বেসরকারী চ্যানেল দীপ্ত টিভির অটোমান সাম্রাজ্যের সৌর্যবীর্যের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গল্প সুলতান সুলেমান। ষোড়শ শতকের মহান বাদশা সুলতান সুলেমানের জীবনের ওপর নির্মিত গল্পের রেশ না কাটতেই টিভি স্ক্রিনে ভেসে আসে পরবর্তী মেগাসিরিয়াল ‘অপরাজিতা’। লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত নাটক ‘অপরাজিতা’ । যা হার না মানা এক নারীর গল্প।
এ গল্পের অন্যতম চরিত্র সুনন্দ।যে পরিবারের চার বোনেদের মধ্য একমাত্র আদরের ভাই । সুনন্দ ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা একজন উচ্চাকাক্সক্ষী তরুণ। যার রয়েছে বড় হওয়ার অদম্য ইচ্ছা। যে কারণে তার ব্যক্তিগত চিন্তা কেবল নিজেকে ঘিরে। এমন স্বার্থপরতা ও নানা টানা পোড়নের দ্বন্দ্বে এগিয়ে যায় পারিবারিক এ গল্প। দীর্ঘ এক বছরের অধিক সময় ধরে চলা এই নাটকের গল্প ইতোমধ্যে দর্শকদের মন কাড়তে সক্ষম হয়েছে। নাটকে একজন সুঅভিনেতা হিসেবে যিনি নজর কেড়েছেন তিনি গল্পের সুনন্দ, আতিক রহমান। প্রজন্মের বলিষ্ঠ অভিনেতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করা একজন যোগ্য অভিনয় শিল্পী। অভিনয়ই যার ধ্যান ও জ্ঞান। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি অসংখ্য মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। জিতেছেন অনেক বোদ্ধা দর্শকের হৃদয়। কেবল দেশের মঞ্চে নয় বিদেশের মাটিতেও আতিক ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আতিকের পর্দাপন ২০১৪ সালে। সেবছর কমনওয়েলথ গেমসের কালচারাল পর্যায়ের অংশ হিসেবে অভিনয় করছেন স্কটল্যান্ডের জাতীয় নাট্যমঞ্চে। ‘দক্ষিণা সুন্দরী’ নামের সে নাটক ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল। পেয়েছেন প্রবাসী বাঙালীদের সংবর্ধনা। স্বনামধন্য সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সে নাটক দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। তার আমন্ত্রণে ‘দক্ষিণা সুন্দরী’র পুরো টিম হাজির হয়েছিলেন বিখ্যাত এ সাংবাদিকের চা আমন্ত্রণে। মঞ্চনাটক আতিকের সত্তাজুড়ে। তার ধারাবাহিকতায় আবারও বিদেশে মঞ্চনাটক নিয়ে যাচ্ছেন স্বনামধন্য এ অভিনেতা। আগামী ১১-১২ নবেম্বর আবারও লন্ডন পাড়ি জমাচ্ছেন আতিক ও তার দল। এবার তাদের নাটক মঞ্চস্থ হবে কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে।
মঞ্চে আতিক রহমানের প্রথম অভিনয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর। শেক্সপিয়ারের ‘ওথেলো’ নাটকের একটি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম মঞ্চে ওঠেন আতিক। সে সুবাদে সুনন্দ চরিত্র নতুন কোন ঘটনা নয়। এ নিয়ে প্রশ্ন করতেই হাস্যোজ্জ্বল জবাব মিলল। ‘নেতিবাচক চরিত্র করতে এক ধরনের ভাললাগা আছে। ব্যক্তিগত জীবনে যা করতে পারি না তা করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।’ যদিও আতিকের প্রথম অভিনীত নাটকের চরিত্রটি ছিল নেতিবাচক। তবুও সে নাটকে তার অভিনয় দক্ষতা ছিল ব্যাপক প্রশংসনীয়। বর্তমানে মঞ্চ ও টিভি পর্দা দুই মাধ্যমেই সমানতালে অভিনয় করছেন আতিক রহমান।
টিভি পর্দায় তার অভিষেক হয় ২০০৮ সালে। নজরুলের ‘জ্বীনের বাদশা’ নামক একটি নাটকে। এরপর ২০১১ সালে গোলাম সোহরাব দোদুলের পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক ‘সাতকাহন’ ছিল তার অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এ নাটকের অসংখ্য পর্বে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শক হৃদয়ে আসন গেড়েছিলেন আতিক। ‘অপরাজিতা’ নিঃসন্দেহে আতিকের জীবনের অন্যতম কাজ। এ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমেই সে একজন মেধাবী অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এ নাটকের জন্য যথেষ্ট হোম ওয়ার্কও করতে হয় তাকে। অনেক মনোযোগ দিয়ে কাজ করেছেন। যেন নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন এ ছিল বাসনা। যে কারণে যথেষ্ট পরিশ্রমও করতে হয়েছে। এ নিয়ে কিছুটা প্রতিকূলতারও মুখোমুখি হতে হয় তাকে। কারণ, মঞ্চ ও পর্দা দুটো দুই মাধ্যম। মঞ্চে অভিনয়, অভিব্যক্তি প্রকাশে পুরো শরীর, কণ্ঠ সব ব্যবহার করা যায়। কিন্তু টিভি পর্দায় ক্লোজ শর্ট কিংবা মিডিয়াম শর্টে যা অত্যন্ত কষ্টকর একটা ব্যাপার। এ নিয়ে প্রথমদিকে ব্যাপক সমস্যা হয়েছিল। এতটুকু একটা ফ্রেমে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করা অতটা সহজ নয়। যেমনটা তার কাছে খুব সহজ ছিল মঞ্চে। এখন অবশ্য সে সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে উঠেছেন। ব্যক্তি জীবনে আতিক তার অভিনীত চরিত্র সুনন্দের একদম বিপরীত। অত্যন্ত বন্ধুবৎসল একজন নির্মোহ মানুষ। পরিবারকে সবকিছুর উর্ধে ভালবাসেন। মঞ্চে তার প্রিয় পরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ ও ইস্রাফিল শাহিন। দু’জনই তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এ ছাড়া তারিক ইনাম ও মামুনুর রশীদের কাজ তার খুবই ভাল লাগে।