ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

এখনও চিত্র নায়িকা পপি

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৩১ আগস্ট ২০১৭

এখনও চিত্র নায়িকা পপি

বাংলার অসংখ্য ভক্তকুলকে বিষাদের সাগরে ভাসিয়ে নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়ে পৃথিবী ছাড়েন বাংলা সিনেমার বরপুত্র সালমান শাহ। ভক্তদের আহাজারি, পাশাপাশি নির্মাতাদের হতাশা ঢাকাই সিনেমায় যখন কালো ছায়া নেমে আসে তখন একাধিক নতুন জুটি দর্শকদের পুরনো ব্যথায় আরামের মালিশ দেয়। বিনোদনের এই মালিশের মধ্যে সাদিকা পারভিন পপি ছিলেন বেশ কার্যকরী। ১৯৯৭ সাল। মমতাজুর রহমান আকবরের ‘কুলি’ সিনেমার মাধ্যমে অভিষেক ঘটে পপির। বিপরীতে নায়ক ছিলেন ওমর সানী। একই বছর সোহানুর রহমান সোহানের পরিচালনায় মুক্তি পায় হিন্দী সিনেমা ‘দিল’-এর বাংলা রিমেক ‘আমার ঘর আমার বেহেশত।’ এই সিনেমায় তার সঙ্গে পর্দায় অভিষেক হয় নায়ক শাকিল খানের। পর্দার ভেতরে ও বাইরে পপির ক্যারিয়ারে শাকিল খানের নামটা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে উচ্চারিত হয়েছে। নব্বইয়ের শেষ থেকে দুই হাজার সাল পর্যন্ত এই জুটি সম্পর্কে বিভিন্ন মুখরোচক গুঞ্জন চিত্রপুরীতে চালু ছিল। তাদের প্রেম-বিয়ে-ঝগড়া ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে কোন কিছুর সত্যতা না থাকাতে সবই একসময় গসিব বলেই বিবেচিত হয়। পপির প্রথম এবং দ্বিতীয় সিনেমায় রাজকীয় সূচনার কারণে সেই সময় ঢাকাই সিনেমার দর্শকদের বেশ মুগ্ধ করে। বিশেষ করে মিল্টন খন্দকারের লেখা, আলম খানের সুর-সঙ্গীতে রিজিয়া পারভীন ও এ্যান্ড্রু কিশোরের গাওয়া ‘আকাশে ে যে লক্ষ তারা, চাঁদ কিন্তু একটারে’ পাশাপাশি আমার ঘর আমার বেহেশতের গানগুলো পপিকে আলাদা পরিচয়ের সঙ্গে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে, কোন প্রকার গুজবে কান না দিয়ে পপি তার অভিনয় ক্যারিয়ারকে অনেক লম্বা করেন। অভিনয় যোগ্যতায় গড়েন নিজের শক্ত অবস্থান। তিন বারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই অভিনেত্রী ইতোমধ্যে ২শ’র বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ‘বিদ্রোহ চারিদিকে’, ‘দুজন দুজনার’, ‘ক্ষ্যাপা বাসু’, ‘কারাগার’, ‘বস্তির রাণী সুরিয়া’, ‘বিদ্রোহী পদ্মা’, ‘রাণী কুঠির বাকি ইতিহাস’, ‘মেঘের কোলে রোদ’, ‘গঙ্গাযাত্রা’, ‘গার্মেন্টস কন্যা’সহ আরও বহু দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে। পপি তার অভিনয় জীবনে ইতোমধ্যে পার করেছেন ২০ বছর! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার অভিনয় হয়েছে পরিণত। তবে আগের মতো বছরে একাধিক সিনেমা হলে মুক্তি না পেলেও দর্শকদের কাছে তিনি ফুরাননি। দর্শক এখনও তকে মনে রাখে। তিনিও দর্শকদের জন্য অভিনয়ে সক্রিয়। এসব কারণে পপি আজও সমসাময়িক। প্রেম বা ব্যক্তিগত জীবন বাঙালী নারী হিসেবে পপির বিয়ের বয়স অনেক আগেই পূর্ণ হয়েছে! এখন হয়ত, সে বয়সটা পেরিয়ে যাওয়ার পথে! কবে করবেন, আদৌ কি তিনি বিয়ে করবেন? ব্যক্তিগত এমন প্রশ্নের জবাবে পপি এক সাক্ষাতকারে বলেন, বিয়ে আসলে এমন মানুষকে করবে বা