ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফাঁকা রাজধানী মহাসড়কে স্বস্তি ফেরিঘাটে জট

ট্রেন বাস লঞ্চে উপচেপড়া ভিড় ॥ ঘরে ফেরা

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ট্রেন বাস লঞ্চে উপচেপড়া ভিড় ॥ ঘরে ফেরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক-মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের যেমন দুর্ভোগের আশঙ্কা করা হয়েছিল তেমনটি হয়নি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব মহাসড়কেই গাড়ির চাপ বেশি ছিল। তবে দীর্ঘ যানজট হয়নি। ফলে গতি কম হলেও রাস্তায় গাড়ি চলেছে। তবে ফেরিঘাটে ছিল গাড়ির সারি। কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বিভিন্ন ফেরিঘাটে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন বিলম্বে ছেড়ে গেছে। কোন ট্রেনে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। অনেকে টিকেট কেটেও নিজ আসনে বসতে পারেননি। চারদিকে মানুষ আর মানুষ। ছাদের চিএও একই। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভিড় দেখা গেছে। বেশিরভাগ লঞ্চ বাড়তি যাত্রী নিয়ে ঘাট ত্যাগ করে। বাস টার্মিনালগুলোতেও মানুষের স্রোত। কম ভাড়ায় ছাদেও স্বস্তি নিয়ে ঈদযাত্রা দেখা যায়। সব মিলিয়ে ফাঁকা নগরীতে টার্মিনালমুখী ছিল মানুষের ঢল। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার তাড়া। এদিকে গাবতলী টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। রাজধানীতে চলা সিটি বাসগুলো ঈদ বখশিশের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে বাড়তি ভাড়া আদায় করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বাভাবিক ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ॥ অতিবৃষ্টি আর বন্যার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। যে সড়কটি দিয়ে দেশের ২১টির বেশি জেলার যানবাহন চলাচল করে। তাই এ বছর এই সড়কে দুর্ভোগের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল খানা খন্দের কারণে। তাছাড়া পশুবাহী ট্রাক দুই লেনের এই মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেকটা স্বস্তিতেই যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা বাড়লেও স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা, আশুলিয়া, ত্রিমোড়, কোনাবাড়ি, সফিপুর, মীর্জাপুরসহ যানজট প্রবণ এলাকা দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। তবে যানবাহনের চাপ ও যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। তাছাড়া ঈদযাত্রায় যানজট না হলেও গাড়ি সঙ্কট ছিল তীব্র। গাড়ি কম ও ভাড়া বেশি হওয়ায় অনেককে বাসের ছাদে ও ট্রাকে চড়ে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। চন্দ্রায় দায়িত্বরত গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ গোলাম সবুর জানান, ঈদের দুই-একদিন আগে যে রকম ভিড় থাকে সে রকম ভিড় নেই। গাড়ির সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকায় যাত্রীদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তবে বৃহস্পতিবার অফিস শেষে ছুটি হয়েছে গাজীপুর, সাভার ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার গার্মেন্টসসহ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই রাতে সড়কে যানবাহনের চাপ বড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। তেমনি যানজট হওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দায়িত্বরত মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়লেও কোথাও যানজটের তথ্য নেই। বৃষ্টির কারণে শ্রীপুরে গাড়ির ধীরে ধীরে চলায় লম্বা লাইন সৃষ্টি হলেও যানজট হয়নি। নওজোর হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল হাই জানান, যানজট না থাকলেও ভোগড়া বাইপাস এবং চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় রেশনিং পদ্ধতিতে গাড়ি চলতে গিয়ে এবং ঘরমুখো যাত্রী ওঠাতে গিয়ে মাঝে মাঝে গাড়ির চাপ বেড়ে যাচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে বলেও জানান তিনি। কমলাপুরে মানুষ আর মানুষ ॥ রাত পোহালেই ঈদ। তাই যেতে হবে বাড়ি। প্রিয়জনের কাছে। কিছুটা ঝক্কি ঝামেলা তো পোহাতেই হবে। এমন বাস্তবতা মেনে নিয়েই রেলপথে ঈদযাত্রা শুরু করেছেন ঢাকার মানুষ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে তিল ধারণের কোন ঠাঁই ছিল না। চারদিকে মানুষ আর মানুষ। এক নম্বর থেকে সবকটি প্ল্যাটফরমে মানুষের জন্য দাঁড়িয়ে থাকারও কোন ব্যবস্থা ছিল না। তেমনি বেশ কয়েকটি ট্রেন বিলম্বে আসায় ছেড়েও গেছে দেরিতে। সবকটি লাইনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকায় ঢাকার বাইরে থেকে আসা ট্রেনগুলো সিগন্যাল না পাওয়ায় প্রায় এক ঘণ্টা পর্যন্ত খিলগাঁও এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকে। সিলেট, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রুটের ট্রেনের ছাদ থেকে শুরু করে ইঞ্জিন পর্যন্ত মানুষ আর মানুষ। রেল পুলিশকে যাত্রী নিরাপত্তায় লাঠিচার্জ করে বেশ কয়েকটি ট্রেন থেকে যাত্রী নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে দেখা গেছে। যাত্রীরা জানিয়েছেন, সড়কের অবস্থা ভাল না থাকায় এবার ট্রেনে চাপ বেশি। