ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাল ঈদ, পশু কোরবানির প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কাল ঈদ, পশু কোরবানির প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় বছর ঘুরে আবার এলো ঈদ-উল-আযহা। আগামীকাল শনিবার সারাদেশে একযোগে উদযাপিত হবে পবিত্র এ ধর্মীয় উৎসব। পশু কোরবানির মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে প্রস্তুতি নিয়েছেন সারাদেশের মানুষ। এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবেন। কোরবানির মধ্য দিয়ে নিজের ভেতরের পশুত্বকে পরিহার করা এবং হযরত ইব্রাহিম (আ)-এর মহান আত্মত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করে পশু কোরবানি করবেন। এদিকে নির্বিঘেœ ঈদ উদযাপনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইজিপি জানিয়েছেন, ঈদকে ঘিরে নিরাপত্তার কোন শঙ্কা নেই। ইসলামের পরিভাষায় কোরবানি হলো নির্দিষ্ট পশুকে একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে তাঁরই নামে জবেহ করা। ঈদ-উল-আযহার অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে, মনের পশু অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তি পরিত্যাগ করা। জাতীয় কবির ভাষায়- ‘মনের পশুরে কর জবাই, পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই...।’ এদিকে কোরবানি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি এলাকায় গবাদিপশুর হাট জমে উঠেছে। যে যার সাধ্যমতো কোরবানি দিতে হাটে ভিড় করছেন পছন্দের গরু, ছাগল, উট কিনতে। পছন্দের পশু কিনে গলায় মালা পরিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দের সঙ্গে ঘরে ফিরছেন। সারাদেশে প্রায় এক কোটি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিকে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ঘরে ফেরা মানুষের ঢল নামে। সারাবিশ্বের মুসলমানদের কাছে ঈদ-উল-আযহার গুরুত্ব, মহিমা অনেক বেশি। এটাকে তারা শুধুমাত্র উৎসব হিসেবে বিবেচনা করেন না, এর অন্তর্নিহিত শিক্ষাই মুসলমানদের কাছে বড় বিষয়। তাই তো কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন- “ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন! দুর্বল! ভীরু! চুপ রহো, ওহো খামখা ক্ষুব্ধ মন! ধ্বনি উঠে রণি’ দূর বাণীর,- আজিকার এ খুন কোরবানীর!” শুধু কোরবানিই নয়, বিশ্বের মুসলমানদের অন্যতম প্রধান পবিত্র ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবও এটি। শনিবার সকালে ঈদের নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নামে পশু কোরবানিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। প্রায় চার হাজার বছর আগে হযরত ইব্রাহিম (আ) পুত্র কোরবানির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জীবিত থাকাবস্থায় প্রতি বছরই পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহপাকের আনুগত্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহম্মদও (সা) এ আদর্শ অনুসরণ ও বহাল রাখতে আদিষ্ট হন। তিনিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রতি বছরই কোরবানি করেছেন। তার উম্মতদের জন্য এ আদর্শ ও প্রথা অনুসরণের কঠোর নির্দেশ দিয়ে গেছেন। হযরত ইব্রাহিম (আ)-এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকেন। ঈদ-উল-আযহা বা কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দেশের প্রতিটি মুসলমানের ঘরে বইছে খুশির বন্যা। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে কর্মস্থল থেকে মানুষ এখন ঘরমুখী। কষ্ট স্বীকার করেই বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ঢল নেমেছে বাড়ির পানে ছোটা মানুষগুলোর। কোরবানির পাশাপাশি ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। ঈদের নামাজ শেষেই কোরবানি করার বিধান রয়েছে। তাই দলে দলে মুসল্লিরা আগে ঈদের নামাজে শরিক হবেন। এদিকে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণীতে তারা মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। কোরবানির মহান ত্যাগের আদর্শে বলীয়ান হয়ে দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে বাংলাদেশ খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও এবং মহাসচিব হেমন্ত আইন কোড়াইয়াও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ইসলাম ধর্মের পবিত্র বিধান অনুযায়ী যার যাকাত দেয়ার সামর্থ্য আছে তার ওপর ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। ঈদ-উল-আযহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুদিন পশু কোরবানির জন্য নির্ধারিত। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, এক ব্যক্তি একটি গরু, মহিষ বা খাসি কোরবানি করতে পারেন। তবে গরু বা মহিষের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাত ভাগে কোরবানি করা যায়। ২, ৩, ৫, ৭ ব্যক্তি একটি গরু কোরবানিতে শরিক হতে পারেন। তারা বলেন, কোরবানির ঈদের মাংসের ভাগের নির্দিষ্ট কোন বিধান না থাকলেও সাধারণত আমাদের দেশে কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ গরিব-দুস্থদের মধ্যে, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে এবং এক ভাগ নিজেদের খাওয়ার জন্য রাখা হয়। তারা বলেন, মুসলমানদের ওপর কোরবানির যে হুকুম তা মূলত জবাই হওয়ার দ্বারা পালন হয়ে থাকে। তবে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ দান করে দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। মুসাফির বা ভ্রমণকারীর ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। ঈদ-উল-আযহার নামাজের আগে কোরবানি করা সঠিক নয়। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোরবানির জন্য খাসির বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। নিজ হাতে কোরবানি করা ভাল। ঈদের প্রধান জামাত এদিকে ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে দেশের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। জাতীয় ঈদগাহে ঈদ-উল-আযহার নামাজে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। এখানে বিকল্প ইমাম হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকার মিরপুরের জামেয়া আরাবিয়ার শায়খুল হাদিস মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুয্যামান। তবে আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলে ঈদের প্রধান জামাত বায়তুল মোকাররম মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহের জামাতে অংশ নেবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিদেশী অতিথি, স্থানীয় মুসল্লিরা। জাতীয় ঈদগাহে রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানাবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ঈদগাহে নারীদের জন্য থাকছে পৃথক স্থান। জাতীয় ঈদগাহে প্রায় ৯০ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করবেন। এরমধ্যে পাঁচ হাজার নারী মুসল্লি নামাজ আদায় করবেন। তবে এবার ভারি বৃষ্টি হলে জাতীয় ঈদগাহের জামাতের কোন ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। রাজধানীতে ৪শ’ ঈদের জামাত জাতীয় ঈদগাহসহ রাজধানীর ৪০৯টি স্থানে ঈদ-ঈল-আযহার জামাতের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে চারটি করে মোট ২২৮টি। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডে পাঁচটি করে মোট ১৮০টি স্থানে ঈদ জামাত হবে। এর বাইরেও সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও অন্যান্য মসজিদে ঈদ জামাত হওয়ার কথা রয়েছে। বায়তুল মোকাররমে ঈদের পাঁচটি জামাত ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে পাচাটি ঈদ জামাত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টা, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টা, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টা এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী। দ্বিতীয় জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস মাওলানা ওয়ালিয়ুর রহমান খান, তৃতীয় জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. মাওলানা মুহাম্মদ আবদুস সালাম, চতুর্থ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে মহাখালী হোসাইনিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা নজরুল ইসলাম আল মা ‘রূফ ইমামতি করবেন। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ঈদ-উল-আযহার নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিদের সুবিধার্থে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যাপ্ত পানি ও নিñিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে। আহলে হাদিস ঈদ জামাত পুরান ঢাকাসহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় আহলে হাদিসের ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে বংশাল বড় জামে মসজিদ কমিটির ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে খুতবা প্রদান ও ইমামতি করবেন বংশাল আহলে হাদিস বড় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আলহাজ মোস্তফা বিন বাহাউদ্দিন আস সালাফি। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে বংশাল বড় জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টা এবং সাড়ে ৮টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান বাংলাদেশ জমিয়তে আহলে হাসিদের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন। অন্যান্য ঈদের জামাত আবুজর গিফারী কলেজ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। এ মাঠে মহিলাদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধানম-ি ঈদগাহ জামে মসজিদে ঈদ-উল-আযহার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। মীরবাড়ি আদি জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এলিফ্যান্ট রোডের এ্যারোপ্লেন মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। পল্লীমা সংসদ ময়দানে এবারে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে। এ ময়দানে মহিলাদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লালমাটিয়ার ব্লক জিতে অবস্থিত মসজিদে বায়তুল হারামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়।
×