করতে চাই যে, নায়িকা পপিকে নয় একজন অভিনয় শিল্পীকে তার অভিনয় গুণে মুুগ্ধ হয়ে আমাকে পছন্দ করবে এবং নিঃশর্ত ভালবাসবে। নিশ্চয়ই আমার পরিচয় কিংবা অর্থ সম্পদ নয়! এমন মানুষের অপেক্ষায়। একদা নায়ক শাকিল খানের সঙ্গে তার প্রেম পরবর্তীতে দু’জনার বিয়ের খবর মিডিয়া ভুবনে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করলেও পরবর্তীতে ওই আলোচনা কিন্তু সত্যতার ধোপে টেকেনি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গসিবের জন্ম হলেও যা তার বাস্তব জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সঙ্গত এসব কারণে পপি এখন সিঙ্গেল জীবনযাপন করছে। তবে তার এই কুমারিত্ব জীবনের কবে ইতি ঘটবে তা নিশ্চিত করে আপাতত বলা যাচ্ছে না। পপির বর্তমান সম্ভাবত একেবারে ভিন্ন স্বাদে দর্শকদের চমকে দিতে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরে সঙ্গে মিউজিক ভিডিওর মডেল হয়েছেন। ‘সাদা আর কালো’ শিরোনামে সম্প্রতি একটি মিউজিক ভিডিওর জুটি হয়েছেন, দুই ভুবনের এই দুই বাসিন্দা। তাদের করা মিউজিক ভিডিও এরই মধ্যে পেয়েছে বেশ দর্শকপ্রিয়তা। ইউটিউবে মুক্তির কিছু দিনের মধ্যে এই গানের ভিউয়ার সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ ছাড়ায়। গানটিতে গায়ক আসিফ ষাটের দশকের পপস্টার আর পপি নিজস্ব গ্ল্যামারে সেজেছেন চমকে যাওয়ার সাজে। গানটি লিখেছেন গীতিকবি আসিফ ইকবাল। সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন অটামনাল মুন। ঈদের সিনেমা আসছে ঈদে মুক্তি পেতে পাচ্ছে পপি অভিনীত ‘সোনাবন্ধু’ সিনেমা। বাউল গান। নর-নারীর প্রেম-বিরহ এবং গ্রামীণ জীবন চিত্র এ সবের পটভুমিতে নির্মিত সোনাবন্ধু সিনেমা। একটা সময় ছিল আমাদের দেশে ধারার সিনেমা বেশ মুক্তি পেত। দর্শকও খুবই আগ্রহ করে এই সিনেমা পরিবার পরিজন নিয়ে হলে গিয়ে দেখত এবং খুব বিনোদিত হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সিনেমার গল্প এবং ধারা বদলের কারণে এই ধরনের সিনেমা এখন আর দেখা যায় না। হয়ত এসব বিবেচনায় নির্মিত হয়েছে সোনাবন্ধ্।ু যদিও সিনেমার আর এক নায়িকা পরীমনি বলেছেন,আমি ভাবিনি এই সিনেমা ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পাবে। কারণ সময়ের বিবেচনায় ঈদ সিনেমার ক্রেজ এখন একটু ভিন্ন। তার পরও বাউল গান গ্রামীণ পটভূমির গল্প দর্শকদের ভীষণভাবে আনন্দ দেবে। সম্প্রতি পপি এক সাক্ষাতকারে বলেন, সোনাবন্ধু সিনেমায় তার করা চরিত্রটা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। দর্শক খুব পছন্দ করবে। দুই প্রজন্মের দুই হার্টথ্রব এই সিনেমার বিশেষ আকর্ষণ। পাশাপাশি নায়ক হয়ে থাকছেন ডি এ তায়েবের মতো গুণী অভিনেতা। ছবিটি পরিচালনা করেছেন জাহাঙ্গীর সুমন। বাউল গানের সাধনা। গানের মাধ্যমে মনমাঝির দিশা খোঁজা এবং নারী-পুরুষের প্রেমÑ এ সবই সোনাবন্ধুর গল্পের আখ্যান, সঙ্গে পপি এবং পরীমনির নিজস্ব গ্ল্যামার। বাকিটা রুপালি পর্দায়। পপি আমাদের চলচ্চিত্রাকাশে অভিনয়ের উজ্জ্বল তারকা। তাকে সব সময় জ্বলতে দেখা দিয়েছে নিজস্ব আলোর তেজে। ভক্তরা তার এই আলো এবং তেজে হয়ত আরও কিছু কাল পুড়বে।
×