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, অন্যদিনের তুলনায় আজ (বৃহস্পতিবার) স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় অনেক বেশি। যাত্রীরা যেমন সুন্দর এবং সুশৃঙ্খলভাবে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট কাটতে পেরেছেন ঠিক তেমনি আশা করা যায় সবার ঈদযাত্রাও সুন্দর হবে। রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে ও আজ শুক্রবার আরও কিছুটা ভিড় বাড়তে পারে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ৩০টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। সারাদিনে ছেড়ে যাবে ৬৭টি ট্রেন। এর মধ্যে চিলাহাটিগামী নীলসাগর ট্রেনটি আড়াই ঘণ্টা, রংপুর এক্সপ্রেস দুই ঘণ্টা, ধূমকেতু এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস দেড় ঘণ্টা দেরি করে ছেড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গন্তব্যের কয়েকটি ট্রেন ১৫ থেকে ২০ মিনিট দেরি করে স্টেশন ছেড়ে গেছে। প্ল্যাটফরমের ছাউনি ভেঙ্গে পড়ে ৬ জন আহত ঢাকার বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে প্ল্যাটফরমের ছাউনি ভেঙে ছয়জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে রেল পুলিশ জানিয়েছে। ট্রেনের ছাদে জায়গা পাওয়ার জন্য ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর অনেকেই আগে থেকেই প্ল্যাটফরমের ছাউনিতে অবস্থান নিয়েছিলেন। স্টেশনে দায়িত্বরত রেল পুলিশের উপ-পরিদর্শক আকবর আলি বলেন, পার্বতীপুর থেকে ঈদের বিশেষ ট্রেনটি স্টেশনে পৌঁছলে যাত্রীরা ছাউনি হয়ে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করে। এসময় ছাউনির একটি অংশ ভেঙ্গে পড়ে ছয়জন আহত হন। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পাটুরিয়ার দু’পাড়ে যানবাহনের চাপ ॥ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। যাত্রীবাহী বাসের তুলনায় প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের সংখ্যা বেশি। বিকেল পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাটে চার শতাধিক ছোট গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। মানিকগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, সকাল থেকে ঘাটে যানবাহনের বাড়তি চাপ রয়েছে। যানজট এবং বিশৃঙ্খলা এড়াতে ছোট গাড়িগুলোকে টেপড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে নালী সড়কে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। ৫ নম্বর ফেরিঘাট দিয়ে শুধুমাত্র ছোট গাড়িই পারপার করা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাসেল জানান, ছোট বড় ১৬টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় পারাপারে আগের চেয়ে সময় লাগছে দ্বিগুণ। এ কারণে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে। ফলে ঘাটে যানবাহনগুলোকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ফেরি পারাপারে একেকটি যানবাহনকে ঘাটে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে যানজট নেই- কাদের ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুখে গুম-খুনের কথা শোভা পায় না। দেশের সড়ক ও মহাগুলোতে যানজট নেই, আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘেœ যাতায়াত সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষ অত্যন্ত স্বাচ্ছেন্দে বাড়ি ফিরছেন। এই মুহূর্তে দেশের সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে যানজট নেই। সকল সড়ক যানবাহন চলাচলের উপযোগী আছে বলেও দাবি করেন সড়কমন্ত্রী। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে সেখানে আপনাদের অভিযোগ জানাবেন। প্রয়োজনে ওই বাসের টিকেট কাউন্টার বন্ধ করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, বাস টার্মিনাল ও সড়ক-মহাসড়কগুলোতে বিপুলসংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রাত-দিন কাজ করছেন। এবার কোন ধরনের অভিযোগ নাই। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে ঘরমুখো যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে করতে এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে ভিজিলেন্স টিমের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির মুখে গুম খুনের কথা মানায় না। তাদের ইতিহাস ঘাটতে বেশি দূর যেতে হবে না। ২০০১ সালে তারা ক্ষমতায় ছিল, সে সময়ে আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। তাদের ফিরিয়ে দিতে পারবেন? কাজেই কেঁচো খুঁড়তে বিষধর সাপ বেরিয়ে আসবে।’ খালেদা জিয়ার উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গুম-খুনের কথা বলেন, আপনি ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিনকে ফিরিয়ে দেন, আমাদের আহসান উল্যাহ মাস্টার, মমতাজ উদ্দিন, আইভি রহমানকে ফিরিয়ে দিন। পারবেন ফিরিয়ে দিতে? তাই আর যাই হোক আপনার মুখে গুম খুনের কথা মানায় না।’
×