ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানবাধিকার ইস্যুতে আপত্তি, ২৯ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা স্থগিত

কায়রো-ওয়াশিংটন সম্পর্কে দূরত্ব

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কায়রো-ওয়াশিংটন সম্পর্কে দূরত্ব

মিসরের মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ২৯ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মিসরে সামরিক সহায়তা বাবদ ১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার ও অন্যান্য বিষয়ে অন্তত ৯ কোটি ৬ লাখ ডলার সহায়তা স্থগিত করা হয়েছে। দেশটিতে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর ইজিপসিয়ান স্ট্রিট ও বিবিসির। মার্কিন সরকারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এই অবর্ণনীয় অবস্থার বিষয়ে ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন তহবিলের সঙ্গে জড়িত কাগজপত্রে সই করেছেন এবং মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ সুকরিকে টেলিফোনে বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। সামরিক সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্তটি একটি বার্তা দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র মিসরে মানবাধিকারের অগ্রগতির অপ্রতুলতা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় এবং বেসরকারী সংগঠনগুলো (এনজিও) নিয়ে সাম্প্রতিক আইনের বিষয় উল্লেখ করে পররাষ্ট্র দফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, মিসরে ‘আমরা অগ্রগতি দেখতে চেয়েছি।’ এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি প্রদান করেছেন। তার ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত দু’দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আরও বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত মিসরের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত দুরবস্থার বিষয়ে একটি অসম্পূর্ণ বার্তা। বিবৃতিটি এই বলে শেষ করা হয় যে, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সাধারণ লক্ষ্য পূরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এই সিদ্ধান্ত । মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ সুকরি মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা জারেড কুশনার সঙ্গে তার পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করে দিয়েছেন। কুশনার গত বুধবার একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে মিসরে পৌঁছান। তবে এখন পর্যন্ত এটি স্পষ্ট নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বা বাতিল করা হয়েছে কিনা। মিসরের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তা আল-সিসির অফিস জানিয়েছে, কুশনার নেতৃত্বে মিসরে আগত মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সিসি বৈঠক করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ইজিপসিয়ান স্ট্রিটের প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয় যে, মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা, যিনি ভেবে ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে, তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ‘অপ্রত্যাশিত’, এবং এই সিদ্ধান্ত মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে। জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তাৎপর্যপূর্ণভাবে অগ্রগতি সাধিত হয়। আল-সিসি ও ট্রাম্পের বৈঠকের সময়, মিসরের মানবাধিকার বিষয় নিয়ে তেমন কোন কথাই হয়নি। এমনকি বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠনের কর্মকা-ের নিয়ে সমালোচনা করেন ট্রাম্প। এ সময় বৈঠকে দুই প্রেসিডেন্ট এই অঞ্চলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে ও মিসরে মার্কিন সহায়তার বিষয় উল্লেখ করেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের সময়ে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ২০১৩ সালে মিসরের ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হলে ওবামা মিসরে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেন। তবে ওবামা প্রশাসন এই অঞ্চলে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হুমকি বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৫ সালে আবার মিসরে সামরিক সহায়তা দেয়া শুরু করে। এদিকে মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সামরিক সহায়তা স্থগিত করে দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে মিসর। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ‘সুবিবেচনা প্রসূত’ নয়। পরে কায়রোতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য আগত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনার সঙ্গে মিসরের প্রেসিডেন্ট সাক্ষাত করেন।
×