়। এদিকে চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইরান। সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহ্বানের প্রস্তাব দেয় যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বুধবার এই বৈঠক হয়। বৈঠকে রাখাইন ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। মিয়ানমারের এই দুইপক্ষের মধ্যে সহিংসতা বন্ধ, মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা ও কোফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। নিরাপত্তা পরিষদের ১২ সদস্য রাখাইন ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য তারা বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ আলোচনা চলে। বৈঠকের শুরুতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ ইয়াংকা রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি জানান, রাখাইনে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠনগুলোকে অত্যন্ত সীমিত আকারে কাজ করতে হচ্ছে। এর ফলে তাদের কাছে গোটা পরিস্থিতির পূর্ণ চিত্র নেই। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রাখাইন পরিস্থিতি দেখার জন্য একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের বিরোধিতার কারণে তারা রাখাইনে যেতে পারেনি। এ বিষয়টি নিয়েও নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হয়। পরবর্তীতে এ ধরনের আলোচনা আর হবে কিনা জানতে চাইলে সূত্র জানায়, পরিস্থিতি খারাপ হলে ভবিষ্যতে আবার আলোচনা হতে পারে। এর আগে বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ডি ওয়াটকিন্স বৈঠক করেন। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে জাতিসংঘকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কটে জাতিসংঘের সমর্থন প্রত্যাশা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চলমান দমনাভিযানে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি বলেছেন, মিয়ানমারে মুসলিমদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ইরান সরকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সেখানে তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে এবং দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। তিনি মিয়ানমার সরকারের প্রতি ‘দিনের পর দিন দেশটির মুসলিমদের মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বন্ধ করার এবং দেশে চলমান অমানবিক ও নৃশংস পরিস্থিতি’ থামানোর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। ওই রাতের পর থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন। আরও সহিংসতার আশঙ্কায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী ও স্থল সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ অংশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের গুলি করার ঘটনাও ঘটেছে। দীর্ঘদিন সেনাশাসিত মিয়ানমারের বর্তমান সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিক মানতে নারাজ। গত বছর রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পরও রোহিঙ্গারা আশ্রয়ের আশায় বাংলাদেশ সীমান্তে জড়ো হয়েছিল। সেবারও সীমান্ত বন্ধ রাখা হলেও মানবিক কারণে অর্ধ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেয়া হয়। আর গত এক সপ্তাহে এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
×