ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রূপার লাশ তাড়াশে পৌঁছলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে স্বজনরা

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রূপার লাশ তাড়াশে পৌঁছলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে স্বজনরা

জনকণ্ঠ ডেস্ক॥ টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর পৈচাশিক কায়দায় হত্যাক্যান্ডের শিকার তাড়াশের প্রতিভাবান মেয়ে জাকিয়া সুলতানা রূপার লাশ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাড়াশে পৌঁছলে রূপার বাড়িতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এদিকে টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় নিহত রূপার লাশ কবর থেকে উত্তোলনের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্তান থেকে তার লাশ উত্তোলন করা হয়। আদালতের নির্দেশে এ সময় উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুর রহিম সুজন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, মামলার আইনজীবী ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশে রূপার বাড়িতে এমনিতেই চলছিল ৫ দিন শোক আর মাতম। রূপার মা হাসনাহেনা বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এর মধ্যে সন্ধ্যায় লাশ পৌঁছার পর মাতম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রূপার মা হাসনাহেনা, ছোট বোন পপি খাতুনসহ পরিবারের সবাই শোকে স্তব্ধ। কেউ কেউ বার বার মূর্ছা যাচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের বুকফাটা আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। শুধু পরিবার নয়, গ্রামের এবং আশপাশ গ্রামের মানুষও শোকস্তব্ধ হয়ে ওঠে। তাড়াশ-রানীহাট সড়কের আসানবাড়ি গ্রামে রূপাদের বাড়ি জনারণ্যে পরিণত হয়। রূপাদের বাড়ির আধাপাকা লম্বা ঘরের তিনটি কক্ষে মানুষের তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সবার চোখে মুখে রূপার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রচ ক্ষোভের ছাপ পরিস্ফুটিত হয়ে উঠেছিল। অনেকেই থুথু ফেলে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় রূপার লাশ এসে পৌঁছায় তার গ্রামের বাড়ি তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের আসানবাড়ি গ্রামে। সেখানে লাশ পৌঁছার পর আসানবাড়ি ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার লাশ আসানবাড়ি কবরস্থানে দাফন করা হয়। বড়বোন জিয়াসমিন খাতুন বলেন, গত ঈদ স্বামীর বাড়িতে করেছি। এই ঈদে কথা ছিল সবাই এক সঙ্গে বাবার বাড়িতে করব। আদরের রূপা বোন আমার সেই কথা রাখেনি। ঈদের ঠিক দু’দিন আগে বাড়ি এসেছে ঠিকই। তবে প্রাণহীন দেহ নিয়ে। এখন আমার মা আর ছোট ভাই-বোনকে দেখার মতো কেউ রইল না। এভাবে বলতে বলতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিল সে। পাঁচ বছর বয়সী রূপার ভাতিজি হুমায়রা খাতুন হিমু বলে, ফুফি এবারের ঈদে আমার জন্য নতুন জামা কিনে রেখেছিল। বলেছিল ঈদে বাড়ি আসার সময় নিয়ে আসবে। সঙ্গে খেলনা আর অনেক চকোলেট আনার কথাও বলেছিল। সবাই কেঁদে বলছে আমার ফুফিকে হত্যা করা হয়েছে। তাহলে আমাকে কে ঈদে নতুন জামা আর চকোলেট কিনে দেবে? এ সময় ছোট্ট শিশুটিও দাবি জানায়, তার ফুফিকে যারা মেরেছে তাদের যেন ফাঁসি দেয়া হয়। গ্রামের সাধারণ পরিবারের সংগ্রামী ও প্রতিভাবান মেয়ে জাকিয়া সুলতানা রূপার হত্যার ঘটনায় তার পরিবার এখন নিঃস্ব। রূপা নিজে উপার্জন করে নিজের পড়ালেখা এবং পরিবারের আর্থিক সাহায্য চালিয়ে যাচ্ছিল। তার স্বপ্ন ছিল সে একজন শিক্ষক হবে। গড়বে মানুষ গড়বে দেশ। সে জন্য শুক্রবার বগুড়ায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চাকরির মমতায় রাতেই রওনা হয়েছিল তার কর্মস্থল শেরপুরের উদ্দেশে। ভেবেছিল রাতে ময়মনসিংহে রাত কাটিয়ে পরের দিন শেরপুর কর্মস্থলে পৌঁছবে। কিন্তু বগুড়া থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া নিরাপদ পরিবহনের ছোয়া বাসের চালক, সুপারভাইজার, হেলপার নামের মানুষরা পৈচাশিক নির্যাতন করে রূপার শিক্ষক হয়ে মানুষ গড়ার স্বপ্নের চিরতরে অবসান ঘটিয়েছে। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি পরিবার একটি স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর এর আগে টাঙ্গাইলের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা প্রশাসক খান মোঃ নুরুল আমিন লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন। লাশ উত্তোলনের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের সদস্যরা লাশ গ্রহণ করে এ্যাম্বুলেন্সযোগে সিরাজগঞ্জের তারাশে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়।
×