ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প’

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৩১ আগস্ট ২০১৭

অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প’

ঈদ মানেই যেন রঙিন আনন্দের প্রাণখোলা এক উৎসব। আর সেই উৎসবের একটা বড় অংশজুড়ে থাকে নাটক। বিশেষ দিনে বিশেষ আয়োজন। আর এই আয়োজন কতটা দর্শক নন্দিত হয়, তা প্রশ্ন সাপেক্ষই বটে। নাটকের মান থেকে শুরু করে গল্প কিংবা নির্মাণশৈলী প্রতিটি ক্ষেত্রেই আছে দৈন্য। সঙ্গে অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন বিরতির যন্ত্রণা তো আছেই। এ প্রসঙ্গে সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন বলেন, সময়টা বড় অস্থির। সবাই যেন সবার মুখোমুখি। কেউ কারও কথা শুনতে নারাজ। আমার ভাবনা আপনার ভাবনা থেকে আলাদা হতেই পারে। কিন্তু এই আলাদা ভাবনা নিয়ে আমি আর আপনি কেন একজন আরেক জনের সঙ্গে সভ্য মানুষের মতো বসতে পারব না? আমরা কেন এক সঙ্গে বসে এক কাপ চা খেতে পারব না। এইবার ঈদে আয়নাবাজি টিম, সাতজন তরুণ নতুন ডিরেক্টরদের নিয়ে অমিতাভ রেজা চৌধুরী আর মেজবাউর রহমান সুমনের তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসছে, ‘অস্থির সময়ে স্বস্থির গল্প।’ আমরা একসঙ্গে এই অস্থির সময়ে স্বস্থির গল্প, একটু শান্তির গল্প বলতে চাই। এই গল্পগুলো বলা প্রয়োজন বলে মনে করি। সময়ের গল্প সময়েই বলতে হয়। সময়ে অস্থিরতায় কিছু নতুন ভাবনা নিয়ে ঈদের সাতদিন। এই অস্থির সময়ে গল্পের যুদ্ধ চলবে, আমরা বিনোদন দিতে আসছি আসছি একটু স্বস্তি দিতেও, ঈদের সাতদিন রাত নয়টা তিরিশ মিনিটে প্রতিদিন একেই সময় ‘জিটিভি ও বায়োস্কোপে, একযোগে’ সাতজন তরুণ নির্মাতার ফিকশন নিয়ে। গত ঈদে নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে দর্শক দেখেছিলেন ‘আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজ।’ সেই সাফল্যর ধারাবাহিতায় গুণী এই নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনকে নিয়ে এবার নিয়েছেন নতুন উদ্যোগ। এই দুজনের তত্ত্বাবধানে ‘অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প’ শিরোনামে নাটক বানিয়েছেন সাতজন তরুণ নির্মাতা। বড় চমক হচ্ছে, এই সাতজন নির্মাতার মধ্যে আছেন কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নুহাশ হুমায়ূন। ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলেও আমরা ভাল থাকতে পারি’ এ রকমই বয়ান নিয়ে নুহাশ হুমায়ূন থাকবে তার সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার নিয়ে হোটেল ‘আলবাট্রোস।’ নাটকটির শূটিং ইতোমধ্যে মধ্যে শেষ করেছেন নুহাশ। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর, শান রহমান, এ্যালেন শুভ্র, আনন্দ খালেদ। গত শনিবার রাজধানীর একটি বড় রেস্তরাঁয় শেষ হলো নাটকটির শূটিং। নিজের নাটক নিয়ে নুহাশ বললেন, ‘নির্মাণের সবচেয়ে মজার চ্যালেঞ্জ হলো, খুব কম সময়ে অনেক বড় একটা গল্প বলতে হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে দারুণ একটা টিম পেয়েছিলাম। আসাদুজ্জামান নূর থেকে শুরু করে এ্যালেন শুভ্র, আনন্দ খালেদ সবাই দারুণ সহযোগিতা করেছেন।’ নিজের প্রথম টেলিভিশন নাটক প্রসঙ্গে নুহাশ আনন্দ কণ্ঠকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার নির্মাণের প্রতি আগ্রহ ছিল। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানিয়েছি। কিন্তু টেলিভিশনের জন্য এটা আমার প্রথম কাজ।’ আশা করি আমার প্রথম কাজ দর্শক খুব ভালভাবেই গ্রহণ করবেন। গল্পটি তাদের ভাল লাগবে। নুহাশ ছাড়াও ‘অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প’ সিরিজে নির্মাণ করেছেন টকিজ এ সময়ের অনলাইন শর্ট ফিল্মের একটি গুরত্বপূর্ণ প্রজেক্ট। সেই প্রজেক্টের একজন মেধাবী নির্মাতা শাওকী। কবি আহসান হাবীব এর ‘দোতলায় ল্যাডিং’ কবিতার অনুপ্রেরণায় সৈয়দ আহমেদ শাওকী নির্মাণ করছেন ‘কথা হবে তো’? অভিনয় করছেন মনোজ কুমার ও নাবিলা। ক্ষণপরিত্রাণের শহরে পরিত্রাণের গল্পগুলো শ্যাওলা হয়ে জমে আছে বহুদিন ধরে। স্পর্শে সবুজের ধারণা ছাড়াও নিরুপায়ী ক্রন্দনের ভেজা চোখ টের পাওয়া যায় সেসব গল্পে। কিছুটা সজল; বাকিটা স্যাঁতসেঁতে। তাই অকপটে বলতে অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প জাহিন ফারুক আমিন নির্মাণ করছেন ‘শ্যাওলা।’ কিছু মানুষ এই শহরে ঠাঁই খুঁজে পাবার আশায় থাকে বুকে পাথর নিয়ে, সেই সব মানুষের গল্প নিয়ে তানভীর আহসান নির্মাণ করছেন ‘বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভাল।’ অভিনয় করছেন তিশা ও জুনায়েদ হোসেন। সুকর্ণ শাহেদ নির্মাণ করছেন ‘মাহুত’ অভিনয় করছেন নাসির উদ্দিন খান, বাবলু বোস ও লুসি তৃপ্তি গোমেজ। তারিক আনাম খান ও পান্থ শাহরিয়ারকে নিয়ে আবিদ মল্লিক নির্মাণ করেছেন ‘প্রতিশোধ’ এবং অনম বিশ্বাস নির্মাণ করেছেন ‘তাহলে সেই কথাই রইল।’ এতে অভিনয় করবেন ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, শরাফ আহমেদ জীবন ও শাহেদ আলী। ‘প্রতিশোধ’ নাটকের গল্প প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবিদ মল্লিক আনন্দকণ্ঠকে বলেন, জজ এবং বাদী কে নিয়ে নাটকের মূল গল্প। জজ রিটায়ার্ডে যায় রিটায়ার্ডে যাওয়ার পর কিছু মজার ঘটনা ঘটে সেই ঘটনাকেই ঘিরে নাটকের মূল গল্প। কিছুটা থ্রিলার ধাঁচের গল্প। ‘অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প’ দর্শক মহলে কতটা স্বস্তি দেবে বলে আপনি মনে করেন? কিছু সত্য থাকে যা আমরা কখানও প্রশ্ন করি না বা, করার সুযোগ পাই না, জানার চেষ্টা করি না। আইন সংক্রান্ত বিষয়ে যা আমরা কখানও উওর পাই না। কিন্তু নাটকে প্রশ্ন উওরের একটি দারুণ ব্যাপার আছে। সেই দিক থেকে যদি বলি দর্শক সুন্দর একটি গল্প পেতে যাচ্ছে। আশা করি সবার নাটকটি ভাল লাগবে। সাতজন নির্মাতা প্রসঙ্গে অমিতাভ রেজা বলেন, ওরা বয়সে তরুণ, ওরা চিন্তায় তরুণ, ওদের ভাবনায় তরুণ এবং নির্মাণেও তরুণ। সুতরাং সবগুলো ছাপ কাজগুলোর মধ্য থাকবে। ‘ওরা সবাই প্রতিশ্রুতিশীল নির্মাতা। প্রত্যেকেই আমার ও মেজবাউর রহমান সুমনের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করেন।’ অমিতাভ রেজা আনন্দ কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা একটা অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মধ্যে সহনশীলতা কমে গেছে। এসবের বিপরীতে আমরা এমন গল্প নিয়ে কথা বলতে চাই যে গল্পগুলো আমাদের স্বস্তি দেবে। গল্পগুলোর মাধ্যমে মানুষের চিন্তার বিকাশ ঘটবে। মানুষকে চিন্তা-ভাবনার খোরাকের পাশাপাশি বিনোদন দিতে চাই। সাতজন প্রতিভাবান নির্মাতা সেই চেষ্টাই করেছেন।’ ভাল-মন্দের দোলাচলে ছোটপর্দায় যে দর্শকরা চলছে তার খানিকটা লাগব হবে এই ঈদে- এমন প্রত্যাশা অমিতাভ রেজা চৌধুরীর। তবে এই ‘অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প’ কতটা স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে পারে তাদের নির্মাণশৈলী দিয়ে কতটুকু ছোটপর্দায় দর্শকরা কাটাতে পারে তা এখন দেখার অপেক্ষায়।
×