ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিরাজগঞ্জে হাটে পশুর আমদানি বেশি॥বিক্রি কম

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সিরাজগঞ্জে হাটে পশুর আমদানি বেশি॥বিক্রি কম

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ ॥ কোরবানির পশুর হাটগুলোতে এ বছর প্রচুর গরু আমদানি হয়েছে। ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর কিছুটা চাহিদা থাকলেও বড় ষাঁড় গরুর ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। ক্রেতার অভাবে গরু মালিকরা হতাশ হয়ে পড়েছে। কালিয়াকান্দাপাড়া, শমেশপুর, এনায়েতপুর, রতনকান্দি, বোয়ালিয়া, তালগাছিসহ বিভিন্ন গরুর হাট ঘুরে দেখা যায় এ অবস্থা। গরুর মালিকরা জানান, এ হাটে বড় গরুর আমদানি প্রচুর হলেও ক্রেতা না থাকায় বিক্রি হচ্ছে না। তারা আরও জানান, সিন্ধি, ফ্রিজিয়ান, শংকরজাত, নেপালী, শাহিওয়াল ও দেশীয় জাতের ষাঁড় গরুতে হাটে তিল ধারণের জায়গা নেই। অথচ হাট প্রায় ক্রেতা শূন্য। বিক্রেতারা তাদের আদরে পালিত গরু-ছাগলকে রং বে-রঙের কাপড় ও জরির মালা পরিয়ে সাজিয়ে হাটে তুলেছে। বৃষ্টির কারণে হাটে চলাফেরা কঠিন হলেও গরুর মালিকরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের গরু নিয়ে বিক্রির আশায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকেও বেঁচা-বিক্রি না হওয়ায় হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। ছোট ও মাঝারি গরুর দাম ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৬৫ হাজার টাকা মধ্যে হওয়ায় এসব গরু কিছু বিক্রি হয়েছে। তবে চাহিদা না থাকায় এসব গরু অনেকটা পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। ৭০ হাজার টাকা থেকে ৯৫ হাজার টাকা দামের গরুর বিক্রি ছিল খুব নগণ্য। আর এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা বা তার উর্ধের দামের গরু তেমন একটা বিক্রি হয়নি। গরু ব্যবসায়ী নুরুন্নবী মোল্লা, ইদ্রিস আলী ও আব্দুস ছাত্তার জানান, বিশেষ করে ঢাকার বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মফস্বল এলাকায় গরুর দাম কমবেশি হয়ে থাকে। ঢাকায় বিক্রি কম থাকায় এখানের ব্যাপারিরা বেশি দামের গরু কিনতে সাহস পাচ্ছে না। ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে হতাশ খামারিরা নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, শেষ সময়ে জমে উঠেছে ঠাকুরগাঁওয়ের পশুর হাট। জেলার অর্ধশত কোরবানির পশুর হাট জমে উঠলেও দাম কম হওয়ায় খামারিরা হতাশ। ঈদ-উল আযহায় ভাল দামে গরু বেঁচে লাভের মুখ দেখার আশা করেছিলেন অনেক খামারি। প্রতি বছরের মতো এবারও হাজার-হাজার গরু মোটাতাজা করেছিলেন অসংখ্য খামারি। কিন্তু এ বছর ঈদের আগের মুহূর্তে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় আশাভঙ্গের শঙ্কায় ভুগছেন খামারি ও কৃষকরা। বন্যায় বাড়ি ও খামার তলিয়ে যাওয়ায় এদের অনেকে পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তার পাশে। খাদ্যের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় গরুর ভাল দাম পাওয়া নিয়ে আগেই সংশয় দেখা দেয় তাদের ভেতর। অনেক এলাকায় কম দামে পশু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তাই শেষ সময়ে কোরবানির হাটে ভাল দাম এবং বিকল্প উপায় না পেয়ে হতাশায় পড়েছেন খামারিরা। হাটে আশানুরূপ দর না মেলায় গরু বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন অনেক খামারি। গতবারের ৭০ হাজার টাকার গরু ৫০ হাজার টাকা, ৬০ হাজার টাকার গরু ৪০ হাজার টাকা ও ৪৫ হাজার টাকা দরের গরু ৩০ হাজার টাকা দর উঠেছে। এত কম দামে বিক্রি করায় ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। হাটে আসা ক্রেতা আব্দুল হাকিম জানান, গতবারের তুলনায় এবার গরুর দামও অনেকাংশে কম। বন্যা হওয়ার কারণে আর ভারত থেকে গরু আসার কারণেই হয়তো গরুর দাম এত কম। বাজারে গরু অনেক কিন্তু ক্রেতা কম। গরু বিক্রয় করতে আসা সাদেকুল ইসলাম জানান, একটু লাভের আশায় বাসায় দুটো গরু লালন পালন করেছিলাম। গরু দুটোকে মোটাতাজা করতে যা খরচ হয়েছে এখন বিক্রিয় করতে এসে দেখি বাজারে গরুর দাম নাই। ভারত থেকে গরু আসায় হয়ত ক্রেতা গরুর দাম বলতেছে না। চাঁপাইয়ে যেখানে সেখানে হাট স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে জানান, প্রতিদিন বাড়ছে হাটের সংখ্যা। যত্রতত্র কোন ধরনের অনুমোদন না নিয়েই বসছে এসব পশুর হাট। যার সংখ্যা ইতোমধ্যেই ১৫০ ছড়িয়ে গেছে। এক ধরনের হতাশা থেকেই এসব হাট বসছে ব্যক্তি উদ্যোগে। আর এসব হাটে অধিক হারে নামছে দেশী পোষা গরু। মাঝে মধ্যে স্থানীয় খামারিদেরও গরু দেখা যাচ্ছে এসব হাটে। কিন্তু এসব হাটে একেবারে ক্রেতাশূন্য। কেনাবেচা একেবারেই নেই বললেই চলে। ঘরে পোষা গরুর সঙ্গে সঙ্গে নামছে ছাগল ও ভেড়া। অবস্থার কারণে গত এক মাসে ৭ বার গরু নামিয়েও বিক্রি করতে পারেনি তাইফুর রহমান। ভোলাহাটের প্রত্যন্ত গ্রামে তার বেড়ে ওঠা। ছোট ছোট কয়েকটি আমবাগান রয়েছে। সেই বাগান বিক্রির টাকা দিয়ে বছর দেড়েক আগে ফেরি করতে আসা তিনটি বাছুর কিনেছিল তাইফুর। দাম নিয়েছিল ৭৫ হাজার টাকা। দেড় বছরে সেই গরু মোটাতাজা হয়ে দাম ৬০ হাজারের কাছাকাছি হলেও হাটে নামিয়ে বিক্রি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তার মনের খায়েশ ৪০ হাজার হলেও ছেড়ে দেবে। কিন্তু ক্রেতা নেই।
×